ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মোদির ভোটের ফল খারাপ হওয়ায় আদানির সম্পদ কেন কমল?
অনলাইন ডেস্ক
গৌতম আদানি (বামে) ও নরেন্দ্র মোদি

মঙ্গলবার ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। এই ফল ঘোষণা দেশটির ধনকুবের গৌতম আদানির জন্য মার্কিন শর্টসেলার হিনডেনবার্গ গবেষণার আক্রমণের চেয়েও ভয়াবহ হয়েছে। কারণ, ভোটে প্রত্যাশার চেয়ে খারাপ করেছেন নরেন্দ্র মোদি। আর এতেই ফলাফল ঘোষণার পর মঙ্গলবার এক দিনেই গৌতম আদানির সম্পদ কমেছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, বুথফেরত জরিপে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি। এরপর ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানি এক দিনে যে সম্পদ হারিয়েছেন, তা যেকোনও এশীয় বিলিয়নিয়ারের জন্য একটি রেকর্ড।

আদানি গ্রুপের ১০টি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। মঙ্গলবার সব কটি কোম্পানির শেয়ারের দামে পতন ঘটে। ফলে কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন কমে ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এটা ছিল এক দিনে এই গ্রুপের শেয়ারের দামে সর্বোচ্চ পতন। এক বছরের বেশি সময় আগে হিনডেনবার্গ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পরও আদানি গ্রুপের অবস্থা এতটা খারাপ হয়নি। ওই প্রতিবেদনে ১৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার মূল্যমানের এই গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছিল।

ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস সূচকের তথ্যানুযায়ী, বাজারে মূল্য ওঠানামার কারণে এখন পর্যন্ত যারা এক দিনে সবচেয়ে বেশি সম্পদ হারিয়েছেন, সেই তালিকায় ওপরের দিকে উঠে এসেছেন গৌতম আদানি। এক দিনে তার চেয়ে বেশি সম্পদ হারিয়েছেন কেবল ইলন মাস্ক ও মার্ক জাকারবার্গ। আদানির সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারে।

গত সোমবারেই আদানি গ্রুপের বাজার মূলধন দুই হাজার কোটি বেড়েছিল। সেদিন বুথফেরত জরিপে বলা হয়েছিল যে নরেন্দ্র মোদি বিপুল ভোটে জিতবেন।

বিশ্বে খুব দ্রুত যারা সম্পদশালী হয়েছেন, গৌতম আদানি তাদের একজন। তার সম্পদের পতন এটা প্রমাণ করছে যে বিনিয়োগকারীরা গৌতম আদানিকে দেখেন এমন এক ব্যক্তি হিসেবে, যার ভাগ্য নির্ভর করে ভারতের নেতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদির অবস্থান কী হচ্ছে, তার ওপর।

গৌতম আদানির অনেক উপদেষ্টা তাকে উপদেশ দিয়েছেন যে তিনি যেন নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনও পোস্ট না দেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন একজন এ কথা জানিয়েছেন। নতুন সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত যাতে তিনি নিশ্চুপ থাকেন, সে ব্যাপারেও তাকে বলা হয়েছে।

নরেন্দ্র মোদি ও গৌতম আদানি দুজনই পশ্চিমের রাজ্য গুজরাট থেকে এসেছেন। দু’জনের উত্থান অনেকটা একই সময়ে। মোদির অগ্রাধিকার হল অবকাঠামো নির্মাণ, পরিবেশসম্মত জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও ডিজিটাল সেবা। গৌতম আদানিও এসব খাতেই বিনিয়োগ করেছেন।

মঙ্গলবার আদানির যেসব শেয়ার মূল্য হারিয়েছে, তাদের মধ্যে আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনের শেয়ারের দাম কমেছে ২১ শতাংশ। আদানি এনার্জি সলিউশন লিমিটেডের শেয়ারের দাম কমেছে ২০ শতাংশ। মূল কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটডের শেয়ারের পতন হয়েছে ২০ শতাংশ।

এক দিনে আদানি গ্রুপের শেয়ারের এটিই সবচেয়ে বড় পতন হলেও হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সার্বিকভাবে ভারতীয় এই গোষ্ঠী বেশি অর্থ হারিয়েছিল। সে সময় তাদের সম্পদ হারানোর পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। তবে সোমবার শেয়ারের মূল্য বাড়ার পর আদানি সেই হারানো সম্পদের প্রায় পুরোটাই ফিরে পেয়েছিলেন।

ভারতের এনএসই নিফটি ৫০ সূচক ৫ দশমিক ৯ শতাংশ কমে যায়। গত চার বছরে এটিই ছিল নিফটির জন্য সবচেয়ে খারাপ দিন। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, মোদির নেতৃত্বাধীন জোট অল্প ব্যবধানে জয়ী হওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে নতুন সরকারের সক্ষমতা অনেক কম হবে। সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, ব্লুমবার্গ

বিডি প্রতিদিন/একেএ



এই পাতার আরো খবর