ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

অনুকরণীয় আদর্শ মহানবী (সা.)
আবদুর রশিদ

রসুল (সা.) সর্বকালের সব মানুষের জন্য আদর্শ। কেমন ছিলেন আল্লাহর রসুল? ইমাম হোসাইন (রা.) একদিন আলী (রা.)-এর কাছে রসুল (সা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘তিনি হাসিমুখ, নম্র স্বভাব ও দয়ালু প্রকৃতির লোক ছিলেন; কঠোর স্বভাব ও সংকীর্ণ হৃদয়ের ছিলেন না। কথায় কথায় কলহ করতেন না, কোনো ধরনের মন্দ বাক্য কখনো উচ্চারণ করতেন না। ছিদ্রান্বেষী ও ক্ষুদ্রমনা ছিলেন না। কোনো কথা তাঁর পছন্দ না হলে তা থেকে বিরত থাকতেন। তাঁর কাছে কেউ কোনো কিছুর আবদার করলে তাকে নিরাশ করতেন না। নামঞ্জুরির কথাও প্রকাশ করতেন না। অর্থাৎ প্রকাশ্যভাবে নিষেধ বা প্রত্যাখ্যান করতেন না। কারও আবদার পূরণ করা সম্ভব না হলে নীরব থাকতেন। ফলে বিচক্ষণ ব্যক্তিরা সে নীরবতার মধ্যেই উদ্দেশ্য বুঝে নিতে পারত। তিনি নিজের জীবন থেকে তিনটি বিষয়কে সম্পূর্ণ দূর করে দিয়েছিলেন। যেমন পরস্পরে কূটতর্ক করা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা এবং লক্ষ্যহীন কোনো কিছুর পেছনে লেগে থাকা। অন্য লোকদের ক্ষেত্রেও তিনি তিনটি বিষয়ে সংযমী ছিলেন। কাউকে মন্দ বলতেন না, কাউকে দোষারোপ করতেন না এবং কারও অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অনুসন্ধানে লিপ্ত থাকতেন না। যে কথা মানুষের কল্যাণকর তা-ই বলতেন। কথোপকথনের সময় সাহাবিরা এমন নীরব ও নতশিরে তা শুনতেন মনে হতো যেন তাদের মাথায় পাখি বসে আছে। যখন তাঁর কথা বলা শেষ হতো তখন সাহাবিরা পরস্পর কথাবার্তা বলতেন। কেউ কোনো কথা বলা আরম্ভ করলে তাঁর কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি নীরবে শুনতে থাকতেন। যে কথায় মানুষ হাসত তিনিও সে কথায় মুচকি হাসতেন। যাতে মানুষ বিস্মিত হতো তিনিও তাতে বিস্মিত হতেন। বহিরাগত কোনো ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বললে তা সহ্য করতেন। লোকমুখে নিজের প্রশংসা শোনা পছন্দ করতেন না। কিন্তু যদি কেউ তাঁর অনুগ্রহ ও দানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করত তা গ্রহণ করতেন। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি তাঁর কথা বলা শেষ না করত ততক্ষণ তার মাঝে ছেদ টানতেন। তিনি অত্যন্ত উদার, সত্যবাদী ও অতিশয় নম্র স্বভাবের ছিলেন। তাঁর সাহচর্য ছিল মহত্তম। তাঁর এমন ব্যক্তিত্বপূর্ণ চেহারা ছিল যে অকস্মাৎ দেখলে অন্তর কেঁপে উঠত। কিন্তু যতই ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হতে থাকত ততই ভালোবাসা দৃঢ়তর হতো।’ রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোলে লালিত হিন্দ ইবনে আবিহাল্লা বলেন, ‘রসুলুল্লাহ নম্র স্বভাবী ছিলেন, কঠোর প্রকৃতির ছিলেন না। কারও প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করা ভালো মনে করতেন না। সামান্য বিষয়েও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। কোনো বস্তুকেই খারাপ বলতেন না। যে কোনো খাদ্যদ্রব্য সামনে হাজির করা হলে তা গ্রহণ করতেন এবং ভালোমন্দ কিছুই বলতেন না। যদি কেউ সত্যের বিরোধিতা করত তাহলে রাগান্বিত হয়ে যেতেন কিন্তু ব্যক্তিগত কাজে তার পূর্ণ সহযোগিতা করতেন। ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো তাঁর ক্রোধের উদয় হতে দেখা যায়নি এবং কারও কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি।’ আল্লাহ সব ক্ষেত্রে আমাদের রসুল (সা.)-কে অনুসরণের তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর