ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কারপাল টানেল সিনড্রোম
ডা. এম ইয়াসিন আলী
প্রতীকী ছবি

হাতের কবজি থেকে হাতের তালু ও আঙ্গুলগুলো অবশ হয়ে আসা, ঝিনঝিন করা, আবার কখনো ব্যথা হওয়া বা ফুলে যাওয়া এই সমস্যাগুলো সাধারণত যে রোগের কারণে দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হলো কারপাল টানেল সিনড্রোম। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে গর্ভকালীন ও মেনোপজ পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

কেন হয় : যে হাড়গুলো একত্রিত হয়ে আমাদের কবজি গঠন করে সেই হাড়গুলোকে মেডিকেলের পরিভাষায় কারপাল বোনস বলা হয়, কবজিতে সেই হাড়গুলোর মধ্যে একটি ছোট্ট টানেল বা গহ্বর আছে, যার নাম কারপাল টানেল। এই টানেলের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন শিরা ও স্নায়ু হাতে প্রবেশ করে। এর অন্যতম হলো মিডিয়ান নার্ভ। কোনো কারণে এই টানেলের মধ্যকার নার্ভটি চাপ খেলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তা ছাড়া ফুলে যাওয়া, পানি জমা ইত্যাদি কারণেও এমন হতে পারে। স্থূলতা, থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্যাইটিস ও এস এল ই (সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথেমাস) ইত্যাদি রোগ এর ঝুঁকি বাড়ায়। কখনো একই ধরনের হাতের কাজ বারবার করার কারণে টানেলের ওপর চাপ পড়ে। যেমন- লেখালেখি করা, সেলাই করা, টেনিস খেলা, গলফ খেলা বা বেহালা বাজানো ইত্যাদি।

লক্ষণ : আঙ্গুল ঝিনঝিন বা অবশভাব, জ্বলে যাওয়া, খাবার খেতে, হাত মুষ্টিবদ্ধ করতে বা কোনো জিনিস ধরতে সমস্যা। লক্ষণগুলো রাতে বেশি দেখা যায় এবং সবচেয়ে বেশি হয় হাতের বুড়ো আঙ্গুল, তর্জনী এবং মধ্যমাতে। ঝিনঝিন অনুভূতি ও ব্যথার কারণে রাতে ঘুম ভেঙে যায়, যা হাতে ঝাঁকুনি দিলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এসব লক্ষণ ওপরের দিকে ছড়িয়ে বাহুতে চলে যেতে পারে। চিকিৎসা না করালে আঙ্গুলের মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে পারে।

রোগ নির্ণয় : রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসক ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশনের পাশাপাশি আক্রান্ত হাতের এন সি ভি ( নার্ভ কনডাকশন ভেলোসিটি) টেস্টের মাধ্যমে রোগটি সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়।

চিকিৎসা : কারপাল টানেল সিনড্রোমের চিকিৎসায়- স্নায়ুর ব্যথা কমানোর ওষুধ ও পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এবং হাতের বিশ্রামের জন্য স্পিন্ট ব্যবহার করতে হয়। এই রোগে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই উপকারী। ওষুধ ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় না হলে কখনো কখনো সার্জারিও প্রয়োজন হতে পারে।

উপদেশ : যারা টেবিলে বসে দীর্ঘক্ষণ কাজ করেন, লেখেন বা কম্পিউটারে টাইপ করেন, তারা প্রতি ৩০ মিনিট পরপর সামান্য বিরতি নিতে পারেন। হাতের বাহু যেন কাজের সময় বিশ্রামে থাকে। টেবিল ও হাতের ব্যবধান ঠিক করে নিন যাতে হাত টেবিলের সমান্তরালে থাকে। মাঝে মাঝে টাইপ করা বা লেখার বিরতিতে বিশেষঙ্গ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের নির্দেশিত হাতের ব্যায়ামগুলো করুন।

লেখক: চেয়ারম্যান, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হসপিটাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা।

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর