ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

দুনিয়ার গিবত পরকালের আপদ
মাইমুনা আক্তার

অন্যের দোষ চর্চা করা মুমিনের জন্য সমীচীন নয়। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এ কাজকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই করো।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)

এটা এতটাই জঘন্য কাজ যে, পরকালে এই কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। মানবজাতিকে সতর্ক করার জন্য মিরাজের রাতে মহানবী (সা.)-কে গিবতকারীদের শাস্তি দেখানো হয়েছে, যাতে তাঁর মাধ্যমে মানবজাতি এই কাজের ভয়াবহতা সম্পর্কে জেনে তা থেকে বিরত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মিরাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম যাদের নখগুলো তামার তৈরি এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে আঁচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল ! এরা কারা? তিনি বলেন, এরা সেসব লোক যারা মানুষের গোশত খেত (গিবত করত) এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানত।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৮)

আমার প্রিয় নবীজি (সা.) এই কাজকে ভীষণ অপছন্দ করতেন। তিনি পরনিন্দাকে ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য আখ্যায়িত করেছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘গিবত ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্যতম গুনাহ। তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন এটা কিভাবে? তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তাওবা করলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যে গিবত করে তার গুনাহ প্রতিপক্ষের মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’ (শুআবুল ঈমান)

আমরা সাধারণত মনে করি, যে দোষ মানুষের মধ্যে সত্যিই আছে তা চর্চা করলে গিবত হয় না, কারো মধ্যেই সত্যিই কোনো দোষ থাকলে তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করে সময় কাটানো দোষের নয়। অথচ হাদিসের ভাষায় এটিকেই গিবত বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, গিবত হলো কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা, যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয় এবং অন্তরে আঘাত পায়, তাকেই গিবত বলে। অর্থাৎ কারো অগোচরে তার এমন দোষ বলা, যা বাস্তবেই তার মধ্যে আছে, তা-ই গিবত বা পরনিন্দা।

আর যদি তার মধ্যে সেই দোষ না থাকে, তবে তা হবে অপবাদ (তুহমত), যা পরনিন্দা থেকেও মারাত্মক গুনাহ। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৯)

এই পাপের পরকালীন পরিণতি অনেক কঠিন। আমাদের সবার উচিত এ ধরনের পাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। নিজের পরিবার-পরিজনও এমন কাজে লিপ্ত না হয়, তাদের সে ব্যাপারে সতর্ক করা। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর