ঢাকা, রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সিআইএ অফিসার থেকে ‘লেডি তালেবান’, কে এই রবিন রাফেল?
অনলাইন ডেস্ক
রবিন রাফেল

আমেরিকার সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (সিআইএ)-র উচ্চপদে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়ায় নানা বিষয় দেখভালের দায়িত্ব তার ওপরই দিয়েছিল সংস্থাটি। প্রাণ বাজি রেখে জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ইরানের মতো দেশে।

সে সময়েই আফগানিস্তানের তালেবান নেতাদের কাছাকাছি এসেছিলেন। কাজকর্মের জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ‘লেডি তালিবান’ নামে।

তালেবানে কখনও কোনও নারী নাম লিখিয়েছেন, এমনটা কল্পনাতেও আনা যায় না। তিনিই একমাত্র নারী, যার নামের সঙ্গে ‘তালেবান’ শব্দটি যোগ হয়েছিল।

তার পুরো নাম রবিন রাফেল। রবিন থেকে ‘লেডি তালেবান’ হয়ে ওঠার কাহিনিটা অবশ্য একটু আলাদা। তালেবানের মতো কট্টরপন্থী মানসিকতার মানুষ তিনি ছিলেন না। তালেবান নেতাদের মতো নৃশংসও ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন ‘লেডি তালেবান’।

রবিনের জন্ম ১৯৪৭ সালে ওয়াশিংটনে। মেধাবী রবিন ইতিহাস এবং অর্থনীতির ছাত্রী ছিলেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং পরে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার পরই সিআইএ-র অ্যানালিস্ট হিসাবে তাকে নিয়োগ করেছিলেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন।

কর্মসূত্রেই পরবর্তীকালে তিনি অনেকটা সময় আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে কাটিয়েছেন। এক সময় দিল্লিতে আমেরিকার দূতাবাসে রাজনৈতিক কাউন্সিলর হিসেবেও কাজ করেছিলেন।

১৯৯৬ সালে তখন আফগানিস্তানে তালেবান-রাজ কায়েম ছিল। তালেবানের সঙ্গে সেই সময় আমেরিকার যে ক’জন উচ্চপদস্থ অফিসার সরাসরি দেখা করতে পেরেছিলেন, রবিন ছিলেন তাদেরই অন্যতম। ওই বছর আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মধ্যের একটি পাইপলাইন প্রকল্পের জন্য সওয়ালও করেছিলেন তিনি।

সশরীরে তালেবানের মুখোমুখি হওয়া এবং পাইপলাইন প্রকল্প নিয়ে তাদের হয়ে কথা বলার জন্যই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সে সময় রবিনকে ‘লেডি তালেবান’ নাম দিয়েছিল।

১৯৯৬ সালে তালেবানের দখলে কাবুল চলে আসার পর তালেবান নেতাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্কের কথা মাথায় রেখে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আমেরিকা রবিনের ওপর অনেকটাই নির্ভর করেছিল।

কিন্তু পরবর্তীকালে তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ওঠে। অনেকেই তার কথাবার্তার মধ্যে একদিকে পাকিস্তান এবং অন্য দিকে আফগানিস্তানের তালেবানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব লক্ষ করেছিলেন।

ভারতের কাছে রবিন অবশ্য এরও অনেক আগে থেকে অপ্রিয় ছিলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ১৯৯৩ সালে প্রথম বার তার নাম ছাপা হয়। কাশ্মীরকে প্রকাশ্যে ‘বিতর্কিত অঞ্চল’ বলেছিলেন তিনি।

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল তাকে। তার ফোনে আড়ি পেতেও সেই প্রমাণ পেয়েছিল এফবিআই। গোপনে পাকিস্তানের হাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।

২০১৩ সালে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি আলমারি থেকে ২০ বছরের পুরনো নথি বাজেয়াপ্ত করেছিল এফবিআই। পরে যদিও তেমন কোনও প্রমাণ দিতে না পারায় তদন্ত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল এফবিআই। তবে আমেরিকা তার সমস্ত নিরাপত্তা এবং সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছিল।

রবিনের বয়স এখন ৭৪ বছর। দু’বার বিয়ে করেছেন তিনি। কোনও বিয়েই স্থায়ী হয়নি। ইংরেজির পাশাপাশি উর্দু এবং ফরাসি ভাষায় সাবলীল তিনি। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, টাইমস ইউকে, টেলিগ্রাফ

বিডি প্রতিদিন/কালাম



এই পাতার আরো খবর