ঢাকা, শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সাহাবিদের ব্যবসা-বাণিজ্য
আহমাদ আরিফুল ইসলাম
প্রতীকী ছবি

ইসলামের প্রথম যুগের অনুসারী আল্লাহর নবীর সাহাবিরা তাঁদের জীবিকার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। তাঁরা অলসতা বা পরনির্ভরশীলতা ছাড়াই জীবিকা অর্জনের পথ অনুসরণ করতেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে ছিলেন দক্ষ বণিক। এমনকি তাঁরা জাহেলি যুগের বাজারগুলোতেও বাণিজ্য করতেন।

যেমন—উকাজ, মিহনাহ, জুল-মাজাজ, বনু কায়নুকা, হাবাশার বাজার ইত্যাদি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, উকাজ, মিহনাহ ও জুল-মাজাজ ছিল জাহেলি যুগের বাজার, তাই তাঁরা সেখানে বিভিন্ন মৌসুমভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য করা পাপ মনে করতেন। অতঃপর নিম্নলিখিত আয়াতটি নাজিল হয়, ‘তোমাদের ওপর কোনো পাপ নেই যে তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ অনুসন্ধান করবে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৯৮)

তাঁরা স্থল ও সমুদ্র উভয় পথেই বাণিজ্য পরিচালনা করতেন।

শীতকালে ইয়েমেনে এবং গ্রীষ্মে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন অভিমুখে তাঁদের বাণিজ্য সফর এরই প্রমাণ। এ দুই বাণিজ্যিক সফরে তাঁরা নিজেদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন করা পণ্য বহির্বিশ্বে রপ্তানি করতেন এবং সফর শেষে প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য নিয়ে এসে স্বদেশে ব্যবসা করতেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেহেতু কুরাইশরা অভ্যস্ত, শীত ও গ্রীষ্মের সফরে। অতএব তারা যেন এই গৃহের রবের ইবাদত করে, যিনি ক্ষুধায় তাদের আহার দিয়েছেন আর ভয় থেকে তাদের নিরাপদ করেছেন।’(সুরা : কুরাইশ, আয়াত : ১-৪)

ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও সাহাবিরা নানা পেশায় কাজ করতেন। তাঁদের মধ্যে কেউ ছিলেন কারিগর, কেউ কৃষক, কেউ বা অন্যান্য কারুশিল্প ও ব্যবসায় পেশাদার ছিলেন। সাহাবিদের মধ্য থেকে মুহাজিররা বিখ্যাত ছিলেন বণিক হিসেবে আর আনসাররা বিখ্যাত ছিলেন কিষান, বাগানওয়ালা ও খেজুর চাষি হিসেবে।

মহানবী (সা.) আনসারদের তাঁদের স্বীয় কাজ করতে উৎসাহিত করেছেন। কারণ এই কাজগুলো তাঁদের ক্ষমাশীল, মর্যাদাবান এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে, সদগুণ এবং অন্যদের জন্য উপকারী মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি তাঁদের হারাম জিনিস থেকে মুক্ত করেছে এবং অর্থ উপার্জনের অবৈধ উপায়, যেমন—সুদ, ঘুষ ইত্যাদি থেকে রক্ষা করেছে।

বুখারি শরিফে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদিসটি তাঁদের উচ্চ সংকল্প এবং মহৎ নৈতিকতার উদাহরণ :

আল্লাহর রাসুল (সা.) আবদুর রহমান ও সাদ বিন আল-রাবির মধ্যে একটি ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে দেন। আবদুর রহমান (রা.) বলেন, ‘আমার কাছে আনসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ রয়েছে, তা আমাদের (দুই ভাইয়ের মধ্যে) দুই ভাগে ভাগ করে দিন এবং আমার দুজন স্ত্রী আছে, কোনটি আপনার পছন্দ, তার নাম দিন, আমি তাকে তালাক দেব এবং যখন তার ইদ্দত শেষ হবে, তখন আপনি তাকে বিবাহ করবেন। এটা শুনে সাদ (রা.) বললেন, আল্লাহ আপনার পরিবার এবং আপনার সম্পদে বরকত দান করুন। আপনাদের বাজার কোথায়? তারা তাঁকে বনু কাইনুকার বাজার দেখাল। অতঃপর তিনি যখন ফিরে এলেন তখন দেখা গেল, তাঁর কাছে কিছু অবশিষ্ট ঘি ও আটা রয়েছে। এভাবেই কিছুদিন চলতে লাগল। তারপর একদিন তিনি হলুদের চিহ্ন নিয়ে এলে নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, মাহিম? (মাহেম : পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি প্রশ্ন) তিনি বলেন, আমি বিয়ে করেছি। নবীজি বলেন, আপনি তাতে কতটুকু সম্পদ ব্যয় করেছেন? তিনি বলেন, সোনার একটি টুকরা বা সোনার একটি টুকরার ওজন।’ অতঃপর আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.) যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাঁর ব্যবসা থেকে অঢেল সম্পদ রেখে যান।

সাহাবিদের জীবন থেকে আরো জানা যায়, খাব্বাব (রা.) ছিলেন একজন কামার, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ছিলেন একজন রাখাল, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) ছিলেন তীর কারিগর, জুবায়ের বিন আওয়াম (রা.) ছিলেন একজন দর্জি, বিলাল বিন রাবাহ ও আম্মার বিন ইয়াস (রা.) ছিলেন সেবক, সালমান ফারসি (রা.) ছিলেন একজন নাপিত, খেজুরগাছ পরিচর্যাকারী ও রণশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ এবং বারা বিন আজিব ও জায়েদ বিন আরকাম (রা.) ছিলেন বণিক। (ফাতহুল বারি)

এসব কাজ বহুমুখী পেশায় সাহাবিদের পেশা গ্রহণের প্রমাণ বহন করে।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর