ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সিএনবিসির প্রতিবেদন
জাকারবার্গের অদক্ষ নেতৃত্বে পতনের মুখে ফেসবুক, হার্ভার্ডের বিশেষজ্ঞের দাবি
অনলাইন ডেস্ক
মার্ক জাকারবার্গ।-ফাইল ছবি

মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বেই তরতর করে সাফল্যের চূড়ায় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, একটা ক্যাম্পাসের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে পৃথিবীর সব কোণায় কোণায়। বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩০০ কোটি প্রায়।

তবে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের একজন সিনিয়র ফেলো এবং মেডিকেল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেডট্রোনিকের সাবেক সিইও বিল জর্জ দাবি করেছেন, মার্ক জাকারবার্গের অদক্ষ নেতৃত্বই ফেসবুককে পতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার দাবি, প্রতিষ্ঠান সিইও জাকারবার্গ দিন দিন ফেসবুককে আসল পথ থেকে অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে বিল জর্জের বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি (জাকারবার্গ) যতদিন আছেন, ততদিন ফেসবুক ভালো কিছু করতে পারবে না। এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে মানুষ দূরে সরে যাওয়ার অন্যতম কারণ জাকারবার্গ। তিনি সত্যিই পথ হারিয়েছেন।’

গত ২০ বছর ধরে কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্বদানে ব্যর্থতার বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন বিল জর্জ। সম্প্রতি এ নিয়ে ‘ট্রু নর্থ: লিডিং অথেনটিক্যালি ইন টুডে’স ওয়ার্কপ্লেস, এমার্জিং লিডার এডিশন’ নামক একটি বই প্রকাশ করেছেন জর্জ।

জর্জের মতে, যে বসেরা টাকা-ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও নেতা হওয়ার উদ্দেশ্যটিই ভুলে যান, তাদের পতন অবধারিত। অনেক হাই-প্রোফাইল কর্পোরেট নেতাদের পতনের ওপর গবেষণার পর জর্জের উপলব্ধি ‘মার্ক জাকারবার্গ এবং তার প্রতিষ্ঠান মেটা’ও বর্তমানে সেই একই পথে রয়েছে।’

তবে এবিষয়ে মেটা কিংবা জাকারবার্গ এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

২০০৪ সালে কয়েকজন সহউদ্যোক্তাকে নিয়ে ফেসবুক (বর্তমানে মেটা) প্রতিষ্ঠা করেন জাকারবার্গ। গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত মেটার বাজার-মূলধন ৪৫০.৪৬ বিলিয়ন ডলার।

এরপরও বিল জর্জ কেন বলছেন যে জাকারবার্গ ফেসবুককে পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে? তার তিনটি কারণও সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন তিনি জর্জ।

১. অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপান জাকারবার্গ!

বিল জর্জের বইয়ে পাঁচ ধরনের খারাপ বসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে তিন শ্রেণিতেই আছে জাকারবার্গের নাম! জর্জের মতে জাকারবার্গ নিজের ভুল স্বীকার করেন না, মানে তিনি ভুল থেকে শিক্ষা নেন না। উল্টো তিনি অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে চান।

গত ফেব্রুয়ারিতে মেটার মোট বাজারমূল্যের ২৩২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি লোকসান হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ দরপতন। কিন্তু জাকারবার্গ ও তার কার্যনির্বাহীরা এর দায় চাপিয়েছে অন্যান্য বিষয়ের উপর, যেমন-২০২১ সালে অ্যাপলের গোপনীয়তা নীতির পরিবর্তন, যার ফলে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছাতে না পারা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্ম টিকটকের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা।

জর্জের দাবি, কিন্তু এসব কারণের পাশাপাশি মেটাভার্স গবেষণা ও উন্নয়নের পেছনে যে প্রচুর ব্যয় হয়েছে তা তারা স্বীকার করেননি। জনসম্মুখে জাকারবার্গ এখনো আর্থিক ক্ষতির দায় স্বীকার করেননি, যদিও জাকারবার্গ বলেছেন, মেটাভার্স প্রযুক্তির পেছনে প্রচুর বিনিয়োগের ফলে আগামী ৩-৫ বছরের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠানটি 'উল্লেখযোগ্য পরিমাণ' ক্ষতির স্বীকার হবে।

  ২. অন্য কারো উপদেশ গ্রহণ করেন না জাকারবার্গ

বিল জর্জ আর দাবি করেছেন, জাকারবার্গ একাই সবকিছু করতে চান। তিনি কারো সাথে সম্পর্ক গড়েন না, কেউ আগ্রহী হলে তাকেও দূরে সরিয়ে দেন। এ ধরনের বসেরা কারো কাছ থেকে সাহায্য, উপদেশ বা ফিডব্যাক নিতে চান না; ফলে ভবিষ্যতেও তারা ভুল করতেই থাকেন।

নিজের বিচক্ষণতার উপর শতভাগ আস্থা রাখার জন্য জাকারবার্গ সুপরিচিত। টেক জায়ান্ট মেটা প্রতিষ্ঠা করা থেকেই যার প্রমাণ মেলে। শুরুর দিকে জাকারবার্গ বিশ্বস্ত উপদেষ্টাদের উপদেশ নিলেও, এখন তা একেবারেই বন্ধ।

উদাহরণস্বরুপ, প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম এলিভেশন পার্টনার্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ফেসবুকের একজন প্রাথমিক বিনিয়োগকারী রজার ম্যাকনামির কথা বলা যায়। ২০০৬ সালে ম্যাকনামি জাকারবার্গকে ১ বিলিয়ন ডলারে ফেসবুক কেনার ইয়াহুর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরামর্শ দেন। ম্যাকনামি পরে জাকারবার্গকে প্রাক্তন সিওও শেরিল স্যান্ডবার্গকে নিয়োগের জন্য উৎসাহিত করেন, যিনি শেষ পর্যন্ত কোম্পানির বিজ্ঞাপন বাণিজ্য এবং অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। 

দুইবারই, জাকারবার্গ ম্যাকনামির পরামর্শ মেনে নেওয়ায় সিদ্ধান্তগুলো খুবই সফল প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু মেটা প্রসারের সাথে সাথে জাকারবার্গ অন্যদের উপদেশ শোনা বন্ধ করে দেন। ম্যাকনামি ২০১৯ সালে নিউ ইয়র্কারকে এ তথ্য দেন।

২০১৬ সালে ম্যাকনামি ফেসবুকের প্ল্যাটফর্মগুলোতে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের প্রভাব সম্পর্কে জাকারবার্গকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলেন।কিন্তু জাকারবার্গ কয়েক মাস ধরে ম্যাকনামিকে উপেক্ষা করে যান। সে থেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই উপসংহারে পৌঁছায় যে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের একটি প্রধান প্ল্যাটফর্ম ছিল ফেসবুক এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে ভূমিকা থাকতে পারে।

৩. জাকারবার্গ চান শুধু খ্যাতি-সম্পদ!

শেষে বিল জর্জ দাবি করেছেন, জাকারবার্গ কেবল খ্যাতি আর সম্পদের পেছনেই ছুটছেন। জর্জের মতে, এধরনের বসেরা কখনোই নিজের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না, আরও বেশি টাকা-খ্যাতির পেছনে ছুটে চলেন।

জাকারবার্গ মেটার প্রসার ও লাভের দিকেই শুধু গুরুত্ব দিয়েছেন, এমনকি তা কোটি কোটি ব্যবহারকারীর স্বার্থের বিনিময়ে হলেও! জর্জ মনে করেন, এটা নতুন কিছু নয়। কারণ ফেসবুকের কারণে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সমস্যা হচ্ছে এবং তা নিয়ে দীর্ঘদিন বহু বিতর্কও রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, গতবছর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানতে পারে, মেটার মালিকানায় থাকা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের মানসিক সমস্যার পেছনে দায়ী, বিশেষত, টিনেজ মেয়েদের। কিন্তু তারা জানতে পারে, মেটা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করে এ সমস্যাটি এড়িয়ে যাচ্ছিলো, যাতে করে ইনস্টাগ্রামের প্রসারে ব্যাঘাত না ঘটে।

এই উদাহরণেই জর্জ বোঝাতে চান, ‘এখান থেকেই বোঝা যায় যে জাকারবার্গ তার প্রতিষ্ঠানের আয়, সম্পদ লাভ ছাড়া আর কিচ্ছু বোঝেন না’।

 

সূত্র: সিএনবিসি

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর