ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

নবীজি (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত
মুফতি মোহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী
নবীজি (সা.)-এর পবিত্র রওজা, মদিনা, সৌদি আরব

‘সোনার মদিনা আমার প্রাণের মদিনা/সব ভুলিবো কিন্তু তোমায় ভুলতে পারি না।’

মক্কা মদিনার জিয়ারত করা হজ ওমরাহ করা, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক জিয়ারত করা সারা বিশ্বের মুমিন মুসলমান নর-নারীদের আজীবনের স্বপ্ন। ইসলাম-পূর্ব যুগে মদিনা শরিফের নাম ছিল ইয়াসরিব। রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের পর এই শহরের নাম হয় মদিনাতুন্নবী তথা নবীজির শহর। এখন বলা হয় মদিনা। সোনার মদিনা, প্রাণের মদিনা, পরম শান্তির মদিনা। মদিনা মুমিন মুসলমানদের প্রাণের ভূমি। মদিনা শরিফ হলো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় শহর, শান্তির নগরী। রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে আমার রওজা (শরিফ) জিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।’ (বায়হাকি-৩৮৬২)।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, যে হজ করল কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না; সে আমার প্রতি জুলুম করল। (ইবনু হিব্বান, দারু কুতনি, দায়লামি)।

ফকিহগণের মতে, হাজির জন্য মদিনা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত। জান্নাত প্রত্যাশী প্রতিটি মুমিন মুসলমানের অন্তর সর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক জিয়ারত করা ও পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারা দেখার জন্য।

হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা শরিফের সবুজ গম্বুজ তো বেহেশতের একটি নিদর্শন যা দর্শনে কেবল চক্ষু পবিত্র হয় না, প্রশান্তিতে ভরে ওঠে মানব হৃদয়। সবুজ গম্বুজের চতুর্দিকে রহমতের এমন স্রোতধারা প্রবহমান যার প্রস্রবণে কার না অবগাহন করতে ইচ্ছা করে। কার না মন চায় হৃদয় উজাড় করে বাদশাহর বাদশাহ কামলিওয়ালা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাতু সালাম জানাতে! কারণ এখানেই শুয়ে আছেন সুলতানে মাদিনা, রাহমাতুল্লিল আলামিন, হায়াতুন্নবী আল্লাহতায়ালার প্রিয় রসুল হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিষয়ে একটি বিষয় সবাইকে জানা প্রয়োজন, তা হলো, আদম (আ.) যখন রুহ এবং শরীরের মাঝখানে ছিলেন প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনো নবী ছিলেন। (তিরমিজি-৩৬০৯)।

জান্নাতের নিশানা রওজা পাকের জিয়ারতে রয়েছে অধিক পুণ্য ও ফজিলত। যা পবিত্র কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস কর্তৃক সমর্থিত ও উত্তম ইবাদত হিসেবে গণ্য।

রওজা পাকের জিয়ারতের ফজিলত প্রদান করা হলো।

আল কোরআনের দৃষ্টিতে : আল কোরআনে রওজা পাকের জিয়ারতের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, (হে মাহবুব!) যদি তারা নিজেদের আত্মার ওপর জুলুম করে তাহলে যেন তারা আপনার দরবারে আসে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও যদি তাদের জন্য ক্ষমা চেয়ে সুপারিশ করেন তবে তারা অবশ্যই আল্লাহকে তওবা কবুলকারী ও দয়ালু হিসেবে পাবে। (সুরা নিসা, আয়াত-৬৪)

হাদিস শরিফের দৃষ্টিতে রওজায়ে আতহার জিয়ারত :-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার রওজা জিয়ারত করল তার জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) ওয়াজিব [আবশ্যক] হয়ে গেল।’ (বায়হাকী)। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ শরিফ হজ করল অথচ আমার জিয়ারত করল না, মূলত সে আমার ওপর জুলুম করল।’ (ইবনু হিব্বান, দারু কুতনি, দায়লামি)

রওজা পাক জিয়ারতের আদব-

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা পাক হাজারো বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। নবীজির শান ও মর্যাদা মহান আল্লাহ প্রদত্ত। এই মহিমান্বিত পুণ্যস্থান জিয়ারতে আদব বজায় রাখা ইমানের দাবি। রওজা শরিফের আদব জেনে নিই।

দেহ মন পবিত্র করে, সুন্দর পোশাকে সুসজ্জিত হয়ে, খুশবু লাগিয়ে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে জিয়ারত করা উচিত। রিয়াজুল জান্নাতে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া। ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় আল্লাহর হাবিবের প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করা।

‘আস-সালাতু আস-সালামু আলাইকা ইয়া রসুলুল্লাহ’।

হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত উমর (রা.) প্রতি সালাম পেশ করা ও জিয়ারত করা। নম্র, বিনয় হৃদয় নিয়ে জিয়ারত করা। রওজা পাকে উচ্চ আওয়াজে কিছু না করা।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হায়াতুন্নবী জেনে, মেনে রওজামুখী হয়ে নবীজির অসিলায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। নবীপ্রেমে সিক্ত হৃদয়ের দুই নয়নের অশ্রু ফেলা। অধিক পরিমাণে দরুদ শরিফ সালাতু সালাম, মিলাদ কিয়াম পাঠ করে আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করা। জান্নাতুল বাকীসহ সব সাহাবি, উম্মাহাতুল মুমেনীন, সারা বিশ্বের মুসলিম নর-নারীর জন্য দোয়া করা। অবশেষে এই বলে দোয়া করা যে, হে আল্লাহ! আমার এই রওজা শরিফ জিয়ারত যেন শেষ জিয়ারত না হয়, বারবার যেন রওজা শরিফ জিয়ারত, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিদার যেন নসিব হয়। আল্লাহতায়ালা কবুল করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

লেখক : বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ইমাম, খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর-২, ঢাকা

 



এই পাতার আরো খবর