ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

রাশিয়ায় হামলার ঘটনা থেকে নিজেদের দূরে রাখছে যুক্তরাষ্ট্র
নিজস্ব প্রতিবেদক
পরিত্যক্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিমা সামরিক যানের ছবি প্রকাশ করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

রাশিয়ার ভেতরে সশস্ত্র ব্যক্তিদের হামলার ঘটনা থেকে নিজেদের দূরত্বে সরিয়ে রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেন থেকে প্রবেশ করা সশস্ত্র হামলাকারীদের তারা পরাস্ত করেছে।

গতকাল সোমবার ইউক্রেনের বেলগোরদ সীমান্ত অঞ্চলে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। গত বছর প্রতিবেশী দেশে ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা শুরু করার পর থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে এটা রাশিয়ায় হামলা চালানোর অন্যতম বড় ঘটনা।

হামলকারীদের ফেলে যাওয়া অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বেশ কিছু পশ্চিমা যানের ছবি প্রকাশ করেছে রাশিয়া, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত হামভি সাঁজোয়া যানও রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, “রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালানোর ব্যাপারে তারা কোন উৎসাহ দেয়নি বা সহায়তাও করেনি”।

যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র ওই হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে, এমন ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটি স্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “এসব খবরের সত্যতা নিয়ে তার দেশের সন্দেহ রয়েছে"।

মঙ্গলবার একটি সংবাদ সম্মেলনে ম্যাথু মিলার বলেছেন, “সেখানে কীভাবে যুদ্ধ চালানো হবে, এটা একান্তই ইউক্রেনের ব্যাপার”।

বেলগোরদ সীমান্তের কাছাকাছি গ্রামগুলোয় গোলা বর্ষণ শুরু হওয়ার পর বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের অভিযানে ৭০ জন হামলাকারী নিহত হয়েছে। তাদের দাবি, এই যোদ্ধারা ইউক্রেন থেকে এসেছে।

তবে ওই ঘটনার সঙ্গে কোন রকম জড়িত থাকার বক্তব্য নাকচ করেছে ইউক্রেন। তাদের দাবি, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদামির পুতিনের বিরোধী দুটি আধা সামরিক বাহিনী ওই হামলার পেছনে রয়েছে।

সোমবারের হামলার পরে রাশিয়া সেখানে একটি সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযান চালাতে বাধ্য হয়। সেখানে যোগাযোগ নজরদারি এবং মানুষজনের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপের বিশেষ ক্ষমতাও দেয়া হয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে।

পরদিন দুপুর নাগাদ সেসব কড়াকড়ি তুলে নেয়া হয়। এরপর একটি আধাসামরিক গ্রুপ দাবি করেছে যে, “ছোট হলেও এখনো মাতৃভূমির কিছু অংশ” তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।

বেলগোরদের গভর্নর ভিচেস্লাভ গ্লাদকোভ বলেছেন, সহিংসতায় একজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত আর বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেলগোরদে একটি ড্রোন থেকে বিস্ফোরক ফেলা হলে একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ড্রোনটিকে গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে।

যুদ্ধরত উভয় পক্ষের এসব দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, রাশিয়ার প্রধান নিরাপত্তা সংস্থা এফএসবির ব্যবহার করা একটি ভবন ওই সংঘর্ষ চলার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু কীভাবে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হলো, তা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়।

বেলগোরদে হামলার প্রসঙ্গে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদী গ্রুপের একটি ইউনিট রাশিয়ার ভেতরে ঢুকে হামলা চালিয়েছে।

যেসব ছবি প্রকাশ হয়েছে তার একটিতে দেখা যাচ্ছে বিধ্বস্ত গাড়ি যেখানে রাশিয়ান ভাষায় লেখা রয়েছে ‘বাখমুতের জন্য’। এটা ইউক্রেনের সেই শহরকে নির্দেশ করছে, যা পুরোপুরি রাশিয়ার দখলে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে কিয়েভ বলছে যে শহরের কিছু অংশ এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণে।

গোলা বর্ষণ ও বিমান হামলায় মানুষ নিহত হবার ঘটনাকে ‘ইউক্রেনীয় সন্ত্রাস’ হিসেবে বর্ণনা করে রাশিয়া বলছে বাকি যোদ্ধাদের সীমান্তের ওপারে ইউক্রেনে ফেরত যেতে তারা বাধ্য করেছে।

তবে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, হামলাকারীরা ছিল লিবার্টি অব রাশা লিজান এবং রাশান ভলান্টিয়ার কোর (আরভিসি) এই দুটো গ্রুপের সদস্য।

দুটো আধাসামরিক বাহিনী তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে নিশ্চিত করেছে যে হামলায় তারা সম্পৃক্ত ছিল।

দুটো গ্রুপই ইউক্রেনের টিভি চ্যানেল সাসপিলনকে জানিয়েছে যে, তারা "রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে সীমান্তে একটি নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চল তৈরি করছে যেখান থেকে তারা ইউক্রেনকে গোলাগুলি করতে পারবে না"।

লিবার্টি অব রাশা লিজান ইউক্রেন-ভিত্তিক রুশ মিলিশিয়াদের একটি গ্রুপ, তারা বলছে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার লক্ষ্যে তারা রাশিয়ার ভেতরে তৎপর রয়েছে।

সোমবার টুইটারে এক পোস্টে গ্রুপটি দাবি করে যে, তারা সীমান্তবর্তী কজিঙ্কা শহরটি “সম্পূর্ণ মুক্ত” করেছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারাও বলছেন এই যোদ্ধারা ইউক্রেনীয়দের জন্য একটি “নিরাপত্তা এলাকা” প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছিল।

রাশিয়ার মাটিতে যে কোনও ধরনের হামলা পশ্চিমা দেশগুলোর নেটো সামরিক জোটের নেতাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে-ফলে এই ঘটনাগুলো কিয়েভের জন্য মিশ্র আশীর্বাদ হিসেবে আসতে পারে।

সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অনুপ্রবেশ মস্কোর জন্য হয়তো বিব্রতকর, এবং কয়েক মাসের তীব্র ও রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ হারানো ইউক্রেনের জন্যে এটা একধরনের ‘শোধবোধ’ও মনে হতে পারে।

এটা ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের আগে তাদের গঠনমূলক কার্যক্রমেরও অংশ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দক্ষিণ থেকে রুশ সৈন্যদের দূরে সরিয়ে নিতে কিয়েভ হয়তো আক্রমণ চালাতে পারে।

তবে এমন কোনও কর্মকাণ্ড পশ্চিমারা সমর্থন দেবে না।

পশ্চিমা দেশগুলো কিয়েভকে যে দূরপাল্লার অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করেছে সেগুলো এই হামলায় ব্যবহার করা হয়নি। এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে কোনও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্যও সেগুলো ব্যবহার করা যাবে না।

এই হামলা নিয়ে কিয়েভ আনুষ্ঠানিক কোনও স্বীকৃতি না জানালেও ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দাদের সহায়তা ছাড়াই এই অভিযান চালানো হয়েছিল তা বিশ্বাস করা কঠিন।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত



এই পাতার আরো খবর