ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মহান আল্লাহর কাছে গর্ভবতী নারীর পুরস্কার ও আমল
শরিফ আহমাদ
প্রতীকী ছবি

একজন গর্ভবতী প্রথম মাস থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত বর্ণনাতীত কষ্ট ও যন্ত্রণা ভোগ করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতা সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছি, (কেননা) তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় ‌দুই বছরে। তুমি শোকর আদায় করো আমার এবং তোমার পিতা-মাতার।

আমারই কাছে তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে।‌’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১৪) গর্ভকালীন নারীর যত্নের প্রতি পরিবারের সবাইকে সচেতন হতে হয় । পুষ্টিকর খাবার দিতে হয়। অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়।

আর এ ক্ষেত্রে পুরুষকে বড় ভূমিকা পালন করতে হয়। সন্তানের গঠন-আকৃতি নিয়ে সমাজে অনেক প্রচলিত ভুল বিশ্বাস আছে। এগুলো পালন থেকে নারীদের বিরত হওয়া উচিত।

গর্ভকালীন নামাজের নিয়ম

গর্ভাবস্থায় নারীর শারীরিক গঠন পরিবর্তন হয়ে যায়। সুস্থ নারীর মতো নামাজ পড়তে গেলে পেটে চাপ অনুভূত হয়। এ জন্য গর্ভবতী অসুস্থ ব্যক্তির মতো নামাজ আদায় করবে। দাঁড়িয়ে সম্ভব না হলে বসে ইশারায় নামাজ আদায় করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে অক্ষম সে বসে বসে রুকু-সিজদা আদায় করে নামাজ পড়বে। যে ব্যক্তি বসে রুকু-সিজদা করবে সে রুকু থেকে সিজদায় সামান্য বেশি ঝুঁকবে।

অন্যথায় নামাজ শুদ্ধ হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৬) ঝুঁকে সিজদা করার সময় বালিশ বা টেবিলের ওপর সিজদা করার কোনো প্রয়োজন নেই।

গর্ভবতীর আমল

গর্ভবতীর জন্য ইসলামে নির্ধারিত বিশেষ কোনো আমল নেই। অন্য সময়ের আমলগুলোই এ সময় প্রযোজ্য। তবে ইস্তিগফার ও দোয়ার আমল বেশি বেশি করা উত্তম। মায়ের আমলের প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে। সুসন্তান লাভের জন্য এই দোয়াটি পাঠ করা যায় : 

‘রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা জুররিয়্যাতান তাইয়্যিবাতান ইন্নাকা সামিউদ্দুয়া।’

অর্থ : হে আমার পালনকর্তা! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পূত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৮)

স্বাভাবিক প্রসবের আমল

স্বাভাবিক প্রসবের প্রচলিত পদ্ধতি আল্লাহ প্রদত্ত। যুগে যুগে এভাবেই সন্তানরা পৃথিবীতে এসেছে। এটাই কল্যাণকর। তবে এর জন্য হাদিসে নির্ধারিত কোনো আমলের কথা বর্ণিত হয়নি। কিছু গবেষক ও বুজুর্গ আলেম নির্ধারিত কিছু আয়াতের উপকারিতা পেয়েছেন। সেগুলো পাঠ বা আমল করা যায়। এ ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ হলো মূল বিষয়। নির্ধারিত সময় হলেই সন্তান দুনিয়ায় আসে।

সন্তান প্রসবের সময় কোনো নারীর ইন্তেকাল হলে সে শহীদ বলে গণ্য হয়। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া ছাড়াও আরো সাত ধরনের শহীদ আছে। ১. মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ২. পানিতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ৩. পক্ষাঘাতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ৪. পেটের রোগের কারণে (কলেরা, ডায়রিয়া ইত্যাদিতে) মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ৫. অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ৬. কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। এবং ৭. যে নারী গর্ভাবস্থায় মারা যায় সেও‌ শহীদ। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১১)

গর্ভবতীর পুরস্কার

একজন গর্ভবতীর জন্য মহান আল্লাহ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। কষ্টের কারণে সে অফুরন্ত সওয়াব পায়। রাসুল (সা.) নারী সাহাবি সালামা (রা.)-কে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এতে খুশি নয় যে সে এখন স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী হয় এবং স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্টও থাকে? তখন (এই গর্ভকালীন) সে আল্লাহর পথে সর্বদা রোজা পালনকারী ও সারা রাত নফল ইবাদতকারীর মতো সওয়াব পাবে। তার যখন প্রসবব্যথা শুরু হয়, তখন তার জন্য নয়ন শীতলকারী কী কী নিয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান-জমিনের কোনো অধিবাসী জানে না। সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোঁটার পরিবর্তে একটি করে নেকি দেওয়া হয়। এই সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে (অসুখ ইত্যাদির কারণে বিরক্ত করে মাকে ঘুমাতে না দেয়) তাহলে সে আল্লাহর পথে নিখুঁত ৭০টি দাস আজাদ করার সওয়াব পাবে। (তাবরানি, হাদিস : ৬৯০৮, আবু নুআইম, হাদিস : ৭০৮৯)

গর্ভাবস্থায় নারীদের গুনাহমুক্ত জীবন যাপন করা উচিত। নিয়মিত আমল করা উচিত। মহান আল্লাহ সব নারীকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত



এই পাতার আরো খবর