ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ইসলামের দৃষ্টিতে মানবাধিকার
মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন
প্রতীকী ছবি

মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় রসুল (সা.)-এর কাছে নাজিলকৃত আল কোরআনে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বিধান এসেছে। যেমন-

খাদ্য : আল কোরআনে ঘোষণা, ‘পৃথিবীর প্রতিটি জীবের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন।’ (সুরা হুদ : ৬)।

বস্ত্র : আল কোরআনের ঘোষণা, ‘হে বনি আদম, আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজসজ্জার বস্তু পরহেজগারির পোশাক। এটি উত্তম।’ (সুরা আরাফ : ২৬)।

বাসস্থান : মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার বাসস্থান। আল কোরআনের ঘোষণা, ‘আল্লাহ করে দিয়েছেন তোমাদের ঘরকে অবস্থানের জায়গা এবং চতুষ্পদ জন্তুর চামড়া দ্বারা করেছেন তোমাদের জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা।’ (সুরা আন নাহল : ৮০) অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আমি কি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা করিনি?’ (সুরা নাবা : ৬)।

শিক্ষা : কোরআনুল কারিমের ঘোষণা, ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আলাক : ১-২)।

চিকিৎসা : আল কোরআনে এসেছে, ‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি, যা রোগের জন্য ওষুধ ও মুমিনের জন্য রহমত।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৮২)।

রসুল (সা.) এই পৃথিবীর মানুষের সুচিকিৎসায় উৎসাহিত করেছেন এবং উন্নত চিকিৎসার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘তোমরা জয়তুনের তেল ব্যবহার কর, কেননা এটা কল্যাণকর বৃক্ষ।’ 

রসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাসে তিন দিন সকালে মধু খাবে তার কোনো কঠিন ব্যাধি হবে না।’ (ইবনে মাজাহ)। এমনিভাবে তিনি চিকিৎসার জন্য প্রাকৃতিক অনেক বস্তু যেমন আদা, কালিজিরা, খেজুর, দুধ ইত্যাদির উপকারিতা বর্ণনা করেছেন, যা সব মানুষের জন্য কল্যাণকর। 

নারীর কল্যাণ : আইয়ামে জাহিলিয়ায় কন্যাসন্তান জন্ম নিলে একে দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করে কখনো কখনো হত্যা বা জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়া হতো! কিন্তু রসুল (সা.) স্পষ্ট করে ঘোষণা দিলেন, কন্যাসন্তান দুর্ভাগ্যের নয় বরং সৌভাগ্যের। তাদের হত্যা করা যাবে না, অভাব-অনটন থাকা সত্ত্বেও কন্যাসন্তানকে উত্তমরূপে লালনপালন করলে তারা তার জন্য জাহান্নামের পথে আড়াল হয়ে (পিতা-মাতাকে) রক্ষা করবে। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)।

সামাজিক কল্যাণ : বিরাজমান ভেদাভেদ, পারস্পরিক বিদ্বেষ ও কলহ চিরতরে দূরীভূত করার জন্য রসুল (সা.) সর্বোৎকৃষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। যার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় তাঁর গৃহীত বিভিন্ন সামাজিক চুক্তি বিশেষ করে মদিনা সনদে।

অর্থনৈতিক কল্যাণ : মানবসভ্যতার আবহমান কাল থেকেই এ কথা স্বীকৃত যে, অর্থই মানব জীবনের অন্যতম চালিকাশক্তি। তাই এ ব্যবস্থায় অকল্যাণকর কোনো কার্যক্রম মানব জীবনে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা আনবেই! যেমন সুদ, ঘুষ, অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ ইত্যাদি। 

রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যার শরীরের মাংস হারাম খাবারে গঠিত হয়েছে, সে জাহান্নামে যাওয়ার জন্য অগ্রগণ্য।’ (বায়হাকি) মানবজীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধির উত্তম মডেল হলেন আল্লাহর হাবিব মুহাম্মদ (সা.)। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত নিজেদের জীবন আল্লাহ-প্রদত্ত কোরআন ও রসুল (সা.) -এর রেখে যাওয়া জীবনবিধানের আলোকে নিজেদের আলোকিত করা। মনুষ্যত্বের চেতনা ঊর্ধ্বে তুলে ধরা।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

 

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর