ঢাকা, রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পরিবেশের সুরক্ষায় পরিত্যক্ত পোশাক রিসাইক্লিং নিয়ে গবেষণা
লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

পুরনো, পরিত্যক্ত, ছিঁড়ে যাওয়া কাপড়কে (রিসাইক্লিনিংয়ের মাধ্যমে) পুনরায় ব্যবহারের ওপর গবেষণা শুরু হয়েছে। পুরনো থ্রেডগুলোকে একেবারে নতুন পোশাকে পরিণত করা প্রায় অসম্ভব মনে করা হলেও বিজ্ঞানীরা সেটিকেও সম্ভব করার জন্য কাজ করছেন। এমনকি যেসব জামাকাপড় পুড়ে যাবে অথবা গার্বেজ করা হবে-সেগুলোকে নতুন পোশাকে পরিণত অথবা দরকারি পণ্য হিসেবে পুনর্ব্যবহারের উপায় খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। 

তুলা এবং পলিয়েস্টারসহ পুরনো/পরিত্যক্ত কাপড়ের অন্যান্য উপকরণকে আবারো এক টুকরো কাপড়ে পরিণত করার গবেষণাটি খুবই জটিল ও কঠিন মনে করা হলেও তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। 

চলমান গবেষণার আলোকে ওয়াশিংটন পোস্ট ৬ জুলাই এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী চলমান সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রেও এই গবেষণার সুদূর প্রসারি সুফল আসবে মানবতার জন্য। ইউনিভার্সিটি অব দেলওয়ারের গবেষকরা নতুন এই রিসাইক্লিং টেকনিকের আলোকে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রক্রিয়াটি ১৫ মিনিট সময় নেবে এবং তুলা, পলিয়েস্টার, নাইলন, এবং স্প্যানডেক্সের যেকোন মিশ্রনকে অনুতে দ্রবিভূত করতে পারে যা নতুন কাপড় বা রং, ইলেক্ট্রনিক্স এবং টায়ারের মতো পণ্য তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। 

ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির ফ্যাশন এবং খুচরা গবেষণায় সহযোগী ক্লিনিক্যাল অধ্যাপক তাশা লুইসের মতে এ ধরনের ক্যাচাল পুনর্ব্যবহারযোগ্য কৌশলগুলো পোশাককে পরিত্যক্ত (ডাম্প) করা থেকে বিরত করতে পারে। ফ্যাশন বর্জ্যের অন্যান্য সমাধান রয়েছে যা সহজ এবং সস্তা: লোকেরা সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক কিনতে পারে এবং তাদের পোশাক দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে। গার্মেন্টস কোম্পানিগুলো পোশাককে আরো টেকসই করতে পারে এবং তা এমন উপাদান থেকে তৈরি করতে পারে যাতে সেগুলোর পুনর্ব্যবহার করা সহজ হয়। জরাজীর্ণ কাপড়গুলো টুকরো টুকরো করে ভবনে নিরোধক (ইন্স্যুলেশন) হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু যখন কোন বিকল্প থাকে না তখন রাসায়নিক দ্রব্যের সহায়তায় তাকে রিসাইক্লিং করাই শ্রেয় হতে পারে। 

অধ্যাপক লুইস বলেন, এটি অবশিষ্টাংশের জন্য চূড়ান্ত পর্যায় হবে যার অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। ফ্যাশনের দ্রুত পরিবর্তন তথা উত্থানের সাথে সঙ্গতি রেখেই পোশাক পুনর্ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা জরুরী হয়ে উঠেছে, ব্যবসায়িক মডেল যেখানে খুচরা বিক্রেতারা ক্রমাগত পরিবর্তনশীল ফ্যাশন প্রবণতার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য দ্রুত সস্তা, ক্ষীণ কাপড়কে প্রাধান্য দিচ্ছেন। গবেষণায় উদঘাটিত হয়েছে যে, সারাবিশ্বে বার্ষিক ৯২ মিলিয়ন টন জামা-কাপড় ফেলে দেওয়া হচ্ছে। পরিত্যক্ত এসব কাপড়ের ৮ ভাগের মাত্র এক ভাগ পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অবশিষ্ট কাপড়গুলো পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে বিরাজ করছে শতকের পর শতক ধরে।  

আরো জানা গেঝে, রিসাইকেল করা বেশিরভাগ জামাকাপড় ‘ডাউনসাইকেল’ হয়ে যায় অর্থাৎ সেগুলোকে একটি কম মূল্যবান উপাদানে টুকরো টুকরো করা হয় যা প্যাডিং বা নিরোধকের মতো জিনিসগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়। পুরনো কাপড়কে সংগ্রহ করে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী (রিসাইক্লিং ছাড়া) করা নিয়ে কর্মরত ‘এলেন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন’র মতে প্রকৃত অর্থে পরিত্যক্ত কাপড়ের মাত্র ১% পুনরায় মানুষ ব্যবহার করছে। 

গবেষকরা মনে করছেন, পুনর্ব্যবহারের সেই বিরল রূপটি ভবিষ্যতের জন্য অনেক পরিবেশবাদি এবং ফ্যাশন ডিজাইনারদের দৃষ্টিভঙ্গির চাবিকাঠি হতে পারে যেখানে বেশীর ভাগ কাপড় পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ থেকে তৈরী করা হতে পারে এবং একই ফাইবার নতুন পোশাকে ব্যবহার করা হবে। 

লন্ডনের রয়েল কলেজ অব আর্ট’র ম্যাটেরিয়েলস সার্কুলেটরি সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মিরিয়াম রিব্যুল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আদর্শগতভাবে যদি আমরা সমস্ত টেক্সটাইল বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করি তবে আমাদের কাছে চিরকালের জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ থাকবে এবং আমাদের নতুন উপকরণ তৈরী করার প্রয়োজন হবে না। 

উল্লেখ্য, এখন এটি খুবই স্বল্পসংখ্যক সুবিধার মধ্যে ঘটছে যা পুরনো ফ্যাব্রিক গ্রহণ করে এবং এটিকে নতুন ফাইবার এবং সুতায় পরিণত করছে। ঠিক যেমনি কাচ এবং ধাতুকে গলিয়ে নতুন পণ্যে পুনর্গঠন করা সম্ভব হচ্ছে।। পলিয়েস্টারের মত কৃত্রিম কাপড়গুলোকে প্লাস্টিকের অবয়বে গলিয়ে ফাইবারে পরিণত করা যেতে পারে। এবং যেমন কাগজকে একেবারে টুকরো টুকরা করে মন্থন করে নতুন শীট তৈরী করা হচ্ছে। তেমনই তুলোর মতো প্রাকৃতিক তন্তুগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে নতুন সুতা তৈরী করা যায়। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর