ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গে একজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাতে মোহাম্মদ সাজিদ নামে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। রাতে প্রবল বৃষ্টির কারণে কলকাতার এন্টালি এলাকায় ১০ নম্বর বিবি লেনে একটি বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। হঠাৎ ওই বাড়ির কার্নিশ ভেঙে তার মাথার উপর পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় ৫১ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। এছাড়া গাছ পড়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবায় আরও একজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ঝড়ের ল্যান্ড ফল হয়।ল্যান্ডফলের সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার। এরপর থেকেই প্রবল বর্ষণ শুরু হয় কলকাতাসহ উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে। রাত যত গড়িয়েছে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে, সেই সঙ্গে ছিল বাতাসের দাপট। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
রেমালের তাণ্ডবে গতকাল পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরসহ উপকূলবর্তী জেলা এবং গঙ্গা নদীর তীরবর্তী হাওড়া ও হুগলি জেলায় একাধিক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। কোথাও কাঁচাঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে, কোথাও বড় বড় গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। একাধিক জায়গায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার মানুষ ঘর ছাড়া। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার গোসাবাতে একাধিক গবাদি পশুরও মৃত্যু ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
কোলকাতা কর্পোরেশন বিল্ডিংয়ের ভিতরেই একটি আমগাছ ভেঙে পড়ে। একাধিক জায়গায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। কলকাতার পার্ক সার্কাস, এক্সাইড মোড়, ঠনঠনিয়া, পানিহাটি একাধিক জায়গায় পানি জমেছে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্ন পাশাপাশি কলকাতা কর্পোরেশন, উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কন্ট্রোল রুম খুলে সারারাত পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়।
রেমালের সতর্কতা হিসেবে বিমান পরিষেবা বন্ধ রাখা হয় কলকাতা বিমানবন্দরে। হাওড়া রেল স্টেশন থেকে দূরপাল্লার একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়, কিছু ট্রেনের গতিপথ বদল করা হয়। রেলের পক্ষ থেকে খোলা হয় কন্ট্রোল রুম। হাওড়া ডিভিশনের শালিমার রেল স্টেশনের ইয়ার্ডে থাকা দূরপাল্লার ট্রেনগুলি যাতে গড়িয়ে না যায়, এজন্য রেললাইনের সঙ্গে শিকল দিয়ে রেলের চাকাকে বেঁধে রাখা হয়, পাশাপাশি দুর্ঘটনা রুখতে লাগানো হয় ব্লক। দুর্যোগের প্রভাব পড়ে মেট্রো পরিষেবাতেও। কলকাতায় বিভিন্ন ফেরিঘাটে বন্ধ রাখা হয় লঞ্চ, যন্ত্রচালিত নৌকা পরিষেবা।
বিভিন্ন জায়গায় রেল লাইনের উপরে গাছ পড়েছে, সিগন্যালের পোস্ট উপরে পড়েছে, এ কারণে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল সাময়িক ব্যাহত হয়েছে। ফলে জাহিদ প্রথম দিন সোমবার চরম অসুবিধায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দরে বিমান পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দরের বাইরে ভিআইপি রোডের উপর পানি জমার কারণে গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয়েছে। একাধিক জায়গায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট পরিস্থিতি। আবার কোথাও কোথাও উল্টো ছবিও দেখা গেছে। রাস্তায় জমা পানির মধ্যেই রাস্তায় মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়ে অনেকে।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বিশ্বাস জানান, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় থেকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল সকালের মধ্যে এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে সে সময় প্রতি ঘন্টায় গতিবেগ থাকবে ৭০ কিলোমিটার। সোমবার বিকালের মধ্যেই এটি সাধারণ নিম্নচাপে পরিণত হবে। এটি ক্রমশ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগোচ্ছে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহের কাছাকাছি দিয়ে এটি পৌঁছে যাবে, উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে।
আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, সোমবার ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির সতর্কতা। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের সব থেকে বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। দু এক জায়গায় প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা।
অতিভারি বৃষ্টি হবে আজ কলকাতা হাওড়া উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান ও বীরভূম জেলায়। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। রাজ্যটির নদীয়া এবং মুর্শিদাবাদে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় দমকা ঝড়ো বাতাস বইতে পারে। উত্তর দক্ষিণ ২৪ পরগনা কলকাতা হাওড়া হুগলী বীরভূম পূর্ব বর্ধমান এই জেলাগুলোতে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় দমকা বাতাস বইতে পারে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাতেও ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিবেগে বাতাস হইতে পারে।
কোলকাতায় আজ দিনভর মেঘলা আকাশ হালকা ঝড়ো বাতাস সঙ্গে বৃষ্টি। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৬.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজও দুপুর পর্যন্ত ঘন্টায় ২০ থেকে ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা।
সোমবার বিকাল থেকে কোলকাতাসহ উপকূল সংলগ্ন এবং পশ্চিমের জেলাগুলোতে আবহাওয়ার উন্নতি। মঙ্গলবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার উন্নতি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত