ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

হানিয়া হত্যা: দুই মাস আগে ইরানে নেওয়া হয় সেই বোমা!
অনলাইন ডেস্ক
ইসমাইল হানিয়া

বুধবার ইরানের রাজধানী তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া। এই হত্যাকাণ্ডের পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

হানিয়াকে কীভাবে হত্যা করা হল? তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে হামলার নানা ধরনের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এবার নতুন তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করল মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসমাইল হানিয়াকে বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বোমাটি দুই মাস আগে ইরানে পাচার করা হয়। 

দুই ইরানি এবং একজন মার্কিন কর্মকর্তাসহ মধ্যপ্রাচ্যের সাতজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচ কর্মকর্তার মতে, প্রায় দুই মাস আগে গেস্টহাউসে বোমাটি লুকিয়ে রাখা হয়। গেস্টহাউসটি ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পস দ্বারা পরিচালিত এবং সুরক্ষিত, যা উত্তর তেহরানের একটি উচ্চ নিরাপত্তা সম্পন্ন এলাকায় নেশাত নামে পরিচিত একটি বড় কম্পাউন্ডের অংশ। যখনই নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় যে, হানিয়া এখন গেস্টহাউসে তার কক্ষের ভিতরে আছেন, তখনই রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে দূর থেকে সেটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণে হানিয়া ছাড়াও তার একজন দেহরক্ষী নিহত হন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিস্ফোরণে ভবনটি কেঁপে ওঠে, কিছু জানালা ভেঙে যায় এবং প্রাচীরের বাইরে দিকে আংশিক ধসে যায়।

ইরানের দুই কর্মকর্তা জানান, রেভল্যুশনারি গার্ডের সদস্যরা ঘটনার বিষয়ে এবং ক্ষয়ক্ষতির এই তথ্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাথে শেয়ার করা বিল্ডিংয়ের একটি ছবিতেও এই ধরনের ক্ষতি স্পষ্ট হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের কর্মকর্তাদের মতে, তেহরান সফরের সময় বেশ কয়েকবার গেস্টহাউসে অবস্থান করেছিলেন হানিয়া।

ইরান এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। যদিও রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইসরায়েল আনুষ্ঠানিক হত্যার দায় স্বীকার করেনি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের ওই পাঁচ কর্মকর্তার মতে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা সরকারকে অবিলম্বে অভিযানের বিস্তারিত বিষয়ে অবহিত করেছেন।

বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই হত্যার ষড়যন্ত্রের কোনও আগাম জ্ঞান পায়নি।

হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে একটি জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে যে, ইসরায়েল মিসাইল হামলা চালিয়ে হানিয়াকে হত্যা করেছে, সম্ভবত ড্রোন বা বিমান থেকে ছোড়া হয়েছে, যেভাবে ইসরায়েল এপ্রিল মাসে ইসফাহানের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল।

তবে সেই ক্ষেপণাস্ত্র তত্ত্ব প্রশ্ন তুলেছে-কীভাবে ইসরায়েল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আবার ফাঁকি দিতে সক্ষম হল।

তবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, ইরানের প্রতিরক্ষা বিভাগের দুর্বলতা কাজে লাগিয়েছে ঘাতকরা। কঠোরভাবে সুরক্ষিত ওই কম্পাউন্ডের নিরাপত্তার ত্রুটির ফাঁক গলিয়ে একটি বোমা স্থাপনে সক্ষম হয় তারা। কয়েক সপ্তাহ আগেই বোমাটি সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।

তবে কীভাবে বোমাটি গেস্টহাউসে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। মধ্যপ্রাচ্যের কর্মকর্তারা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করতে কয়েক মাস সময় লেগেছে এবং কম্পাউন্ডে ব্যাপক নজরদারি প্রয়োজন হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ধরণ বর্ণনাকারী দুই ইরানি কর্মকর্তা বলেছেন, তারা জানেন না কীভাবে বা কখন বিস্ফোরকগুলো ওই কক্ষে রাখা হয়েছিল।

জানা গেছে, ইসরায়েল আগে থেকেই কাতারের বাইরে এই হত্যাকাণ্ড পরিচালানার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কেননা, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে কাতার সরকার। আর তাছাড়া হানিয়া কাতারে অবস্থান করতেন এবং হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অন্যান্য সিনিয়র সদস্যরাও সেখানে থাকেন।

ইরানিসহ মধ্যপ্রাচ্যের কর্মকর্তাদের মতে, স্থানীয় সময় বুধবার ভোররাত ২টার দিকে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়।

বিস্ফোরণের পরপরই একটি মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে তারা  হানিয়াকে তাৎক্ষণিকভাবে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা হানিয়ার দেহরক্ষীকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করলেও অনতিবিলম্বে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ইরানের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের নেতা জিয়াদ আল-নাখালাহ হানিয়ার কক্ষের পাশেই অন্য একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। তবে তার কক্ষটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এতে বোঝা যায়, হানিয়াকে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও পরিকল্পনার ভিত্তিতে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে- বিস্ফোরকগুলো হানিয়ার ওই ঢোকার অল্প কিছুক্ষণ আগে সেখানে স্থাপন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে দূর থেকে সেটির সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এক্ষেত্রে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সহায়তা নেওয়া হতে পারে। যে কৌশলে ২০২০ সালে ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যা করা হয়েছিল। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস

বিডি প্রতিদিন/একেএ



এই পাতার আরো খবর