ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কাছে ঘেঁষতে দিও না হতাশা
মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী
প্রতীকী ছবি

আল্লাহতায়ালা আমাদের দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন আখেরাতের সদাই কিনে নেওয়ার জন্য। আরাম-আয়েশ আর ভোগবিলাসের জন্য আমাদের দুনিয়ায় পাঠানো হয়নি। ক্ষণিকের দুনিয়া তাই দুঃখকষ্ট, হাসিকান্নার নানা আয়োজন দিয়ে সাজিয়েছেন আল্লাহ। যখন আমরা আনন্দে থাকি তখন মনের ভাব থাকে একরকম। মনে হয় এ দুনিয়ার জীবনই একমাত্র জীবন। কখনো আমাদের মরতে হবে না। আবার সময়ের পালাক্রমে যখন দুঃখ এসে হানা দেয় জীবনের আঙিনায়, তখন কিন্তু আমাদের মনের অবস্থা খুব করুণ হয়ে যায়। মনে হয় বেঁচে থাকাটাই বৃথা। কোনোভাবে যদি জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া যেত তাহলে এরকম দিন আর দেখতে হতো না।

নানা কারণেই মানুষ হতাশায় ভুগতে পারে। বিপদে যদি কেউ ধৈর্যধারণ করতে না পারে তখন দেখা যায় সামান্য সংকটেই সে ভেঙে পড়ে। নিজের জীবন নিয়ে কিংবা জীবনের কোনো দিক নিয়ে যখন কেউ নিজ সামর্থ্যরে বিবেচনা না করে অনেক উঁচু স্বপ্ন দেখতে থাকে, এর পরিণতিতেও সে হতাশ হতে পারে। আসলে এ দুনিয়ায় কেউই পরিপূর্ণ সুখী নয়। এখানে যে সবচেয়ে সুখী তাকেও কখনো-সখনো দুঃখ পেতে হয়; যে সবচেয়ে সুস্থ তাকেও সময়ের পালাবদলে অসুস্থ হতে হয়। এখানে সুখের পাশে আছে দুঃখ, সুস্থতার পাশে অসুস্থতা, হাসির সঙ্গে মিশে আছে কান্না। 

মুমিনের জীবন যেহেতু এখানেই শেষ নয় তাই এই ক্ষণিকের হাসিকান্না তার কাছে বড় বিষয় নয়। সে যখন আনন্দে থাকে তখনো শোকরিয়া করে আবার যখন দুঃখ পায় তখনো সবর ও ইস্তেগফারের সুরতে শোকরিয়ার চর্চা জারি রাখে। যেমন হজরত ইয়াকুব নবীর উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। সেই বহু বছর আগে হারিয়েছেন নিজের প্রিয়তম পুত্র ইউসুফকে। তাঁর বিয়োগে বিরহ যন্ত্রণায় কতটা কাতর ছিলেন তিনি তা পবিত্র কোরআনের পাতায় আঁকা রয়েছে। পাশাপাশি এ কথাও আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, সন্তান হারানোর মতো বেদনা তাঁকে সবর ও ইস্তেগফারের সিঁড়ি বেয়ে আরও উঁচুস্তরে নিয়ে গেছে। 

কোরআনের ভাষায়, ‘ইয়াকুব ওদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, ‘আফসোস! ইউসুফের জন্য!’ অন্তর্যন্ত্রণা আর চাপা জমাট দুঃখ-শোকে তাঁর চোখ সাদা হয়ে গিয়েছিল। পুত্ররা বলল, ‘আল্লাহর শপথ! নির্জীব নিস্তেজ বা মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আপনি ইউসুফের কথা ভুলবেন না।’ ইয়াকুব বলল, ‘আমি আমার শোক ও দুঃখের নালিশ শুধু আল্লাহর কাছেই করছি। কারণ আমি আল্লাহর কাছ থেকে এমন কিছু জেনেছি, যা তোমরা জানো না। তাই, হে আমার সন্তানরা! তোমরা যাও এবং ইউসুফ ও তার ভাইয়ের খবর আনার চেষ্টা করো। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হোয়ো না। কারণ সত্য অস্বীকারকারী ছাড়া আল্লাহর রহমত সম্পর্কে কেউই নিরাশ হয় না।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত ৮৪-৮৭)।

ইয়াকুব নবীর দুঃখবোধ আমাদের একটি শিক্ষাই দিচ্ছে, হে দুনিয়ার হতাশাগ্রস্ত মানুষ! রাতের শেষে যেমন ভোর আসে, তেমন দুঃখের পর সুখ আছে। কাজেই কোনো দুঃখে মুষড়ে পড়া তোমার সাজে না। তুমি যত বড় পাপীই হওনা কেন, আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ তোমার ডাকে সাড়া দেবেনই। তুমি যত দুঃখকষ্টের মধ্যেই থাকো না কেন, আল্লাহকে স্মরণ করো; নিশ্চয় তিনি তোমার ডাকে সাড়া দেবেন। এটা আল্লাহর ওয়াদা, তিনি ওয়াদার বরখেলাফ করেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তিনি অসহায়ের ডাকে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং তিনি মানুষের বিপদাপদ দূর করে দেন।’ (সুরা নামল, আয়াত ৬২।)

আমরা অনেক সময় হতাশ হয়ে ভাবি, আল্লাহ আমার ওপর এত বড় বিপদ কেন দিল? আমি কী এমন পাপ করেছি? এত দুঃখকষ্ট কেন আমার? এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে। মূলত আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের দুঃখকষ্টের মাধ্যমে পরীক্ষা নেন। আজ আমার ওপর যে বিপদ এসেছে তা আল্লাহর অজানা নয় এবং তাঁর অনুমতি নিয়েই এসেছে। এটা হয় আল্লাহর পরীক্ষা নয়তো আমাকে আগামী দিনের সুখবরের জন্য প্রস্তুত করার ট্রেনিং। 

যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও, যাদের ওপর কোনো মুসিবত এলে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন; নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৫-১৫৬)

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর