ঢাকা, শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

রমজান ঈসালে সওয়াবের মৌসুম
শরিফ আহমাদ

রমজান রহমত, বরকত আর মাগফিরাতের মহিমায় সমুজ্জ্বল। রমজানে প্রতিটি আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। এ জন্য জীবিত আত্মীয়-স্বজনের কর্তব্য হলো, মৃতদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে ঈসালে সওয়াব করা। এর ফলে আল্লাহপাক তাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন।

মর্যাদা উঁচু করে দেবেন এবং মাটির বাড়ি শান্তি-সুখের সৌরভে ভরে তুলবেন। এসংক্রান্ত কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো—

ঈসালে সওয়াবের গুরুত্ব

ঈসালে সওয়াব কোরআন-হাদিস থেকে প্রমাণিত। এর দ্বারা কবরবাসীদের হক আদায় করা যায়। ঈসালে সওয়াব দ্বারা আমলকারীর সওয়াব কমে না; বরং আল্লাহপাক নিজ অনুগ্রহে আমলকারী ও কবরবাসীদের সবাইকেই পরিপূর্ণ সওয়াব দান করেন।

রমজানে কবরের আজাব বন্ধ থাকে—এই ধারণা থেকে ঈসালে সওয়াব বা কবর জিয়ারত করা থেকে দূরে থাকা অনুচিত। কেননা রমজানে সবার কবরের আজাব মাফ হওয়ার বিষয়ে কোরআন-হাদিসের কোনো স্পষ্ট বক্তব্য নেই। তবে রোজা অবস্থায় ইন্তেকাল হওয়া সৌভাগ্যের আলামত। হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে এক দিন রোজা রাখে এবং রোজা হয় তার জীবনের শেষ আমল (অর্থাৎ রোজাদার অবস্থায় তার ইন্তেকাল হয়), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

(মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩৩২৪; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, হাদিস : ১১৯৩৫) ঈসালে সওয়াবের পদ্ধতি

দান-সদকার মাধ্যমে ঈসালে সওয়াব করা উত্তম। এটা অনেক ফজিলত ও সওয়াবের কাজ। গরিব-দুঃখীদের খাদ্যসামগ্রী কিনে দেওয়া কিংবা রান্না করে খাওয়ানো জায়েজ। এজন্য বিশেষ কোনো দিন-তারিখ নির্ধারণ করা ঠিক নয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমার আম্মা হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন।

(কিছু বলে যেতে পারেননি) আমার ধারণা, তিনি যদি কিছু বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে আমাকে তাঁর নামে সদকা করতে বলতেন। তো আমি যদি তাঁর নামে সদকা করি তাহলে কি এর সওয়াব তিনি পাবেন? রাসুল (সা.) বলেন, হ্যাঁ।

(বুখারি, হাদিস : ১৩০৫; মুসলিম, হাদিস : ২১৯৮)

রমজানে আত্মীয়-স্বজনের দানের হাত প্রসারিত করার মাধ্যমে কবরবাসীদের আজাব মাফ হয়। ওকবা ইবনে আমির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বর্ণনা করেন, দান-সদকা কবরের বাসিন্দাদের থেকে আগুনের প্রচণ্ডতা দূর করে। আর মুমিন ব্যক্তি কিয়ামতের দিন স্বীয় দানের ছায়ায় আশ্রয় নেবে। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৩৪৭)

  ঈসালে সওয়াবের আদব

যেকোনো নেক কাজের ঈসালে সাওয়াব করা জায়েজ। এ ক্ষেত্রে আদব হলো কোরআনের ফজিলতপূর্ণ সুরাগুলো প্রথমে পাঠ করা। দরুদ শরিফ পাঠ করে অতঃপর দোয়া করা। আরো বিশেষ তিনটি ইবাদতের মাধ্যমে ঈসালে সওয়াব করা যায়—

এক. হজের মাধ্যমে ঈসালে সওয়াব করা।‌ বুরায়দা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক মহিলা এসে জিজ্ঞেস করল, আমার মা হজ না করে ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে হজ করতে পারব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তুমি তাঁর পক্ষ থেকে হজ করো। (মুসলিম, হাদিস : ১১৪৯)

দুই. কোরবানির মাধ্যমে ঈসালে সওয়াব করা। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এক শিংবিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করেছেন এবং বলেছেন, এটা আমার পক্ষ থেকে এবং আমার যেসব উম্মত কোরবানি করতে অক্ষম তাদের পক্ষ থেকে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১১০৫১)

তিন. নফল বা কাজা রোজা রাখার মাধ্যমে ঈসালে সওয়াব করা যায়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আমার মা মারা গেছেন, কিন্তু তাঁর জিম্মায় এক মাসে রোজা ছিল। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে কাজা করতে পারব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আল্লাহর ঋণই অধিকতর পরিশোধযোগ্য।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর