ঢাকা, শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বিসমিল্লাহ বলে প্রতিটি ভালো কাজের সূচনা
মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পবিত্র কোরআনুল কারিমের একটি বরকতময় আয়াত। আল্লাহর দুটি গুণবাচক নামসহ তিনটি নামের সংবলিত এই পবিত্র বরকতময় বাক্যটি সুরা তওবা ছাড়া  কোরআনুল কারিমের সব সুরার শুরুতেই আছে। তাছাড়া এটি  কোরআনের স্বতন্ত্র আয়াত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি নাজিলকৃত প্রতিটি সুরার শেষ বুঝতে পারতেন, যখন বিসমিল্লাহ নাজিল করা হতো (আবু দাউদ)। প্রতিটি ভালো কাজের শুরুতে এ বাক্যটি উচ্চারণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি এমন ফজিলতপূর্ণ আয়াত, যা পাঠ করার মাধ্যমে ওই কাজে বরকত ও পূর্ণতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : প্রত্যেক এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি, তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, (মুসনাদে আহমাদ)। তাই কল্যাণ ও পূর্ণতার জন্য মুমিনের প্রতিটি ভালো কাজের প্রারম্ভিক আমল এই বিসমিল্লাহ হওয়া উচিত। মূলত এই আমলের মাধ্যমে মুমিন বান্দা তার কাজের ব্যাপারে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন। কেননা বিসমিল্লাহ এমন একটি শক্তিশালী আমল, যার মাধ্যমে শয়তানের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, অকল্যাণ ও অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। খাওয়া-দাওয়াসহ যে কোনো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হলে, সেই কাজে শয়তানের অংশীদারি থাকে না। নবীজি ইরশাদ করেন : যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাবারে শয়তানের অংশ থাকে। সেই খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তানও ভক্ষণ করে (মুসলিম)। হজরত হুজাইফা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, শয়তান ওই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল মনে করে, যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না (আবু দাউদ)। হজরত জাবির (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বিসমিল্লাহ বলে তুমি তোমার দরজা বন্ধ কর, কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। বিসমিল্লাহ বলে বাতি নিভিয়ে দাও, বিসমিল্লাহ বলে পানির পাত্র ঢেকে রাখ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) বলেন- রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি খাদ্য খাবে, সে যেন বিসমিল্লাহ বলে খায়, যদি বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তাহলে সে যেন বলে বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু (আবু দাউদ ইবনে মাজা)। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যদি কোনো ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ আল্লাহ তখন তাকে শয়তানের সব অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করেন। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রথম ওহি নাজিলের সময় এ উত্তম বাক্য পড়ানো হয়েছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন জিবরাইল (আ.) সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে জিবরাইল বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনি আশ্রয় প্রার্থনা করুন। মুহাম্মদ (সা.) বললেন, আমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। জিবরাইল (আ.) বললেন, হে নবী আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (তাফসিরে ইবনে কাসির)। দাওয়াত নামা, পোস্টার-ব্যানারে যা নির্ধারিত সময়ের পর কোনো প্রয়োজন হয় না, আবার প্রয়োজন শেষে পথে-ঘাটে ও নর্দমায় পড়ে থাকে, বরকত লাভের আশায় তাতে বিসমিল্লাহ লিখে রেখে আমরা কোরআনের আয়াতের অমর্যাদা করছি। তাই এগুলোতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আরবি ও বাংলায় কোনোভাবেই লিখে রাখা উচিত নয়। চিঠিপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখার শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখা সুন্নত। অনেকেই বিসমিল্লাহর পরিবর্তে ৭৮৬ লিখে থাকেন, এর কোনো গ্রহণযোগ্য ভিত্তি নেই। এতে বিসমিল্লাহর বরকত ও ফজিলত কিছুই পাওয়া যাবে না, এ রীতি পরিহার করা উচিত। কোথাও কোথাও বিসমিহি তায়ালা লেখা পাওয়া যায়, এতে আল্লাহর নাম স্মরণ করার সওয়াব পাওয়া যাবে, তবে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখার স্বতন্ত্র সুন্নত আদায় হবে না। আল্লাহ আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : ইমাম ও খতিব; কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণ খান, ঢাকা

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর