ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

রিপোর্টে যদি ডেঙ্গু চলেই আসে, কী করবেন?
প্রফেসর ডা. এ কে এম মূসা
প্রফেসর ডা. এ কে এম মূসা

ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ ও বর্তমান সময়ে একটা আতঙ্কের নাম। সাধারণত বর্ষাকালে এর প্রকোপ বেড়ে যায়। স্ত্রী এডিস মশার কামড়ে এ রোগ হয়। 

ডেঙ্গুর লক্ষণ কি ? 

জ্বর (১০১-১০৪ ডিগ্রি), শরীর ব্যথা, তীব্র মাথা যন্ত্রণা, চোখ ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, বমি করা, গলা ব্যথা, কাশি ইত্যাদি। শরীরে র‍্যাশ দেখা দেওয়া।

তীব্র ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ :

* প্রচণ্ড পেট ব্যথা * ক্রমাগত বমি * অনিয়ন্ত্রিত পাতলা পায়খানা * রক্তক্ষরণ * দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া * নিস্তেজ হওয়া  * বিরক্তি ও অস্থিরতা 

ডেঙ্গু হলে ভয় কীসের?

সাধারণত: জ্বর ১-৭ দিন থাকতে পারে

সংকটকাল: জ্বর ছেড়ে যাওয়ার ২৮-৪৮ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দেওয়া। 

১. ডেঙ্গু-হেমোরেজ: ২. শরীরের বিভিন্ন স্থান হতে ব্লিডিং হওয়া  ৩. ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম: প্লাজমা লিকেজ, রক্তনালী থেকে জলীয় অংশ বেরিয়ে গিয়ে প্রেসার কমে যায় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা না দিলে মৃত্যুর সম্ভবনা থাকে। 

পরীক্ষা নিরীক্ষা:

জ্বরের একদিন পরেই CBC ও NS1 Ag Antigen Test করাতে হবে। রোগী ৪-৫ দিন পর আসলে CBC ও Anti Dengue Antibody আইজিজি ও আইজিএম Test করাতে হবে। রোগীর  জটিলতা হলে অন্যান্য Test  করার প্রয়োজন হবে।

ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর করণীয়: ১. বাসায় বিশ্রাম নিবেন ২. জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাবেন, গা মোছাবেন। ৩. তরল খাবার যেমন: স্যালাইন, ডাব, স্যুপ, ফলের জুস, দুধ খাবেন-দুই থেকে আড়াই লিটার। অন্যান্য খাবারও খাবেন। ৪. মনিটরিং-দিনে কয়েকবার BP চেক করুন, পালস্ প্রেসার- উপরের ও নিচের প্রেসারের গ্যাপ -২০ মিমি এর কম হলে ঝুঁকি বেড়ে যায় প্রস্রাবের পরিমাণ লক্ষ্য করুন, কম হলে ও ব্লাড প্রেসার কমে গেলে শিরায় স্যালাইন  দিতে হবে। দ্রুত ডাক্তার ও হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।  ৫. প্রতিদিন CBC Test করাতে হবে। 

ডেঙ্গু রোগীকে কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে:

* প্রচণ্ড পেট ব্যথা

* প্রচণ্ড বমি

* বডি স্পেসে পানি জমা যেমন- পেটে পানি জমা,  বুকে পানি জমা।  * ব্লিডিং হলে * হেমাটোক্সিট বেড়ে যাওয়া  * প্লাটিলেট এর পরিমাণ ৫০,০০০ এর নিচে নামলে * প্রস্রাব কমে গেলে 

কখন ICU তে ভর্তি করাতে হবে: ১. Dengue Shock Syndrome ২. প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হলে ৩. লিভার, ব্রেইন, হার্ট, কিডনির জটিলতা দেখা দিলে ৪. প্রচণ্ড ব্লিডিং হলে।

ডেঙ্গু হলে কী করবেন না : 

আতঙ্কিত হবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা নিবেন। 

১. ব্যথা নাশক ঔষধ  NSAIDS খাবেন না।  ২.অত্যধিক ফ্লুইড খাবেন না।  ৩.প্লাটিলেট নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না। প্লাটিলেটের পরিমাণ ১০,০০০ হলেও যদি হেমাটোক্সিট ঠিক থাকে, রক্তক্ষরণ না হয়, তাহলে অপেক্ষা করুন। প্লাটিলেটের পরিমাণ ১/২ দিনের মধ্যে বাড়তে শুরু করবে।  ৪. স্টারয়েড জাতীয় ঔষধ খাবেন না।    অধিক সতর্কতা: গর্ভবতী নারী, শিশু কিশোর, ডায়াবেটিস রোগী ও অন্যান্য ক্রনিক অসুখ থাকলে 

সুরক্ষা : ডেঙ্গুর কোনো ভ্যাকসিন নেই। ডেঙ্গুর প্রতিরোধে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ও নিধনই হচ্ছে মূল কাজ। 

১. ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফুলের টব, ফুলদানি, ছোট ছোট ডাবের খোসা ইত্যাদি ঘরে ও আশেপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখা।  ২. সরকারি পর্যায়ে মশা নিধন অভিযান জোরদার করা। ৩. ঘুমানোর সময় মশারির নিচে ঘুমানো।  ৪. ডেঙ্গু রোগীকে দিনের বেলা মশারির নিচে ঘুমাতে হবে। তাহলে বাসার অন্য সদস্যদের ডেঙ্গু কম হবে। 

চিকিৎসা : জ্বর হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে। ডেঙ্গু হলে যথাযথ পরিচর্যা ও চিকিৎসা দিলে মৃত্যুঝুঁকি কম হবে। 

লেখক :  অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, আলোক হেলথকেয়ার লি. মিরপুর -১০ ঢাকা। হটলাইন: ১০৬৭২



এই পাতার আরো খবর