ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ইসলামী সংস্কৃতি ইসলামী চেতনার সহায়ক
মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

মানুষের জীবনযাত্রার রূপ ও পদ্ধতির নাম সংস্কৃতি। কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর চিন্তাভাবনা, ধর্মীয় বিশ্বাস, আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, পানাহার, চলাফেরা, খেলাধুলা, বিনোদন, ভাষা ও সাহিত্যচর্চা ইত্যাদির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় সংস্কৃতি। এক কথায় সংস্কৃতি মানে মানবজীবনের পথ বা চলার পদ্ধতি। সংস্কৃতি মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সুশৃঙ্খল সমাজ গঠন ও নির্মল শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সুস্থ সংস্কৃতি অতি জরুরি বিষয়। আদর্শ সংস্কৃতি একটি জাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে উপনীত করতে পারে। পক্ষান্তরে অপসংস্কৃতি ঠেলে দিতে পারে ভয়াবহ পরিণতির দিকে। যা মানুষের সুস্থ পরিবেশ বিধ্বস্ত করে এবং সুপ্ত প্রতিভাকে বিকৃত করে, তা-ই হচ্ছে অপসংস্কৃতি। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) একটি জাহেলি বর্বর জাতিকে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে উদ্ধর করেছিলেন। যে সমাজ ইসলামী সংস্কৃতি অনুসরণ করবে তা বরাবরই শান্তি, শৃঙ্খলার উদাহরণ হয়ে থাকবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, আর তোমরা সেই অনুদানের কথা স্মরণ কর যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন, তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে তোমরা এখন তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা তো অগ্নিকান্ডের প্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন। (সুরা আলে ইমরান-১০৩)। ইসলাম পৃথিবীতে নিছক রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধনের জন্যই আসেনি। ইসলাম এসেছে মানুষের চিন্তা-চেতনা মননশীলতা, আচার-আচরণ ও যাবতীয় কাজকর্ম পরিশুদ্ধ করার জন্য। আর এটাই প্রকৃত সাংস্কৃতিক বিপ্লব। পরিপূর্ণভাবে ইসলামী সংস্কৃতি অবলম্বন মানেই ইসলামকে পূর্ণাঙ্গভাবে আঁকড়ে ধরা। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।’ সুরা আল বাকারা-২০৮)।

ইসলামী সংস্কৃতির মূল লক্ষ্য মানুষের চূড়ান্ত সাফল্যের পথ প্রদর্শন করা, সমাজে সততা ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করা। মহান প্রভু এবং তাঁর রসুলের (সা.) অধিকার ও মানুষের যথাযথ মর্যাদা সমুন্নত করা। এ সংস্কৃতি সব মানবজাতিকে ইহ ও পরকালের মুক্তি দিতে পারে। উদ্ধার করতে পারে অশান্তির দাবানল থেকে। বিকৃত সংস্কৃতির আরেক নাম অপসংস্কৃতি। ইসলামী সংস্কৃতি যেভাবে উন্নতির পথ দেখাতে পারে, আদর্শের দিকে নিয়ে যেতে পারে, সুসংহত করতে পারে, আলোর দিশা দিতে পারে, তেমনি অপসংস্কৃতি মানুষকে সমূলে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই সংস্কৃতি যদি মানবতা ও নৈতিকতা বিবর্জিত হয় এবং ধর্মীয় নীতির অনুকূলে না হয়, কোনো মুসলমান তা অনুসরণ করতে পারে না। প্রতিটি মুসলমানের শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি হবে ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে। কোরআন সুন্নাহবহির্ভূত কোনো সংস্কৃতি ইসলামী সংস্কৃতি বলা যাবে না। ইসলামের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে মানুষ তার আচার-ব্যবহার, দেহ, মন ও আত্মাকে যেভাবে সংস্কার ও সংশোধন করে, এটাই ইসলামী সংস্কৃতি। ইসলামী সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হলো কোরআন-সুন্নাহ। অতএব কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থি যা কিছু হয় সবই মুসলমানদের জন্য অপসংস্কৃতি। খোদা প্রদত্ত আদর্শ চর্চা করাই সর্বোত্তম সাংস্কৃতিক মননশীলতা। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহর রং অপেক্ষা অধিক উত্তম রঙিন কে? আর আমরা তাঁরই ইবাদতকারী। (সুরা আল বাকারা-১৩৮)।

রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের অনুসরণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত।’ (আবু দাউদ  ৩৯৮৯)। আমাদের সংস্কৃতি আমাদের জীবন চেতনা, আমাদের নৈতিক আদর্শ, আমাদের ধর্মীয় চেতনা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ। তাই অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর ভিনদেশি এবং বিজাতীয় অপসংস্কৃতি থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের রক্ষা করা বর্তমানে ইমানি দায়িত্ব।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর