ঢাকা, শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

রমজানে জাকাত আদায় করুন
মো. আমিনুল ইসলাম
প্রতীকী ছবি

জাকাত একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো পবিত্রতা, শুদ্ধতা বা প্রাচুর্যময়তা। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে- সারা বছর নিজের ও পরিবারের যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে কোনো মুসলমানের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ অর্থাৎ যদি কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বাহান্ন তোলা রৌপ্য অথবা সমমূল্যের নগদ অর্থ বা ব্যবসা পণ্য থাকে তবে তার সম্পদের শতকরা আড়াই শতাংশ হিসাবে আল্লাহর নির্ধারিত খাতে গরিব, মিসকিন ও অসহায় গরিবদের মধ্যে বণ্টন করতে হয়। সুচারুভাবে এ বণ্টনই হলো জাকাত। 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘সদাকা (জাকাত) হচ্ছে, ফকির মিসকিনদের জন্য, এর ব্যবস্থাপনার ওপর নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, যাদের অন্তকরণ (দীনের প্রতি) অনুরাগী (করা প্রয়োজন) তাদের জন্য, গোলামি থেকে আজাদ করার মধ্যে, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণমুক্তির মধ্যে, আল্লাহতায়ালার পথে ও মুসাফিরদের জন্য (এ সদাকার অর্থ ব্যয় করা হবে)। এটা আল্লাহতায়ালার নির্ধারিত ফরজ, আল্লাহতায়ালা বিজ্ঞ, কুশলী।’ (সুরা তওবা, আয়াত ৬০)। সুতরাং এ আয়াতের মধ্যে পরিষ্কারভাবে জানা গেল কারা জাকাত পাওয়ার উপযোগী এবং কাদেরকে জাকাত দিতে হবে।

দান, সদকা, জাকাত একজন মুসলমানের সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে যেমন নামাজের মাধ্যমে একজন মুমিন তাকে পরিশুদ্ধ করে তোলে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, সালাত কায়েম করেছে, জাকাত আদায় করেছে তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৭)।

জাকাত দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা বা নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। তবে রমজানে এ জাকাত আদায় উত্তম। কেননা রমজানে দান, সদাকা বা জাকাত দান করলে সত্তর গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। আমাদের সমাজে দরিদ্র অসহায় মানুষের অভাব নেই। চারপাশে ছড়িয়ে আছে অসহায় দরিদ্র মানুষের মুখ। দারিদ্র্য দূরীকরণে জাকাতের ভূমিকা অপরিসীম। সমাজের ধনী ব্যক্তিরা এ মাসে ঠিকমতো জাকাত আদায় করলে আমাদের সমাজের দরিদ্রতা কমে যাবে তা বলাই বাহুল্য। 

মনে রাখতে হবে ধনীদের সম্পদের মধ্যে আছে গরিব অসহায় আর এতিমের হক। সুতরাং গরিবের হক বা প্রাপ্য ঠিকমতো আদায় করলে ধনীর ধনসম্পদ পবিত্র হয়। অথচ আমাদের সমাজে জাকাত আদায়ের নামে নিম্নমানের লুঙ্গি, কাপড় গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে গিয়ে প্রাণহানি ঘটে। যা সত্যিই দুঃখজনক ও পীড়াদায়ক। আমরা যদি ঠিকমতো জাকাত আদায় এবং গরিব অসহায়কে সাহায্য করি তাহলে সমাজে বৈষম্য কমে উভয়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে উঠবে।

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘জাকাত হলো ইসলামের সেতু।’ (মুসলিম শরিফ)। রসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘মানব দেহের জাকাত হলো রোজা।’ (ইবনে মাজাহ)।

জাকাত আদায় করলে মানুষের সম্পদ যেমন পবিত্র হয় তেমনি রমজান মাসে রোজা রাখলে সারা শরীর পবিত্র হয়। প্রত্যেক ধনী ব্যক্তির জাকাত আদায় করা উচিত। রমজান মাসে অসহায়, বঞ্চিত, গরিব, পঙ্গু, এতিম বিধবাদের মধ্যে জাকাত আদায় করলে সমাজে ধনী দরিদ্রের বৈষম্য সহজে দূর হয়।

সুরা মুজাম্মিলে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও।’ (আয়াত ২০)।

রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা আমাকে বলেছেন খরচ করো, তোমার ওপরও খরচ করা হবে। রসুল (সা.) আরও বলেন, আল্লাহতায়ালার হাত প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ। রাত-দিন ব্যয় করা সত্ত্বেও তা মোটেই কমছে না। একটু ভেবে দেখ, আসমান জমিন সৃষ্টি থেকে তিনি যে বিপুল পরিমাণ ব্যয় করেছেন এতে তার হাত একটুও খালি হয়নি। (মুসলিম শরিফ ২১৯৯)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে, আল্লাহ তা কবুল করেন। আল্লাহ পবিত্র বস্তু ব্যতীত অন্য কিছু কবুল করেন না।’ (বুখারি শরিফ, ১৩২৭)। সুতরাং ঘুষ বা সুদের টাকায় কেউ জাকাত আদায় করলে তা কবুল হবে না। 

জাকাত আদায় করতে হবে হালাল উপার্জন থেকে। আরেকটি হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেছেন, যারা ধনসম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও ঠিকমতো জাকাত আদায় করে না, কেয়ামতের দিন তার ধনসম্পদ লোমহীন একটি বিষাক্ত সাপ হয়ে তাকে দংশন করবে আর বলবে আমিই তোমার সেই ধনসম্পদ, যার জাকাত তুমি আদায় করোনি।’ (বুখারি শরিফ, ১৩২১)।

মনে রাখতে হবে যারা তার মহান প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জাকাত দেয় পরকালে যেদিন কোনো ছায়া থাকবে না সেদিন কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহতায়ালা তাঁর আরশের ছায়ার নিচে তাদেরকে ছায়া দেবেন। সুবহানাল্লাহ। রসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে এমনভাবে দান সদকা করে যে ডান হাত দিয়ে দান করলে তা বাম হাত জানে না। (বুখারি শরিফ)।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে এ রমজানে ঠিকমতো জাকাত আদায় করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর