ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই
মো. আমিনুল ইসলাম

জন্ম নিলে মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যু থেকে পালানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি জীবনকে মরণের শীতলতা অনুভব করতে হবে। এর থেকে কোনো নিস্তার নেই।  মৃত্যুর প্রতি বিশ্বাস রাখা প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব। পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে চরম সত্য হলো মৃত্যু। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক জীবকেই মরণের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। হে মানুষ, আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো উভয় অবস্থার মধ্যে ফেলেই পরীক্ষা করি, অতঃপর তোমাদের আমার কাছেই ফিরিয়ে আনা হবে’ (সুরা আম্বিয়া-৩৫)। এই মৃত্যুর পরই হলো আমাদের অনন্ত জীবন। যে জীবনের কোনো শেষ নেই। মৃত্যু শুধু একটি রূপান্তর। এই ক্ষণস্থায়ী জীবন থেকে অনন্তকালের উদ্দেশ্যে যাত্রা। তাই পরবর্তী জীবনে সুখী হওয়ার জন্য আমাদের আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালিত করতে হবে। তা না হলে পোহাতে হবে কঠিন শাস্তি আর দুর্ভোগ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি সত্যি সত্যি এটা ধরে নিয়েছিলে যে, আমি তোমাদের এমনিই অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের কখনই আমার কাছে একত্রিত করা হবে না’ (সুরা আল মোমেনুন-১১৫)।

আমাদের মনে রাখতে হবে কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমাদের জীবন গড়তে হবে। কারণ পরকালের জীবনে সুফল ভোগ করতে হলে এবং জান্নাত লাভের আশা করতে হলে আমাদের সবাইকে এই পার্থিব জীবনে সৎকর্ম ও ভালো কাজ করতে হবে। কোরআন ও হাদিসের সব আদেশ ও নিষেধ মেনে চলতে হবে। অথচ আমরা এই দুনিয়ার জীবনে সবাই দুনিয়াকেই আপন করে নিতে ব্যস্ত। প্রতিদিনই আমরা দুনিয়ার সুখ-শান্তি আর সম্পদ অর্জনের পেছনে মত্ত। কীভাবে প্রচুর অর্থবিত্ত আর সম্পদের মালিক হব সে নেশায় বুঁদ হয়ে আছি। অথচ এই বাড়ি, গাড়ি, সম্পদ, স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয় সবকিছু ছেড়ে আমাকে একদিন চলে যেতে হবে। সব থেকে যাবে দুনিয়ায়। কেউই আমার কবরে সঙ্গী হবে না। এই উপলব্ধি আমাদের একেবারেই নেই। মৃত্যু যখন আমাদের সন্নিকটে এসে পড়ে তখন আমাদের হুঁশ ফেরে। কিন্তু তখন আর আমাদের কিছুই করার থাকে না। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বেশি বেশি পরিমাণে মৃত্যুকে স্মরণ কর’ (তিরমিজি)। রসুল (সা.) আরও বলেন, ‘কবর হলো জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান অথবা জাহান্নামের গর্তসমূহের একটি গর্ত’ (তিরমিজি)। মৃত্যু-পরবর্তী জীবন হলো কবরের জীবন। যাকে বলা হয়, ‘বারজাখ’। এই জীবনে যে শান্তিতে থাকবে তার জন্য পরবর্তী ধাপগুলো শান্তির আর জান্নাতের জীবন। কবরের জীবনে প্রত্যেক বান্দাকে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তোমার রব কে? তোমার দীন কি? একটি চেহারা দেখিয়ে জানতে চাওয়া হবে ইনি কে? মনে রাখতে হবে দুনিয়ার বুকে এত সম্পদশালী হওয়ার পরও যদি কেউ এই তিনটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে না পারি তাহলে দুনিয়ার জীবনের এত বিত্তবৈভব ক্ষমতা খ্যাতি কি কাজে লাগল? সুতরাং মনে রাখতে হবে মৃত্যু থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘মৃত্যু যন্ত্রণার মুহূর্তটি যখন এসে হাজির হবে তখন তাকে বলা হবে এ হচ্ছে সে মুহূর্তটা, যা থেকে তুমি পালিয়ে বেড়াতে’ (সুরা ক্কাফ-১৯)। মানুষ দুনিয়ার মোহে পড়ে আল্লাহকে ভুলে যায়। রসুল (সা.)-এর অনুসরণ, করণীয় ও বর্জনীয় এর কথা ভুলে থাকি। মৃত্যু নামক চিরন্তন সত্যকে মন থেকে ভুলে যেতে চাই। অথচ মৃত্যু থেকে পালানোর কোনো সুযোগ নেই। মৃত্যুর হাত থেকে লুকিয়ে থাকারও কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘এবং কোনো প্রাণী এটাও জানে না যে, কোন ভূমিতে তার মৃত্যু হবে’ (সুরা লোকমান-৩৪)। রসুল (সা.) বলেন, ‘দুনিয়াতে এমনভাবে অবস্থান কর যেন তুমি মুসাফির বা পথিক। তিনি আরও বলেন, যখন সন্ধ্যা হয়ে যায়, সকাল বেলার অপেক্ষা কর না। শারীরিক সুস্থতার সময় রোগব্যাধির প্রস্তুতি নাও। আর জীবদ্দশায় থাকাকালীন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা কর’ (বুখারি)।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর