ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

যেভাবে ক্রেডিট সুইসের ১৬৬ বছরের ঐতিহ্যের ইতি ঘটল
অনলাইন ডেস্ক
প্রতীকী ছবি

ক্রেডিট সুইস, সুইজারল্যান্ডের একটি ব্যাংক। দীর্ঘ ১৬৬ বছর ধরে ব্যাংকটি আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে দেশটির অটল অবস্থান ধরে রাখতে সাহায্য করেছে। কিন্তু এখন ব্যাংকটির অস্তিত্বই নেই। সপ্তাহব্যাপী আলোচনা শেষে ইউবিএস তাদের সম্পূর্ণ শেয়ার ৩২৫ কোটি ডলারে কিনে নেওয়ার কথা বলেছে। 

প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানের এসব বিভিন্ন ধরনের কেলেঙ্কারি, আইনি ঝামেলা ও ব্যবস্থাপনার বিশৃঙ্খলার কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হওয়ার আগে ওয়াল স্ট্রিটের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে এগিয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের ক্ষয়টা অনেক দিন আগে শুরু হলেও শেষটা হয়েছে খুবই দ্রুত।

মাত্র কয়েকদিন আগে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ধসের খবর পাওয়া গেছে। তার পরই দীর্ঘসময় ধরে ভুগতে থাকা ক্রেডিট সুইস এক মুহূর্তে সবার উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিস্টেমেটিক্যালি গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি ব্যাংকের একটি ক্রেডিট সুইসও ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক অশান্তির মুখোমুখি পড়েছে। মূল্যস্ফীতির প্রবণতার মধ্যে শক্তি আর্থিক নীতি চালু করাই ছিল এর কারণ। 

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের আগে ক্রেডিট সুইস তার অনেক সমসাময়িক ব্যাংকের বিপরীতে কোনো ধরনের বেইলআউট ছাড়াই টিকে থেকেছে। সুইস ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ ছিল ১ ট্রিলিয়নেরও বেশি, কিন্তু কয়েক বছরের ক্ষত শেষে তা ৫৮ হাজার কোটি ডলারে নেমে আসে, যা ইউবিএসের অর্ধেক। 

এর আগে ১৯৯০ সালের দিকে প্রথম ক্রেডিট সুইসের উত্থান ও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কার বীজ দেখেছিলেন সেই সময়ের প্রধান নির্বাহী রেইনার গাট। পরিমিত মূলধন বিনিয়োগের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকের যুক্তরাষ্ট্র পার্টনারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সম্ভাবনা দেখেই এমন ভেবেছিলেন তিনি। এক সময়ের আকর্ষণীয় এ খাতের ওহিও ম্যাট্রেস কেনার জন্য ৪৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার ধার নেওয়ার সিদ্ধান্তও ছিল ধ্বংসের মুখে পড়ার কারণ। ব্যর্থ অর্থায়ন সে সময়ে একটি জ্বলন্ত বিছানা হয়ে ওঠে পুরো প্রতিষ্ঠানটির জন্য। 

পরে ক্রেডিট সুইস আরও একই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা-বাণিজ্য অধিগ্রহণ করেছে, সেসব তাকে আরও বেশি ‘বার্নিং বেড’ চুক্তি করার দিকে প্ররোচিত করেছে। ২০১৫ সালে ক্রেডিট সুইসে একজন ভুয়া ব্যাংকারেরও যোগদান করার বিষয়টি উঠে আসে, যার আগে না ছিল কোনও গ্রাহক বা ব্যাংকিং এক্সপেরিয়েন্স। এমন কয়েকটি ঘটনার পর বেশ কয়েকবার ব্যাংকটিকে লাল পতাকা দেখানো হয়। মুখে ও লিখিত সতর্ক বার্তাও দেওয়া হয় নীতি বিষয়ে। কিন্তু ক্রেডিট সুইস এসব ভুয়া ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। তাতেও অনেকের আস্থা হারায় প্রতিষ্ঠানটি।

গত বছরের অক্টোবরে ব্যাংকটির নেতৃত্বে আসে নতুন কমিটি। নতুন চেয়ারম্যান এক্সেল লেহমান ও প্রধান নির্বাহী আলরিচ কোয়েরনার ব্যাংকটি পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করেন। তারা ৪০০ কোটি ডলারের নতুন মূলধন আনতেও সক্ষম হয়। তাদের প্রত্যাশা ছিল ২০২৪ সালের পর থেকে ক্রেডিট সুইস নিশ্চয়ই আবার লাভজনক হয়ে উঠবে।

কিন্তু তখন বিশ্ব অর্থব্যবস্থাই স্থির ছিল না। বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা এর মধ্যেই তৈরি হয়েছে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে নেমেছে। ফলে ব্যাংকটি সেই শিক্ষা পায়, যা আর কেউ পায়নি। বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ জন প্লাসার্ডের মতে, ব্যাংক খাতটি অন্য আর কোনও খাতের মতো নয়। এখানে যদি একবার বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সেটা আর পুনর্গঠন করা যায় না। সে চিত্রই দেখেছে ক্রেডিট সুইস। সূত্র: এনপিআর, দ্য ন্যাশনাল

বিডি প্রতিদিন/কালাম



এই পাতার আরো খবর