ঢাকা, সোমবার, ২২ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

দালালদের খপ্পরে পড়ে ইউক্রেন যুদ্ধে, ভয়াবহ অভিজ্ঞতা শোনালেন দুই ভারতীয়
অনলাইন ডেস্ক

দালালদের খপ্পরে পড়ে রুশ বাহিনীর হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে অনেক ভারতীয়দের। এদের মধ্যে আবার অনেকে হতাহতের শিকার হয়েছেন। তবে কৌশলে দেশে ফিরে আসা দু'জন শোনালেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।

গত বছরের অক্টোবর মাসে ফেসবুকে রাশিয়ায় নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি  চোখে পড়ে ভারতের কেরালা রাজ্যের বাসিন্দা ডেভিড মুথাপ্পানার। বেতন মাসে ২ লাখ ৪ হাজার রুবল।

এমন সুযোগ আসায় চাকরিতে রাজি হয়ে যান মুথাপ্পান। কয়েক সপ্তাহ বাদেই ২৩ বছর বয়সী মুথাপ্পানের জায়গা হয় ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে। সে সময় দিনগুলোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘সব জায়গায় ছিল মৃত্যু আর ধ্বংসের ছায়া।’

দিন কয়েক আগে মুথাপ্পান ও কেরালার আরেকজন ভারতে ফিরতে পেরেছেন। দেশে ফিরলেও যুদ্ধের ময়দানে থাকার দিনগুলোর কথা ভুলতে পারছেন না মুথাপ্পান।

তিনি বলেন, মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ছিল। এটা দেখে তিনি বমি করতে করতে প্রায় অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাদের নেতৃত্বে থাকা রুশ কমান্ডার তাকে চৌকিতে ফিরে যেতে বলেন।

গত মার্চ মাসে এক দল ভারতীয় মুথাপ্পানকে মস্কোয় ভারতের দূতাবাসে যেতে সহায়তা করেন। পরে দূতাবাসের সহায়তায় ভারতে ফেরেন তিনি।

একইভাবে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ভারতে ফিরতে পেরেছেন প্রিন্স সেবাস্তিয়ান। স্থানীয় এক দালালের খপ্পরে পড়ে সেবাস্তিয়ানকে যেতে হয়েছিল পূর্ব ইউক্রেনে মস্কো নিয়ন্ত্রিত লিসিচানস্ক শহরে। মাত্র তিন সপ্তাহের প্রশিক্ষণের পর তাকে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছিল।

যুদ্ধের সম্মুখসারিতে পৌঁছানোর পর কাছ থেকে ছোড়া একটি গুলি এসে সেবাস্তিয়ানের বাঁ কানের নিচে লাগে। তিনি পড়ে যান। পরে বুঝতে পারেন, শরীরের নিচে রয়েছে এক রুশ সেনার মরদেহ।

সেবাস্তিয়ান বলেন, ‘আমি বড় ধাক্কা খেয়েছিলাম। নড়াচড়া করতে পারছিলাম না। এক ঘণ্টা পর রাত নামলে আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ হলো। এতে আমার বাঁ পায়ে বেশ আঘাত পেলাম।’

সেই রাতটা একটি পরিখায় কাটান সেবাস্তিয়ান। পরদিন সকালে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। এরপর বেশ কয়েক সপ্তাহ ভর্তি থাকতে হয় হাসপাতালে। বিশ্রামের জন্য ছুটি পান এক মাস। এই সময়টাতে ভারতীয় দূতাবাসের সহায়তায় দেশে ফেরেন তিনি।

সেবাস্তিয়ান জানান, তার সঙ্গে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন আরও দুই বন্ধু। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের খোঁজখবর পাচ্ছে না তাদের পরিবারও।

দালালের খপ্পরে পড়ার গল্প জানান সেবাস্তিয়ান। ইউরোপে চাকরির খোঁজে তিনি ও তার বন্ধুরা স্থানীয় এক দালালের কাছে গিয়েছিলেন। ওই দালাল বলেছিলেন, রাশিয়ায় নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করাটা তাদের জন্য একটি ‘সুবর্ণ সুযোগ’ হবে। বেতন পাওয়া যাবে মাসে ২ লাখ রুপি। দালালের কথায় সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান তারা। এ বছরের ৪ জানুয়ারি তারা মস্কো পৌঁছান। নিজেকে অ্যালেক্স পরিচয় দেওয়া একজন ভারতীয় দালাল সেখানে তাদের স্বাগত জানিয়েছিলেন।

সে রাতটা একটি বাসায় কাটিয়েছিলেন সেবাস্তিয়ান ও তার বন্ধুরা। পরদিন এক ব্যক্তি তাদের রাশিয়ার কস্ত্রোমা শহরে একজন সেনা কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যান। সেখানে তিন বন্ধুর সঙ্গে যোগ দেন শ্রীলঙ্কার তিন নাগরিক। তারপর ছয়জনকে নিয়ে যাওয়া হয় ইউক্রেন সীমান্তের রোস্তভ অঞ্চলের একটি সামরিক ক্যাম্পে। নিয়ে নেওয়া হয় পাসপোর্ট ও মুঠোফোন। ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় তাদের প্রশিক্ষণ। কয়েক দিনের মধ্যে তারা শিখে যান, কীভাবে ট্যাংকবিধ্বংসী গ্রেনেড ব্যবহার করতে হয়। আর আহত হলে কী করতে হবে, তা-ও শেখানো হয়।

এরপর ছয়জনকে অ্যালাবিনো পলিগন নামের আরেকটি ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের টানা ১০ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেবাস্তিয়ান বলেন, ‘সেখানে আমাদের জন্য সব ধরনের অস্ত্র ছিল। সেগুলো নিয়ে খেলনার মতো মজা করা শুরু করলাম।’ তবে সে আনন্দ বেশিক্ষণ থাকেনি। যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল নিষ্ঠুর এক বাস্তবতা।

সূত্র : বিবিসি

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর