ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

প্রতিশোধ না নেওয়ার পুরস্কার
জাওয়াদ তাহের

ইসলাম মানুষকে ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়। অহংকার, কৃপণতা, দাম্ভিকতা, আত্মগরিমা আর লৌকিকতা—এসব আত্মিক ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। কেউ যদি অন্যায় করে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া, প্রতিশোধ পরায়ণ না হওয়া। নিজের জন্য কোনো প্রতিশোধ না নেওয়া।

কারণ প্রতিশোধের চেয়ে ক্ষমার স্বাদ অনেক বেশি। আর প্রতিশোধপরায়ণ মানুষ নিজেও অশান্তিকে থাকে। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) কখনো নিজের জন্য কারো থেকে কোনো ধরনের প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। নিজের সঙ্গে ব্যক্তিগত ঘটে যাওয়া যত বড় অন্যায় হোক না কেন, তিনি ক্ষমা করে দিতেন।

এড়িয়ে যেতেন। দৃষ্টি সরিয়ে নিতেন সেদিক থেকে। কিন্তু ইসলামের কোনো বিধান, শরিয়তের ছোট-বড় হুকুম-আহকাম কেউ যদি অমান্য করত, তাহলে তাঁর রাগের অন্ত থাকত না। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে যখন কোনো দুটি কাজের মধ্যে এখতিয়ার দেওয়া হতো, তখন তিনি দুটির মধ্যে অপেক্ষাকৃত সহজটি গ্রহণ করতেন; যদি তা গুনাহর কাজ না হতো।

আর যদি তা গুনাহের কাজ হতো, তাহলে তিনি তা থেকে সবার চেয়ে দূরে সরে থাকতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না। অবশ্য কেউ আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার প্রতিশোধ নিতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১২৬)

কোনো ব্যক্তি যদি নিজের ব্যক্তিত্বকে বড় করতে চায়, সমাজে নিজেকে অনন্য স্তরে উন্নীত করতে চায়, তাহলে তার মধ্যেও এই গুণ থাকা চাই—প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়া। এই গুণ তাকে এমন মর্যাদার আসনে আসীন করবে, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।

কারণ মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়া, ছোটকে স্নেহ করা, বড়কে যথাযথ সম্মান করা—এসব গুণ নিজের মধ্যে নিয়ে আসা চাট্টিখানি কথা নয়। আর ক্ষমাকারী ব্যক্তির মর্যাদা আল্লাহ তাআলা বৃদ্ধি করবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা সমুন্নত করে দেন।’(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৬)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, ক্ষমা চিরশত্রুকে পরম বন্ধুতে রূপান্তর করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ভালো ও মন্দ সমান হয় না। তুমি মন্দকে প্রতিহত করো এমন পন্থায়, যা হবে উত্কৃষ্ট। ফলে যার ও তোমার মধ্যে শত্রুতা ছিল, সে সহসাই হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ (সুরা : ফুচ্ছিলাত, আয়াত : ৩৪)

অর্থাৎ কেউ যদি মন্দ আচরণ করে, তার সঙ্গে অনুরূপ মন্দ আচরণ করা জায়েজ, কিন্তু তা কিছুতেই উত্তম নয়। উত্তম পন্থা হলো তার মন্দ আচরণের বিপরীতে ভালো ব্যবহার করা। এরূপ করলে ঘোর শত্রুও একদিন পরম বন্ধু হয়ে যাবে। আর তার মন্দ আচরণে যে ধৈর্য ধারণ করবে, তার উত্কৃষ্ট সওয়াব তো পরকালে পাবেই।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন 



এই পাতার আরো খবর