ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সিরাতে রসুল (সা.) কী ও কেন?
মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি
প্রতীকী ছবি

মানবতার দিশারি, মুক্তির দূত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন বিশ্বনবী, শ্রেষ্ঠ নবী ও শেষ নবী। তিনি ছিলেন নবীকুল সম্রাট-সায়্যিদুল মুরসালিন। তাঁর আগমন ঘটেছিল গোটা আলমের জন্য রহমত হিসেবে। প্রিয় নবী (স.)-এর সার্বিক জীবনচরিত বোঝানোর জন্য সিরাত শব্দটি ব্যবহার হয়। 

সিরাত আরবি শব্দ। এর বহুবচন ‘সিয়ার’। একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব যত বড় হয়, তার জীবন তত বিস্তৃত হয়। একজন সাধারণ মানুষের জীবন যত দিক ছুঁয়ে যায়, একজন বিশেষজ্ঞের জীবন তার চেয়ে অনেক বেশি দিক স্পর্শ করে। সমাজের অনেক দিক তাঁর চোখে ধরা পড়ে, যা একজন সাধারণ মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। তিনি যেসব দায়িত্ব অনুভব করেন, একজন সাধারণ মানুষ তা বোঝে না। 

আদিকাল থেকে অদ্যাবধি যত মানুষ এ ধরায় আগমন করেছে এবং মোহময় এ পৃথিবী ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত আগমন করবে, তার মধ্যে নবীজি (স.)-এর জীবন ছিল অনেক বিস্তৃত। মানবজীবনে এমন কোনো অধ্যায় নেই যার দিকনির্দেশনা তাঁর জীবন থেকে পাওয়া যাবে না। তাঁর জীবনে এমন কোনো বাক্য নেই যাতে কারও উপদেশ নেই। এমন কোনো কর্ম নেই যাতে কারও শিক্ষা নেই। 

আল কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ২১)

মুহাম্মদ (সা.)-এর সিরাত এতই বিস্তৃত ও ব্যাপক যে তাঁর আনীত ধর্মের মাধ্যমে আল্লাহ সব ধর্ম রহিত ঘোষণা করেছেন। তাঁর আনীত ধর্মই একটি নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ ধর্ম হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তিনি এসেই একদিকে পার্থিব জীবনব্যবস্থা সংশোধনের ঘোষণা দিলেন। অন্যদিকে পারলৌকিক জীবনে অফুরন্ত সুখ-শান্তি প্রাপ্তির মূলনীতিগুলো বাতলে দিলেন বিশ্বমানবকে। তাই তাঁর ধর্ম বিশ্বজনীন, সর্বজনীন। আর তিনি হলেন বিশ্বনবী, শ্রেষ্ঠ নবী ও শেষ নবী। তাঁর প্রতিটি কথা ও আদর্শ, সবার জন্য অনুসরণীয়, অনুকরণীয়। কেয়ামত পর্যন্ত দেশ-দেশান্তরে, যুগ-যুগান্তরে, বর্ণ, গোত্র-বংশ নির্বিশেষে সবার কাছে মহানবী (সা.)-এর সিরাত হবে আদর্শ এবং তাঁর আনীত সুমহান ধর্ম হবে অনুসৃত ও প্রতিপালিত। 

আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে কারও পিতা নন; কিন্তু তিনি আল্লাহর রসুল এবং সর্বশেষ নবী।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ৪০)

আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, আমার নিয়ামত তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত ৩)

এ আয়াতের আলোকে খুবই সুস্পষ্ট যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম এবং এ ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে। সুতরাং রসুলুল্লাহ (সা.)-কেও আল্লাহ সমগ্র জগতের জন্য পূর্ণাঙ্গ একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে পাঠিয়েছেন। পাঠিয়েছেন আদর্শ মহামানব ও রোল মডেল হিসেবে। তাই তাঁর সিরাত শুধু নবীজির জীবনের কিছু ঘটনা জানার নাম নয়; বরং বিশ্বনবীর সিরাত হলো বিশ্বজনীন, এবং সুবিস্তৃত একটি ধর্মের প্রতিচ্ছবি। তাঁর সিরাত হলো গোটা ৩০ পারা কোরআনের বাস্তব রূপ। 

আম্মাজান আয়েশা (রা.)-কে রসুলুল্লাহ (স.)-এর সিরাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে বলেন, ‘তাঁর সিরাত হলো কোরআনে কারিম।’ (আহমাদ)

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর