ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

এমপক্স : প্রয়োজন অধিক সতর্কতা
প্রফেসর ডা. এ কে এম মূসা
প্রফেসর ডা. এ কে এম মূসা

মহামারী করোনার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শনাক্ত হতে শুরু করেছে নতুন আতঙ্ক এমপক্স ভাইরাস। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে এরই মধ্যে কয়েক শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত ১৪ আগস্ট বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তাই পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে এমপক্স ভাইরাসটি সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে রাখা জরুরি।

মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে অর্থোপক্স ভাইরাস। এ প্রজাতির ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে গুটিবসন্ত ও কাউপক্স। এ জন্য মাঙ্কিপক্সের সাথে গুটিবসন্ত বা স্মলপক্সের মিল দেখা যায়। আবার মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের রয়েছে দু’টো ক্লেড বা উপজাতি। একটি হচ্ছে মধ্য আফ্রিকা ক্লেড-এ উপজাতির মাঙ্কিপক্সে মৃত্যুহার ১০% পর্যন্ত হতে পারে। আরেকটি হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকা ক্লেড-এ উপজাতির মাঙ্কিপক্সে মৃত্যুর হার কম।

মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাস জনিত প্রাণীজাত (জুনোটিক) রোগ। ১৯৫৮ অসালে ডেনমার্কের একটি বিজ্ঞানাগারে এক বানরের দেহে সর্বপ্রথম এ রোগ শনাক্ত হয় বলে একে মাঙ্কিপক্স বলা হয়। যেহেতু মানুষের মধ্যেও এ রোগ হয় সেজন্য এমপক্স বলা হয়। এ রোগটির প্রাদুর্ভাব ১৯৭০ সাল থেকে প্রধানত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার ১১টি দেশে দেখা যায়। ২০২২ সালে এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে ২০২৩ সালের জানুয়ারির পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২৭ হাজার মানুষের এমপক্স শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১ হাজার ১০০ জনের বেশি। বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান, কেনিয়া এবং রুয়ান্ডাতেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে এই প্রথম সুইডেনে এমপক্স সংক্রামক রোগ শনাক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষে পাকিস্তানে একজন রোগী সনাক্ত হয়েছে। 

এমপক্স রোগ ছড়ানোর প্রক্রিয়া : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমপক্স ভাইরাসটি একই সঙ্গে সংক্রামক ও ছোঁয়াচে রোগ। এমপক্সের সুপ্তি কাল-৩ থেকে ২১ দিন।

ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে তাহলো : ১। আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে কথা বলার সময় তার শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে। ২। আক্রান্ত রোগীর ত্বকের সংস্পর্শে। ৩। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা জিনিস ব্যবহার করলে। ৪। আক্রান্ত ব্যক্তির খাওয়া খাবার খেলে। ৫। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ালে।

এমপক্সের লক্ষণ : ১। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর শরীরে জ্বর থাকবে। ২। মাথা ব্যথা অনুভব হবে। ৩। পিঠ ও শরীর ব্যথা হবে। ৪। মাংসপেশীতে টান ও হাড়ে ব্যথা অনুভব হবে। ৫। শারীরিকভাবে রোগী দুর্বল অনুভব করবে। ৬) একটি লক্ষণ হলো শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়া।

প্রথমে রোগীর মুখে ফুসকুড়ি দেখা দিলেও পরে তা হাত ও পায়ের তলায় এমন কি শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ফুসকুড়িতে কখনও কখনও চুলকানি, পুজ ও ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। পার্থক্যমূলক রোগ নির্ণয় (D/D) গুটি বসন্ত, জল বসন্ত -লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া- এমপক্সে বেশি পাওয়া যায়।

জটিলতা : ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, সেপসিস, এনসেফালাইটিস। গর্ভবতী নারী এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল, বিশেষ করে এইচআইভি রোগীদের ক্ষেত্রে উচ্চ জটিলতার ঝুঁকি থাকে।

রোগনির্ণয় : রোগীর ক্ষত থেকে রস নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা।

চিকিৎসা : ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে আপনাআপনি ভালো হয়ে যায়।

১। রোগীকে আলাদা কক্ষে রাখতে হবে। ২। পরিমিত খাদ্য ও পানীয় খেতে দিতে হবে।  ৩। সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক দিতে হবে। ৪। এন্টিভাইরাল টেকোভিরিম্যাটের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। 

প্রতিরোধ : ১। এমপক্স ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করুন।  ২। যতটা সম্ভব ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ৩। আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকা। ৪। আক্রান্ত ব্যক্তি এবং সেবা প্রদানকারী উভয়ে মাস্ক ব্যবহার করা।  ৫। সাবান পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া (৩০ সেকেন্ড ধরে) ৬। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্যাদি সাবান/ জীবাণুনাশক/ ডিটারজেন্ট দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা।  ৭। আক্রান্ত জীবিত/মৃত বন্যপ্রাণী অথবা প্রাকৃতিক পোষক (যেমন ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, খরগোশ) থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা।   ৮। টিকাদান-গুটি বসন্তের টিকা এম পক্সের বিপক্ষে সুরক্ষা দেয়।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। বিমানবন্দর, নৌপথ ও অন্যান্য প্রবেশ পয়েন্টগুলোতে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এ রোগের লক্ষণগুলো অনুভব করলে বা সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে ২১ দিনের মধ্যে আক্রান্ত কোনো দেশ ভ্রমণ করলে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জনসাধারণকে সহায়তার জন্য হেল্পলাইন ১৬২৬৩ বা ১০৬৫৫ নম্বরে এ যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তথ্যসূত্র : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওয়েবসাইট ও দৈনিক নিউজ পেপার।

লেখক : অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর -১০।

বিডি-প্রতিদিন/শআ



এই পাতার আরো খবর