গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে পূর্ণ ফলাফল ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
এরই মধ্যে চার দিন পেরিয়ে গেছে নির্বাচনের। কিন্তু এখনও কেউ জানে না কোন দল সরকারে আসছে, আর কে হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
এরই মধ্যে নির্বাচনে নিজ নিজ দলের পক্ষে জয় দাবি করেছেন ইমরান খান ও নওয়াজ শরিফ। এই দু’জন ছাড়াও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিও প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য আলোচনায় আছেন। ইমরানের পিটিআই, নওয়াজের পিএমএল-এন এর চেয়ে অনেক কম আসন পেয়েছেন বিলাওয়ালের পিপিপি। তারপরও তিনিই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনায় সমীকরণ হিসেবে।
এদিকে, এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে সামনে কী ঘটতে পারে তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। সামনের দিনে পাকিস্তানে ঘটতে পারে এমন চারটি সম্ভাবনার কথা বলছে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমটি।
নির্বাচনে ২৬৫ আসনের মধ্যে ২৬৪ আসনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ৯৭ আসনে জয় পেয়েছেন ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরপর পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ বা পিএমএল-এন ৭৬ আসনে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৫৪ আসনে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ছোট দল পেয়েছে ৩৭টি আসন।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার গঠন করতে হবে। ইসলামাবাদ থেকে বিবিসি উর্দুকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক রফিউল্লাহ কাকার বলেছেন, এটি একটি খণ্ডিত ম্যান্ডেট- যেখানে কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তবুও তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় একটি সাধারণ ভিত্তি খুঁজে বের করতে হবে বা একটি জোট সরকার গঠন করতে হবে।
নির্বাচনে কোনও দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকার গঠন করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বড় দলগুলো। তবে এখনও কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি রাজনৈতিক নেতারা। এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হল- পাকিস্তানে সামনে কী হবে? নিচে এই ধরনের চারটি সম্ভাবনা তুলে ধরা হল:
বিলাওয়ালের সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন নওয়াজ
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা ইয়াসমিন বলেছেন, একটি বিষয় হতে পারে- পিএমএল-এন ও পিপিপি কয়েকটি ছোট দল নিয়ে জোট সরকার গঠন করতে পারে। দল দুটি ২০২২ সালে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জোট গড়েছিল এবং গত আগস্ট পর্যন্ত দেশ শাসন করেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, প্রেসিডেন্ট কে হবেন এবং অন্যান্য প্রদেশে ক্ষমতার ভাগাভাগি কেমন হবে সেসব বিষষের মধ্যে তাদের আলোচনা আটকে আছে।
গত রবিবার নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে পিএমএল-এনের একটি প্রতিনিধি দল পিপিপির সঙ্গে বৈঠক করেছে। অবশ্য সে বৈঠকে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি পিপিপি। বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছুটা সময় নিয়ে আগানোর নীতি নিয়েছেন বিলাওয়াল।
এছাড়া এমকিউএম ও অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গেও আলোচনা অব্যাহত রেখেছে পিএমএল-এন। এবারের নির্বাচনে ১৭টি আসন পেয়েছে দলটি।
পিটিআইয়ের সঙ্গে জোট করতে পারে পিপিপি
পিটিআইয়ের সঙ্গে জোট গঠন করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পিপিপির সিনিয়র নেতা শেরি রেহমান বলেছেন, তাদের দরজা সবার জন্য খোলা। তবে ইমরান খানের মিডিয়া উপদেষ্টা জুলফি বুখারি বলেছেন, পিটিআই যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় তখন জোট গঠন না করে বিরোধীদলের আসনে বসবে।
এর আগেও একই ধরনের কথা বলেছিলেন ইমরান খান। ২০১৮ সালে তিনি বলেছিলেন, জোট সরকার দুর্বল। পাকিস্তান যে সংকটের মুখোমুখি রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে একটি শক্তিশালী সরকারের প্রয়োজন। অবশ্য এমন কথা বলার পরও তিনি এমকিউএম-এর মতো ছোট দলের সঙ্গে জোট গঠন করে সরকারে এসেছিলেন।
পিটিআইয়ের সঙ্গে জোট গড়তে পারে পিএমএল-এন
পাকিস্তানের বর্তমান জটিল পরিস্থিতিতে কোনও কিছুই একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পিটিআই যদি পিএমএল-এনের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করে তাহলে নির্বাচনী নাটকে নতুন বড় মোড় আসবে।
পিএমএল-এনের সিনিয়র নেতা আজম নাজির তারারের বক্তব্যে এমন বিয়ষটি উঠে এসেছে। তিনি বলেন, তারা এমন একটি অংশগ্রহণমূলক জোট সরকার গড়তে চান যেখানে সবার হাত মেলানো উচিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে যে পিটিআইকে কোনওভাবে এড়ানো যাবে না তার কথায় বিষয়টি স্পষ্ট।
ছোট দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে পারে পিটিআই
আরেকটি সম্ভাবনা হল- পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোট সরকার গঠনের জন্য একটি ছোট দলে যোগ দিতে পারেন। মূলত সংরক্ষিত ৬০টি আসন পেতে এমন কাজ করতে পারে তারা।
নিয়ম অনুযায়ী, সংসদে প্রতি ৩ দশমিক ৫ আসনের জন্য একটি সংরক্ষিত নারী আসন পাবে কোনও রাজনৈতিক দল। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কোনও দলের না হওয়ায় তারা এসব আসনের ভাগ পাবে না। এ জন্য নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্বতন্ত্রদের অবশ্যই একটি দলে যোগদান করতে হবে কিংবা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের আসমা ফয়েজ বলেছেন, পিটিআই জোট সরকার গঠন করতে পারবে এমন সম্ভাবনা খুব কম। কারণ ছোট ছোট দলের সঙ্গে জোট করলেও সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা তারা পাবে না। সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/আজাদ