গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৬২৬ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে আরও ৮৬ হাজার ৯৮ জন।
যুদ্ধের শুরু থেকেই গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ফলে সেখানে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এরই মধ্যে গাজার ৭৫ শতাংশ আবাদি জমি ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছে বহু শিশু। গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, এই যুদ্ধে এরই মধ্যে শুধু শিশু নিহত হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার। আরও নিঁখোজ রয়েছে ২১ হাজারের বেশি শিশু। তবু যুদ্ধ বন্ধ করছেন না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। সেই সঙ্গে গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাসের হাতে বন্দি থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদেরও ফেরত আনতে যথেষ্ঠ উদ্যোগী নন নেতানিয়াহু। যুদ্ধবিরতি নিয়েও অনীহা জানিয়েছেন তিনি।
এমতাবস্থায় ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের সাবেক এজেন্ট গোনেন বেন ইৎঝাক নেতানিয়াহুর ব্যাপক সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সমর্থক...এবং নেতানিয়াহু তার মুখে থুতু ছিটিয়েছেন। তিনি (নেতানিয়াহু) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধ্বংস করছেন।” বেন ইৎঝাক ইসরায়েলের মোডিইন শহরের বাসিন্দা। ৫৩ বছর বয়সী বেন ইৎঝাক ১৯৯০ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিনের হত্যাকাণ্ডের পর নিরাপত্তা সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ইসরায়েলের জন্য নেতানিয়াহু সত্যিই সবচেয়ে বড় হুমকি।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের সাবেক এজেন্ট ছিলেন বেন ইৎঝাক। দখলকৃত পশ্চিম তীরে হামলা ঠেকাতে ইৎঝাক হামাসের সহপ্রতিষ্ঠাতা শেখ হাসান ইউসেফের ছেলে মোসাব হাসান ইউসেফকে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে লাগিয়েছিলেন। সেই বেন ইৎঝাক এখন নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন।
তেল আবিবের একটি ওভারপাসে নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে এক বিক্ষোভে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে ইৎঝাককে।
ইৎঝাক বলেন, “বিশ্বাস করুন, দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় আমি কয়েকজন বড় সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছিলাম।”
তিনি আরও বলেন, “আমি জানি একজন সন্ত্রাসী কেমন হয়। আমার মনে হয়, নেতানিয়াহু ইসরায়েলকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।”
২০০০ থেকে ২০০৫ সালের ফিলিস্তিনের আন্দোলনকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বলেছেন ইৎঝাক।
গাজা নিয়ে হিসাব–নিকাশ বদলানোর এখনই সময় বলে মনে করেন ইৎঝাক। গাজার ক্ষমতায় মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে আনতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের আহ্বান জানান তিনি। বেন ইৎঝাক আরও বলেন, “আমি নেতানিয়াহুকে বলতে চাই...পদত্যাগ করুন। ইসরায়েলবাসীর জন্য এটা আপনার সবচেয়ে বড় সহযোগিতা হবে।”
হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলা রুখে দেওয়া সম্ভব ছিল মনে করেন বেন ইৎঝাক। ইউসেফ হামলার পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছিল বলেও জানান ইৎঝাক। তবে ইসরায়েলের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ওই সতর্কতাকে গুরুত্ব দেয়নি।
এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে বেন ইৎঝাক বলেন, “আমরা মনে করি, আমাদের শত্রুরা বোকা। কিন্তু দিনশেষে হামাস খুবই বুদ্ধিমান ছিল।” সূত্র: এএফপি, ফ্রান্স২৪
বিডি প্রতিদিন/একেএ