সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত উপকূলীয় অঞ্চল। এ পর্যন্ত ৩৬ জনের প্রাণহানির সংবাদ পাওয়া গেছে। সিত্রাংয়ের প্রভাবে গোটা দেশের জনজীবনই স্থবির হয়ে পড়েছে। এই যে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রলয়ঙ্করী তাণ্ডব, বারবার বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত এগুলো কেন হয়? এগুলো থেকে পরিত্রাণেরই বা কী উপায়? এ বিষয়ে মানব জাতির সফলতার মৌলিক ঠিকানা ইসলামে রয়েছে কার্যকর অনন্য নির্দেশনা।
মানব জাতির ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বিপর্যয় কেন আসে? এ প্রশ্নের জবাব ১৪০০ বছর আগে আল কোরআন দিয়ে রেখেছে হৃদয়গ্রাহী ভাষায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের কৃতকর্মের ফলেই। (আল্লাহর পক্ষ থেকে বিপর্যয় এসেছে) তিনি তাদের কৃতকর্মের শাস্তির খানিকটা স্বাদ (দুনিয়াতেই) আস্বাদন করিয়ে দেন। হয়তো তারা আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে ফিরে আসে।’ (সুরা রুম, আয়াত ৪১) আয়াতের বার্তা স্পষ্ট। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা সামগ্রিক বিপর্যয়ের মৌলিক কারণ আল্লাহর অবাধ্যতা। আর বিপর্যয় থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় আল্লাহর অবাধ্যতার অন্ধকার থেকে তাঁর আনুগত্যের আলোকময় পথে ফিরে আসা। এভাবে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বিপর্যয়ের মৌলিক কারণ হিসেবে পাপাচার, সীমালঙ্ঘন তথা আল্লাহর অবাধ্যতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং পরিত্রাণের উপায় হিসেবে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার আলোকময় নির্দেশনাই প্রদত্ত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নবীজি (সা.) কী করতেন? প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে তিনি বিচলিত হয়ে পড়তেন। আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন। বেশি বেশি তওবা -ইস্তেগফার করতেন এবং সাহাবিদের তা করার নির্দেশ দিতেন। ঝড়-তুফান শুরু হলে তিনি মসজিদে চলে যেতেন। নফল নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন। এজন্য ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশেষত অতীতের সব গুনাহ ও ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে রসুল (সা.) কয়েকটি দোয়া শিখিয়েছেন। জোরে বাতাস প্রবাহিত হলে যে দোয়া পড়তে হবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা’।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর কল্যাণটাই কামনা করি। এবং আপনার কাছে এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ) মেঘের গর্জন হলে যে দোয়া পড়তে হবে : হজরত আবদুল্লাহ ইবন জুবাইর (রা.) যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং আল কোরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করতেন, ‘ইউসাব্বিহুর রাদদু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি’। অর্থ : তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা, সভয়ে। (সুরা রাদ, আয়াত ১৩) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, রসুল (সা.) মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গে এই দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা লা-তাক্বতুলনা-বিগজাবিকা ওয়া লা-তুহলিকনা-বিআ’জা-বিকা, ওয়া আ’-ফিনা-ক্বাবলা জা-লিকা’।
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদের তোমার ক্রোধের কারণে মেরে ফেলো না আর তোমার আজাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস কোরো না। বরং এর আগেই আমাদের ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নাও। (তিরমিজি) ঝড় বা বাতাস থেকে বাঁচতে যে দোয়া পড়তে হবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি’।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ট থেকে, এর ভিতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে। (বুখারি)
লেখক : খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ