ঢাকা, শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মহান আল্লাহ যখন মুমিনদের জয়ী করেন
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

আল্লাহ মুমিনদের সাহায্য ও বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এটি এমন এক প্রতিশ্রুতি, যার ব্যতিক্রম হবে না। মুমিনদের সাহায্যের সুসংবাদ দিয়ে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এই বাক্য আগেই স্থির হয়েছে যে অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এবং আমার বাহিনীই হবে বিজয়ী।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ১৭১-১৭৩)

মহান আল্লাহ এই ওয়াদার পথ ধরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বদর, খন্দক প্রভৃতি যুদ্ধে বিজয়ী করেছেন এবং তার পর সাহাবায়ে কিরামকে তিনি তাঁদের শত্রুদের ওপর বিজয়ী করেছেন।

ফলে ইসলাম প্রসার লাভ করেছে এবং বহু দেশ জয় হয়েছে। এভাবেই তিনি যুগে যুগে দেশে দেশে সত্যিকার মুমিনদের জন্য বিজয় ও সাফল্যের ওয়াদা করেছেন। 

এই মর্মে মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি আছে যে তিনি মুমিনদের পৃথিবীতে খিলাফত তথা শাসনক্ষমতা দান করবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে, আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে তিনি অবশ্যই তাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বিনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন। আর ভয়ভীতির পরিবর্তে তাদের অবশ্য নিরাপত্তা দান করবেন।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৫)

মুমিনদের সামগ্রিক জীবন সব সময় সংকটমুক্ত নয়। তবে শুভ পরিণাম মুমিন-মুত্তাকিদের জন্য। শুভ পরিণাম তাদের জন্য, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, যথাযথভাবে আমল করে এবং সুদিনে-দুর্দিনে মহান আল্লাহর নিদের্শনা মেনে চলে।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘এটা আখিরাতের সেই আবাস, যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য, যারা এই পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। শুভ পরিণাম মুত্তাকিদের জন্য।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৮৩)

পবিত্র কোরআন বদর যুদ্ধে মুমিনদের অবস্থা বর্ণনা করেছে, যখন তাঁদের সংখ্যা ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম নিতান্ত নগণ্য ছিল। তাই তাঁরা আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘(স্মরণ করো) যখন তোমরা তোমাদের রবের কাছে সকাতর সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে তখন তিনি তা কবুল করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আমি তোমাদের একের পর এক আগমনরত এক সহস্র ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করব।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৯)

মহান আল্লাহ মুমিনদের মর্যাদা উন্নীত করার ওয়াদা করেছেন। যারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে এবং তাঁর বিধান মেনে চলে, আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের জন্য এটা কি আশ্চর্যের বিষয় যে আমি তাদেরই একজনের কাছে ওহি প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে তুমি মানুষকে সতর্ক করো এবং মুমিনদের সুসংবাদ দাও যে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে আছে উচ্চ মর্যাদা...।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২)

বর্তমানে আমরা দেখি যে মুসলিমরা বেশির ভাগ দেশে তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত হচ্ছে বটে, কিন্তু বিজয়লাভ তারা করতে পারছে না। এর কারণ কী? মুমিনদের দেওয়া আল্লাহর ওয়াদা এ ক্ষেত্রে বিলম্বিত হওয়ার কারণ কী? এ প্রশ্নের জবাব হলো, মহান আল্লাহর ওয়াদা কখনো ব্যতিক্রম হয় না। কিন্তু আজ কোথায় সে মুসলিম, যাদের জন্য আয়াতে উল্লিখিত বিজয় আগত হবে?

কোরআনে আল্লাহ যাদের জন্য বিজয়ের অঙ্গীকার করেছেন, তারা হলো প্রথমত, ধৈর্যশীল মুমিন। আল্লাহ ধৈর্যশীল ও দৃঢ় প্রত্যয়ী মুমিনদের বিজয়ী করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু যাদের প্রত্যয় ছিল আল্লাহর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবে, তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৪৯)

দ্বিতীয়ত, বিজয় তাদের জন্য, যারা আল্লাহর পথে সংগ্রামরত। যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে আল্লাহ তাদের বিজয়ী করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন।’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ৭)

তৃতীয়ত, মহান আল্লাহ বিজয়ের পূর্বশর্ত হিসেবে মুসলমানদের ঐক্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পর বিবাদ কোরো না; করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের চিত্তের দৃঢ়তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪৬)

কিন্তু আফসোস, আজ মুসলমানরা পরস্পর অনৈক্য, হিংসা-জিঘাংসায় লিপ্ত। এই অনৈক্য তাদের বিজয়ের পথ দীর্ঘায়িত করছে। এ কথা বলা বাহুল্য যে মুসলমানরা যখন তাদের ধর্মবিশ্বাস এবং দ্বিনের সেই শিক্ষা উপেক্ষা করে বসল, তখন তারা সব জাতি থেকে পশ্চাতে পড়ে গেল। কাজেই আবার যখন তারা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের পথে প্রত্যাবর্তন করবে, তখনই তাদের উন্নতি ও মান-মর্যাদা আবারও ফিরে আসবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৪৭)

মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতকে বিশ্বজয়ের সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পৃথিবীকে আমার জন্য সংকুচিত করে দিয়েছেন (নিকটবর্তী করে দেওয়ার অর্থে) এবং আমাকে এর পূর্ব ও পশ্চিম সীমানা দেখানো হয়েছে। আর যতটুকু আমার জন্য সংকুচিত করা হয়েছে, ততটুকুতে অচিরেই আমার উম্মতের রাজত্ব বিস্তার লাভ করবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪২৫২)

কাজেই মুমিনদের সাহায্য ও বিজয়ী করার দায়িত্ব মহান আল্লাহ নিজেই নিয়েছেন। এই মর্মে তিনি ওয়াদা করেছেন। আর আল্লাহর ওয়াদা অবশ্যই সত্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘...নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯)

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর