ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মুমিনের সাহস ও হিম্মত
উম্মে আহমাদ ফারজানা

মুমিনরা সৎ সাহসী হয়—এটা ইসলামের শিক্ষা। মুমিন ঈর্ষণীয় সাহস ও হিম্মতের অধিকারী হয়। কেননা, মুমিনের জীবন ও সম্পদ আল্লাহর জন্য উৎসর্গকৃত। আর এর জন্য দরকার সৎ সাহস ও হিম্মত।

আল্লাহর পথে নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য সৎ সাহস থাকা আবশ্যক। খাঁটি মুমিনের পরিচয় দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও আখিরাতে এবং সালাত কায়েম করে ও জাকাত দেয়। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১৮)

ভীরু-কাপুরুষরা তাওহিদের কলেমা সাহসী কণ্ঠে উচ্চারণ করতে পারে না এবং সমাজের বুকে থেকে শিরক-বিদআতের শিকড় উপড়াতে সক্ষম হয় না। যুগে যুগে সাহসী বীর মুজাহিদিনের মাধ্যমে ইসলাম বিজয়ী হয়েছে। সমাজের বুক থেকে অন্যায়-অবিচার অপসৃত হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সাহসী পুরুষ।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন,  ‘নবী (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন এবং সর্বাপেক্ষা সাহসী ও দানশীল।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮২০)

এমনকি তিনি সাহাবায়ে কেরামের কাছ থেকে এই মর্মে বায়আত নিয়েছেন যে তারা যেন হক কথা বলতে ভয় না পায় এবং জান্নাতের রাজপথে বীরদর্পে চলতে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে। উবাদাহ ইবনে সামেত (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বায়আত গ্রহণ করেছিলাম। তন্মধ্যে অন্যতম বায়আত ছিল এই যে—আমরা যেখানেই থাকি না কেন, হকের ওপর সুদৃঢ় থাকব বা হক কথা বলব। আর আল্লাহর পথে চলতে কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে আমরা পরওয়া করব না।’ (বুখারি, হাদিস : ৭২০০)

হককথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ। নবী (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম জিহাদ হলো অত্যাচারী শাসকের সামনে ইনসাফপূর্ণ কথা বলা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৭৪)

যুগ-যুগান্তরে সাহসী, উদ্যমী ও নির্ভীক মানুষের মাধ্যমে মহান আল্লাহ দ্বিন-ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। তাই ভীরুতা ও কাপুরুষতা পরিহার করে সাহসিকতার গুণ অর্জন করা খুবই জরুরি। কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে আপতিত বিবিধ পরীক্ষা, জিহাদ ও ত্যাগ স্বীকারের পথে শয়তান সর্বদা মানুষকে প্ররোচনা দেয়। শয়তানের এই কুমন্ত্রণাকে সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। যেমন ইবরাহিম (আ.) যখন তার প্রাণাধিক পুত্রকে জবেহ করতে উদ্যত হন, তখন শয়তান তাকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তিনি সাহসী পদক্ষেপে শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করেছিলেন। ফলে আল্লাহর নামে স্বীয় পুত্রকে উৎসর্গ করে তিনি সফল হয়েছেন।

মুসলমানদের এই সাহসিকতার মূল উৎস হলো তাদের ঈমানি শক্তি। কাফির-মুশরিকরা এই ঈমানি শক্তিকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। কেননা মুসলমানদের কাছে সংখ্যার আধিক্য বিজয়ের মাপকাঠি নয়; বরং দৃঢ় ঈমান, আত্মত্যাগের সৎসাহস ও আল্লাহর ওপর একান্ত নির্ভরশীলতাই তাদের বিজয়ের মূল হাতিয়ার। সুতরাং ভীরুতা ও কাপুরুষতা পরিহার করে সাহসিকতার গুণ অর্জন করা জরুরি। কাজেই মুমিনের করণীয় হলো, দ্বিনি বিষয়ে সৎ সাহসী হওয়া এবং সব ধরনের ভীরুতা ও কাপুরুষতা পরিহার করা।

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর