ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

শয়তানের আনুগত্য ও আল্লাহর শাস্তি
মো. আমিনুল ইসলাম

শয়তান প্রতিনিয়ত আমাদের ধোঁকা দিচ্ছে, যাতে আমরা তার অনুগত হই, তার কথা মেনে চলি। ইমানদারগণের দায়িত্ব হলো শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে চলা। তা না হলে পরকালে রয়েছে ভীষণ শাস্তি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে বনি আদম, আমি কি তোমাদের নির্দেশ দিইনি যে তোমরা শয়তানের ইবাদত কর না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৬০)। এ আয়াতের মাধ্যমে শুধু মানুষ নয়, কেয়ামতের দিন জিনদেরও বলা হবে আমি কি দুনিয়াতে তোমাদের শয়তানের ইবাদত না করার আদেশ দিইনি? কাফেররা সাধারণত শয়তানের ইবাদত করত না, তারা ইবাদত করত বিভিন্ন রকমের দেব-দেবীর। যা শিরকের শামিল। যা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত অপছন্দনীয়। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রত্যেক কাজে ও অবস্থায় কারও আনুগত্য করা ও তার কথা মেনে চলাই হলো ইবাদত। শয়তানকে সিজদা করা শুধু নিষিদ্ধই নয় বরং তার আনুগত্য করা ও হুকুম মেনে চলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শয়তানের ইবাদত করার বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। মানুষ কখনো এমনভাবে কাজ করে এবং তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে তার কণ্ঠও তার সহযোগী হয় এবং তার মনও তার সঙ্গে সহযোগী হয় এবং সেই গুনাহর কাজটি সে করে এবং এমনও হয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজটি করে কিন্তু তার মন এতে সায় দেয় না। এই হচ্ছে নিছক বাইরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে শয়তানের ইবাদত। কারণ শয়তানের ওসওয়াসায় পড়ে আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজটি সে করে ফেলে। এমন অনেক লোক আছে যারা ঠাণ্ডা মাথায় অপরাধ ও অন্যায় কাজটি করে মুখে আনন্দ প্রকাশ করে। এরাই হচ্ছে ভিতর-বাইরে শয়তানের ইবাদতকারী। এরা স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য এমন সব অন্যায় কাজ করে যাতে স্ত্রী সন্তুষ্ট হয়। যা কখনোই কাম্য নয়। এদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন তাদের ধাক্কা মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের আগুনের দিকে, এটাই সে আগুন যাকে তোমরা মিথ্যা মনে করতে?’ (সুরা আত তুর, আয়াত ১৩-১৪)।

এসব মানুষ সেদিন বিচার দিবসে এসব অন্যায় অস্বীকার করতে চাইবে। আল্লাহ বলেন, ‘আজ আমি তাদের মুখের ওপর মোহর এঁটে দেব। তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং এদের পা সাক্ষ্য দেবে তাদের কৃতকর্মের।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৬৫)।

শয়তান আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে খারাপ কাজ করার ব্যাপারে প্ররোচিত করে। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করার জন্য প্রতিনিয়ত আমাদের নফসে ওসওয়াসা সৃষ্টি করে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ তোমরা আল্লাহর জমিনে যা কিছু হালাল ও পবিত্র আছে তা খাও এবং কোনো অবস্থায়ই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। অবশ্যই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন। শয়তানের কাজ হচ্ছে সে তোমাদের সব সময় পাপ ও অশ্লীল কাজের আদেশ দেবে এবং সে চাইবে যেন আল্লাহর নামে তোমরা এমন সব কথা বলতে শুরু কর যে সম্পর্কে তোমরা কিছুই জান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৬৮-১৬৯)। শয়তান আমাদের প্রতিনিয়ত তার দলভুক্ত করার জন্য চেষ্টা করে। আল্লাহ বলেন, ‘শয়তান তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে ফলে তাদের ভুলিয়ে দিয়েছে আল্লাহর স্মরণ। তারাই শয়তানের দল। জেনে রাখ শয়তানের দল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত ১৯)। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো জনপদে বা বেদুইনদের তাঁবুতে তিনজন লোক থাকার পরও যদি সেখানে সালাত কায়েম করা না হয় তবে শয়তান সেখানে প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং তুমি জামাতের সঙ্গে জীবন অতিবাহিত কর। কেননা নেকড়ে কেবল দলছুটকেই খায়।’ (আবু দাউদ, ৫৪৭)।

শয়তানের প্রধান কাজ হলো, ‘আমি অবশ্যই তাদের গোমরাহ করে দেব, আমি অবশ্যই তাদের হৃদয়ে নানা ধরনের মিথ্যা কামনা-বাসনা জাগিয়ে তুলব এবং আমি তাদের নির্দেশ দেব যেন তারা কুসংস্কারে লিপ্ত হয়ে জন্তু-জানোয়ারের কান ছিদ্র করে, আমি তাদের আরও নির্দেশ দেব তারা যেন আল্লাহতায়ালার সৃষ্টিকে বিকৃত করে দেয়। মূলত যে ব্যক্তি এ কাজ করে আল্লাহতায়ালার পরিবর্তে শয়তানকে নিজের পৃষ্ঠপোষক বানিয়ে নেবে সে এক সুস্পষ্ট ক্ষতি ও লোকসানের সম্মুখীন হবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত ১১৯)।

সুতরাং প্রতিনিয়ত শয়তানের ওসওয়াসায় পড়ে আমরা যেন পাপের কাজ থেকে নিবৃত্ত থাকতে পারি, আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন। নতুবা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে তার জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন শাস্তি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে শাস্তি থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর