স্বার্থ নামক মোহের আগুনের গর্ত থেকে মানুষকে বাঁচাবে কে? কে তাকে ডেকে বলবে, মানুষ! এই নর্দমাক্ত জীবন তোমার নয়। অর্থের নোংরা ডোবায় ডুবে মরার জন্য তোমাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়নি। স্বজনের মায়ায় হন্যে হয়ে ঘুরে মরাই তোমার একমাত্র কাজ নয়। প্রিয়জনের ছলনায় জীবনভর ভুলে থাকা তোমার সাজে না। জীবনের উদ্দেশ্য আরও বড়। তোমার কাজ আরও মহৎ। মানুষের কানে এই বড়র, মহানের ডাক দিয়ে যায় আজান। তাই তো আজানের প্রথম বাক্য আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আল্লাহই বড়। আল্লাহই মহীয়ান।
তুমি যার পেছনে ছুটে জীবন শেষ করছ সবই মিছে, সবই মায়া, সবই ক্ষুদ্র, সবই ধূর্ত। আসল লক্ষ্য হলো সেই মহান আল্লাহ। এ পৃথিবীর কেউ না, কিছু না, তোমার আসল আপন হলেন সেই মহান আল্লাহ, যিনি এক মুহূর্তের জন্য তোমার ওপর থেকে দয়ার চাদর তুলে নেননি। তুমি যতই তাকে ভুলে থাক তিনি কিন্তু তোমাকে ভোলেন না। আল্লাহু আকবার! সবকিছুর চেয়ে আল্লাহ বড়। আল্লাহ মহান। তিনি সর্বশক্তিমান।
জীবনের কঠিন আঘাতে জর্জরিত একজন মানুষ যখন শান্তির খোঁজে ক্লান্ত হয়ে হতাশার চোরাবালিতে হারিয়ে যেতে থাকে, আর এমন সময় তার হৃদয়কানে আজানের মধুর বাণী ‘আল্লাহু আকবার’ ভেসে আসে তখন সে যেন জীবনযুদ্ধে সফলতার নতুন মন্ত্র শুনতে পাওয়ার মতো ধড়মড়িয়ে ওঠে। সে উপলব্ধি করে হতাশার চোরাবালি থেকে কে যেন তাকে আশার সবুজ মাঠে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সে দেখতে পায় এখন ভিতর জগতে এক আল্লাহর নুরের রওশন ঝলমল করছে।
এমন সময় সে শুনতে পায় মুয়াজ্জিন বলছেন- আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহ। তখন সেও মন-প্রাণ উজাড় করে ঘোষণা করে- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া জীবনের আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। আল্লাহ ছাড়া সাধনার আর কেউ নেই। আশহাদু আন্না মুহামাদার রসুলুল্লাহ। আল্লাহকে পাওয়ার এ সাধনায় একমাত্র পথপ্রদর্শক যিনি তিনি আর কেউ নন আল্লাহর প্রেরিত রসুল মুহাম্মাদ (সা.)। তাঁকে মেনে, তাঁকে ভালোবেসেই আল্লাহকে পাওয়ার, বড়কে পাওয়ার সাধনা এগিয়ে যেতে হবে।
তাই মুয়াজ্জিনের সঙ্গে সঙ্গে মুমিন বান্দাও বলে ওঠে- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি প্রেমময় প্রভুকে পেতে চাইলে মহাপ্রেমিক হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পূর্ণ অনুসরণ করে তাঁর খাঁটি প্রেমিক হতে হবে। তবেই প্রভুকে পাওয়া যাবে। এ যেন কোরআনের সেই বাণীর প্রতিধ্বনি- আল্লাহকে ভালোবাসতে চাইলে হজরতকে ভালোবাসো আগে।
হাইয়া আলাস সালাহ। কল্যাণের পথে এসো। সালাতি জিন্দেগির পথে হাঁট। নবী (সা.) জীবনভর মানুষকে সালাতি জিন্দেগির সবক দিয়ে গেছেন। হাইয়া আলাল ফালাহ। যখন মানুষ দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত প্রভুর প্রেমে তন্ময় থাকার সাধনায় সফল হয় তখনই সে পরিপূর্ণ সার্থক হয়ে ওঠে। এদের সম্পর্কেই কোরআনে বলা হয়েছে- কাদ আফলাহাল মুমিনুন।
আল্লাজিনাহুম ফি সালাতিহিম খাশিউন। মুমিনরা সার্থক হয়ে গেছে। কারণ তারা সর্বক্ষণ সালাতি জিন্দেগির চর্চায় ব্রত রয়েছে। আল্লাহু আকবার! তারপর আবার শুরুর মতো শেষেও বান্দাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে জীবনের প্রতিমুহূর্তে প্রভুর সাধনায় তন্ময় থাকতে হবে এজন্য যে প্রভুর চেয়ে বড়, তাঁর চেয়ে মহান আর কেউ নেই। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। তিনি ছাড়া সাধনা করার, প্রেম করার, মেনে চলার আর কেউ নেই, কিচ্ছু নেই।
লেখক : খতিব, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর