ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মৃতদের স্মরণ করার পদ্ধতি
মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি
প্রতীকী ছবি

ইসলাম একটি সর্বজনীন আদর্শ ধর্ম। এ ধর্মে রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক যাবতীয় রীতিনীতির সর্বোত্তম বিধিবিধান। মানুষ মাত্রই মরণশীল। একজন মানুষের মরণকালে এবং এর পরবর্তী ধাপে তার জন্য বিভিন্ন করণীয় রয়েছে। ইসলাম ধর্মে এসব কাজ পরম আদর্শপূর্ণ। মৃত ব্যক্তির প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের পরিচায়ক। 

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মৃত ব্যক্তিকে কাফন-দাফনের আদর্শ ব্যবস্থাপনা প্রত্যক্ষ করে বহু বিধর্মী লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। যারা ইহকাল পরিত্যাগ করেছেন তাদের স্মরণ করার নিয়ম পদ্ধতি ইসলাম ধর্মে অনেক চমৎকার। এ ধর্মে মৃত আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব ও ঘনিষ্ঠজনদের স্মরণ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। নেই নির্দিষ্ট কোনো দিবস। নেই এর জন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন। তাদের স্মরণ করা ও তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার সর্বোত্তম ব্যবস্থা হলো তাদের জন্য দোয়া করা। 

রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষ যখন মারা যায় তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল চালু থাকে। সদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে পারে এবং ওই সুসন্তান- যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম)।

মানুষ কবর জগতে খুবই অসহায় অবস্থায় থাকে। ভালোমন্দ কিছুই তার করার সুযোগ থাকে না। সুযোগ থাকে না ক্ষমা প্রার্থনা করারও। তাই কবরবাসীর জন্য দোয়া করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা তাদের সর্বোত্তম প্রাপ্য এবং মৃত ব্যক্তিকে স্মরণ করার শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। এছাড়া মৃত ব্যক্তিকে স্মরণ করার আরেকটি পদ্ধতি হলো- মাঝে মধ্যে তাদের কবর জিয়ারত করা। কবর জিয়ারত করা একটি মানবিক কাজ এবং মানবতার দাবি। কবর জিয়ারতের মূল উদ্দেশ্য হলো- তাদের জন্য নেক আমল পৌঁছানো এবং মাগফিরাত ও কল্যাণের দোয়া করা। 

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি আগে তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, তবে এখন থেকে অবশ্যই তোমরা কবর জিয়ারত কর, কেননা তা অবশ্যই অন্তরকে বিনম্র করে, চোখে অশ্রু প্রবাহিত করে এবং পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (মুসতাদরাক, হাকেম)।

মৃত ব্যক্তিকে স্মরণ করার একটি পদ্ধতি হলো- তাঁর গুণাগুণ, অবদান ও স্মৃতিবিজড়িত সৎকর্ম আলোচনা করা। 

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কর্মগুলো আলোচনা কর এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাক।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)।

এ হাদিসটির সনদে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। তবে সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর একটি উক্তি বিষয়টিকে সমর্থন করে। তিনি বলেন, ‘যার প্রতি মুসলমানদের ভালো ধারণা রয়েছে তিনি আল্লাহর কাছে উত্তম ব্যক্তি।’ (আহমদ, হাসান)।

মৃত আত্মীয়স্বজন বিশেষভাবে মাতা-পিতার ঋণ ও অসিয়ত পুরো করা, তাদের মাগফিরাত কামনা করা, প্রতিনিয়ত তাদের জন্য দোয়া করা, তাদের আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, সাধ্য হলে তাদের জন্য হজ-ওমরাহ পালন করা, নফল নামাজ, রোজা, কোরবানি, ইতিকাফ,  তেলাওয়াত, জিকির আদায় করে সওয়াব প্রেরণ করা, হজ অনাদায় থাকলে সামর্থ্য হলে তা আদায় করা, নিজেরা সৎভাবে চলা, ইবাদত বন্দেগি ও সমাজসেবায় নিবেদিত থাকা ইত্যাদি মৃত ব্যক্তিকে উপকৃত করার সর্বোত্তম পদ্ধতি; তাদের স্মরণ করার চমৎকার পন্থা। 

মৃত ব্যক্তির অধিকার ও জীবিতদের অন্যতম করণীয়। আমাদের মৃত আত্মীয় এবং আপনজনদের স্মরণে রাখা ইসলাম ধর্মের অন্যতম একটি আদর্শ। মানবতার পরম শিক্ষা। অতএব ইসলামের রীতিনীতি অনুযায়ী তাদের নিয়মিত স্মরণ করতে হবে। অবশ্য এর জন্য সভা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের কোনো প্রয়োজন নেই। নেই কোনো আনুষ্ঠানিকতার বিধান। প্রয়োজন নিষ্ঠা ও বিশুদ্ধ নিয়মনীতি অবলম্বন করা।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর