করোনা রুখতে জিরো-কোভিড নীতি গ্রহণের কারণে চীনের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চীনের তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, আবাসন খাতও ভালো নেই। এসব কারণে চীনের তরুণেরা মিতব্যয়ী হচ্ছেন।
যেমন সাংহাইয়ের ৩৯ বছর বয়সী মার্কেটিং কনসালটেন্ট ডরিস ফু পশ্চিমা দামি ব্র্যান্ডের কসমেটিকস ছেড়ে চীনা ব্র্যান্ড ব্যবহার করা শুরু করেছেন। আগে নিয়মিত মেনিকিউর করতেন, এখন করছেন না। চুল কাটা, নতুন স্টাইল করাও বাদ দিয়েছেন। একসময় বড় অ্যাপার্টমেন্ট কেনা, গাড়ির মডেল পরিবর্তন করার কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু এখন এসব আপাতত স্থগিত করে রেখেছেন।
আরেক তরুণী ২৮ বছর বয়সী ইয়াং জুন আগে প্রতিদিন স্টারবাকসের কফি খেতেন। এখন খাচ্ছেন না৷ এছাড়া দামি ফরাসি ব্র্যান্ড জিভসিঁর কসমেটিকসের বদলে চীনা ব্র্যান্ড ফ্লোরেসিসের পণ্য ব্যবহার করছেন যার দাম প্রায় ৬০ শতাংশ কম।
করোনার আগে ইয়াং জুনের ক্রেডিট কার্ডে অনেক ঋণ ছিল। এখন মিতব্যয়ী হয়ে খরচ কমানোয় তার ঋণ নেই। করোনা তাকে এসব শিখিয়েছে বলে রয়টার্সকে জানান তিনি। ‘‘আপনি আগের মতো চলতে পারেন না, যা আয় করছেন সব খরচ করলে হবে না,’ বলেন ইয়াং জুন।
পরিসংখ্যান বলছে, করোনা শুরুর পর খুচরা বিক্রি কমেছে। মানুষ এখন সঞ্চয়ের দিকে নজর দিচ্ছে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বর্তমানে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ খরচ করা বা বিনিয়োগ করার চেয়ে সঞ্চয়ে বেশি মনোযোগী হচ্ছে।
মানুষের আচরণে এমন পরিবর্তন চীনের অর্থনীতির জন্য ভালো খবর নয় বলে মনে করছেন চায়না মার্কেট রিসার্চ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেঞ্জামিন কাভেনডার। কারণ, চীনের জিডিপির অর্ধেকের বেশি আসে খুচরা বিক্রি থেকে।
সরকারি হিসেব বলছে, চীনে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মধ্যে বেকারত্বের হার এখন ১৯ শতাংশ। জুলাইয়ে সেটি ২০ শতাংশ ছিল। অনেক তরুণকে বিশেষ করে যারা খুচরা ও ই-কমার্স কোম্পানিতে কাজ করেন তাদের বেতন কমাতে বাধ্য করা হয়েছে। ৩৮টি বড় শহরে গড় বেতন এক শতাংশ কমেছে।
এই অবস্থায় মিতব্যয়ী জীবনযাপন করার উপায় নিয়ে বানানো ভিডিওগুলো সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় হচ্ছে। যেমন দেড়শ টাকায় কীভাবে রাতের খাবার বানাবেন সেই উপায় দেখিয়ে একশ'র বেশি ভিডিও বানিয়েছেন এই তরুণী। লাইফস্টাইল অ্যাপ শাওহংসু ও স্ট্রিমিং সাইট বিলিবিলিতে এগুলো বেশ সাড়া ফেলেছে।
এ ছাড়া চীনের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর শাংহাইতে ২৪ হাজার টাকায় মাস চলার চ্যালেঞ্জও সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে, রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ