প্রায় ছ’হাজার বছরের ঘুম ভেঙে জেগে ওঠা আইসল্যান্ডের সেই আগ্নেয়গিরি। জ্বালামুখ থেকে ক্রমাগত গড়িয়ে পড়ছে ফুটন্ত লাভা! গরম ছাই-এ ঘন কালো হয়ে উঠেছে আকাশ।
আইসল্যান্ডের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, পর পর ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে দেশ। তার জেরেই এই অগ্ন্যুৎপাত। গত কয়েক মাস ধরে লাভার স্রোত বয়ে চলেছে। বুধবার লাভা নির্গমন খানিক কমলেও আবহাওয়া বিভাগের আশঙ্কা, শীঘ্রই আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ খুলে যেতে পারে।
দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমের রেকিয়ান্স উপদ্বীপের ‘ফাগরাদাসফিয়াক’ আগ্নেয়গিরিটি থেকে গত মাস ধরে একনাগাড়ে অগ্ন্যুৎপাত চলছে। লাভার স্রোত ঢেকে দিয়েছে গ্রিন্ডাভিক শহরের একাংশ।
ঘটনাস্থল থেকে যে ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বরফে ঢাকা মাটির বুক চিড়ে গনগনে আগুনের স্রোত বইছে। জ্বালামুখ থেকে ক্ষণে ক্ষণেই হচ্ছে তীব্র গর্জন।
এই পরিস্থিতিতে গ্রিন্ডাভিক-সহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় জরুরি অবস্থাও জারি করেছে প্রশাসন। ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের প্রস্তুত থাকতে বলার পাশাপাশি বেশ কিছু এলাকা থেকে নাগরিকদের নিরাপদ জায়গায় সরানোর কাজও শুরু করেছে সরকার।
গত কয়েক মাস ধরেই বিপর্যস্ত আইসল্যান্ডের একাংশ। গত জুলাই মাসে উত্তর ইউরোপের এই দেশটিতে একাধিক বার ভূমিকম্প হয়। সরকারি হিসাব বলছে, ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ৭০০ বার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছিল।
সেই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল গ্রিন্ডাভিক থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরের এলাকা। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে পরপর ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল সেখানে।
আবহাওয়া বিভাগ তখনই জানিয়েছিল, যে ভাবে পরপর ভূমিকম্প হয়েছে, তাতে বড় মাপের ক্ষতি হতে পারে। প্রবল বিস্ফোরণের ধাক্কায় মাটি ফুঁড়ে জন্ম নিতে পারে নতুন আগ্নেয়গিরি।
সেই আশঙ্কাই সত্যি করে জুলাই থেকে অগ্যুৎপাত শুরু হয়েছে রেকিয়ান্সে। কিন্তু আইসল্যান্ডে এত বার ভূমিকম্পের কারণ কী? ভূ-বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছে, দেশটি ইউরেশিয়ান ও উত্তর আমেরিকার টেকটনিক প্লেটের মাঝে অবস্থিত।
প্লেট দু’টির অভিমুখ বিপরীত দিকে। সেই কারণেই মাঝেমধ্যে কম্পন অনুভূত হয়। বার বার ভূমিকম্পের কারণেই ঘুমিয়ে থাকা ‘ফাগরাদাসফিয়াক’ আবার জেগে উঠেছে। আইসল্যান্ড অন্যতম অগ্ন্যুৎপাতপ্রবণ এলাকা বলে পরিচিত। এত কাল প্রতি চার-পাঁচ বছর অন্তর সেখানে অগ্ন্যুৎপাত হত।
কিন্তু ২০২১ সাল থেকে অগ্ন্যুৎপাতের প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে দেশটিতে। এখন প্রতি বছরই অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটছে। ২০২১ সালেই মাত্র ২৮ দিনের ব্যবধানে ৪০ হাজার ভূমিকম্প হয়েছিল আইসল্যান্ডে। তার পরেই শুরু হয় লাভা উদ্গীরণ।
সেবারও ৫০০ থেকে ৭৫০ মিটার দীর্ঘ একটি লাভা মুখ তৈরি হয়েছিল। যেখান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় লাভা ছিটকে বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছিল। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক