ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল, দুই বছরে ব্যাপক পরিবর্তন
অনলাইন ডেস্ক

গত ২৯ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীরে সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতি অংশ নেন।

বৈঠকের পরে ওমর আবদুল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীরে আর কখনো ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনা হবে না। আর মেহবুবা মুফতি বলেছেন, এই ধারা ফিরিয়ে না আনলে ভবিষ্যতে তিনি বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিবেন না।

ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের কাছে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনার দাবি করা বোকামি। এই অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে বিজেপি তাদের ৭০ বছরের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে।  তিনি বলেন, আমাদের সংগ্রাম মাত্রই শুরু হয়েছে। আমরা সংবিধানের ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনব- এমন বলে এখানকার জনগণকে বোকা বানাতে চাই না। এই সরকারের কাছে ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা করা চরম বোকামি।

অন্যদিকে মেহবুবা বলেন, ‘আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না। নির্বাচন করলে জনগণ মনে করবে আমি ৩৭০ ধারা নিয়ে শুধু রাজনীতি করেছি। কিন্তু বিষয়টি তা নয় বুঝাতে আমি ৩৭০ ধারা সংবিধানে যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেব না।

তিনি দাবি করেন, অনুচ্ছেদ ৩৫এ এবং ৩৭০- এর বদৌলতে জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দারা চাকরির সুরক্ষা পেত। পাশাপাশি এই রাজ্যের একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। সুতরাং এটি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ৫ আগস্ট নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে। পাশাপাশি এটিকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে। কাশ্মীরের নেতারা দাবি করেন, এর মাধ্যমে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের লোকদের কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়েছে। 

তবে, মনে হচ্ছে এই নেতারা ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের কথা ভুলে গেছেন। কারণ কার্যত সেদিন তারা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেননি। কোথাও একটিও প্রতিবাদ দেখা যায়নি। বরং তারা তাদের দৈনন্দিন কার্যাবলী নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

উন্নয়নের পথে জম্মু ও কাশ্মীর

বিশেষ মর্যাদা বাতিলের দুই বছর পরে জম্মু ও কাশ্মীরে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন প্যাকেজ (পিএমডিপি) এর আওতায় সেখানে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে।

পিএমইজিপি হল এক বছর আগে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার পরে জম্মু ও কাশ্মীরে চালু করা অন্যতম প্রধান কর্মসূচি। এটি একটি ঋণ-সংযুক্ত ভর্তুকি কর্মসূচি যার লক্ষ্য ঐতিহ্যবাহী কারিগর এবং বেকার যুবকদের ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্ব-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। 

এই প্রকল্পের আওতায় অনেক তরুণ উদ্যোক্তা ঋণ নিয়ে কারখানা স্থাপন করে নিজের ও অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল হওয়ায় এই অর্থনৈতিক গতি, গণতান্ত্রিক নীতিসমূহের গভীরতরকরণ এবং উন্নয়নই এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।

এছাড়াও শ্রীনগর ও জম্মুতে দুটি করে আইটি পার্কের পরিকল্পনা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। এর আয়তন হবে পাঁচ লক্ষ বর্গফুট। পাশাপাশি আবাসন খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার রিয়েল এস্টেট নীতিমালা তৈরি করেছে। সরকার শুধু রাস্তাঘাটে উন্নয়ন করছে না বরং সবখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। 

ইতোমধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব তহবিল থেকে ৮০ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। 

অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল ও এর সুবিধাসমূহ

৩৭০ অনুচ্ছেদের সুবিধা নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের নেতারা সেখানে প্রায় ৭০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু তারা সেখানে আদৌও কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। বরং তারা কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে মাত্র দু’বছরে সেখানে ব্যাপক উন্নয়ন দেখা গেছে। 

যদিও জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য খর্ব হয়েছে। তবে তার এই দাবি সঠিক নয়। কারণ ইতোমধ্যে সরকার ৪০টি কোম্পানির মাধ্যমে ১৫ হাজার কোটি রুপির উন্নয়ন প্রস্তাবনা পেয়েছে। আর এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, পর্যটন, দক্ষতা, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি খাত।

এছাড়াও কাশ্মীর ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী শাসিত হবে। ভারতের সব আইন কাশ্মীরিদের জন্যও প্রযোজ্য হবে এবং ওই রাজ্যের বাইরের মানুষও এখন থেকে সেখানে সম্পত্তির মালিকানা নিতে পারবে। এর ফলে ওই অঞ্চল সমৃদ্ধি লাভ করবে।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর  



এই পাতার আরো খবর