ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মমতা ব্যানার্জি ওই পদে থাকার যোগ্য নন: নির্ভয়ার মা
দীপক দেবনাথ, কলকাতা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি

নাবালিকাকে ধর্ষণ ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন ‘নির্ভয়া’ (২০১২ সালে দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার প্যারামেডিকেল শিক্ষার্থীর কাল্পনিক নাম)-এর মা আশা দেবী। মঙ্গলবার তিনি বলেন ‘একজন নারী মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যদি তিনি একজন নির্যাতিতা সম্পর্কে এমন কথা বলে থাকেন, তাহলে ওই পদে বসারই যোগ্য নন।’

নির্ভয়ার মা আরও জানান, ‘এই ঘটনায় প্রকৃত তদন্ত হওয়া উচিত এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত।’ আশা দেবী এও বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর মতো একজন নারীর মুখে এই ধরনের মন্তব্য অপরাধীদের উৎসাহিত করবে, এর প্রভাব নির্যাতিতাদের ওপর পড়বে এবং এই ধরনের অপরাধের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। এই ধরনের রাজনীতিকরা কেবলমাত্র তাদের ভোট ব্যাঙ্কের দিকেই খেয়াল রাখে।’

সোমবার কলকাতায় একটি সরকারির অনুষ্ঠান থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার হাঁসখালিতে ধর্ষণের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মমতা বলেন, ‘পুলিশ এখনো জানতে পারেনি। একটা বাচ্চা মেয়ে রেপড হয়ে মারা গেছে বলে দেখানো হচ্ছে (গণমাধ্যমে)। কিন্তু তাকে ধর্ষণ বলবেন, না প্রেগন্যান্ট বলবেন, নাকি লাভ আফেয়ার্স বলবেন? এটার তদন্ত করেছেন কি; আমি পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলাম।  ঘটনাটা খারাপ। গ্রেফতারও হয়েছে। কিন্তু আমি শুনেছি, ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির লাভ আফেয়ার্স ছিল।’

মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন মৃত নাবালিকার বাবাও। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের কথা বলেন কি করে? 

পরিচালক সৃজিত মুখার্জি বলেছেন ‘হাঁসখালির ধর্ষণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই অকল্পনীয় মন্তব্য খুবই অপমানকর ও অসংবেদনশীল। আমি কার্যত নির্বাক ও হতবাক।’

উল্লেখ্য, গত সোমবার (৪ এপ্রিল) হাঁসখালির এক নম্বর ব্লকের গাজনা গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামনগর এলাকায় তৃণমূল নেতা ও গাজনা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সমর গোয়ালার ছেলে সোহেল গয়ালির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল স্থানীয় বগুলা এলাকার ১৪ বছর বয়সী ওই নাবালিকা। রাতে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। রাতে বাড়ি ফিরে আসার পরই ভোররাতে অসুস্থ হয়ে তার মৃত্যু হয়। এরপরই ওই তৃণমূল নেতার চাপেই দাহ করা হয় ওই কিশোরীর লাশ। মৃতার পরিবারের অভিযোগ ওই নাবালিকাকে ধর্ষণের জেরেই অতিরিক্ত রক্তপাত ঘটে। আর তাতেই তার মৃত্যু হয়। সব প্রমাণপত্র নষ্ট করে দেওয়ার জন্যই কোনো রকম মৃত্যুর সনদ (ডেথ সার্টিফিকেট) ছাড়াই পরিবারের হাতে লাশ তুলে না দেওয়ার বদলে তা জোর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রায় এক সপ্তাহের মাথায় রবিবার বিকালের দিকে ওই ঘটনা সামনে আসে। পরদিন সোমবার হাঁসখালির ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে মমতার কিছু মন্তব্য নিয়ে গোটা ভারতেই শোরগোল পড়ে যায়।

হাঁসখালির ঘটনায় স্থানীয় এক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতার ছেলের নাম জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে মমতা এও বলেন, ‘...কেউ যদি কারও সাথে প্রেম করে তবে তা আমার পক্ষে আটকানো সম্ভব নয়। এটা উত্তরপ্রদেশ নয়, যে লাভ জিহাদ প্রোগ্রাম করবো। এটা স্বাধীনতা। আমরা এটা নিশ্চয়ই দেখব যে কেউ অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক রঙ দেখা হবে না। কারণ এটা মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান বা দিল্লিতে হয় না। এটা বাংলাতেই হয়।’

রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যকে উদ্দেশ্য করে মমতা এও প্রশ্ন তোলেন, ‘গত ৫ এপ্রিল মেয়েটি মারা গেছে, পুলিশ ১০ তারিখে জেনেছে। যদি ৫ তারিখে মরে গিয়ে থাকে তাহলে অভিযোগ জানাতে এত দেরি হল কেন? লাশটাকে পুড়িয়ে দেওয়া হল কেন?  আমি একজন লেম্যান হিসেবে বলছি, সবটা না জেনেও। লাশ পুড়িয়ে দিলে তার প্রমাণটা কোথা থেকে পাওয়া যাবে? ওই মেয়েটি আসলেই ধর্ষিতা হয়েছে, না প্রেগন্যান্ট ছিল, না অন্য কোনো কারণ হয়েছে, না কেউ ধরে ধরে চড় মেরেছে, না শরীরটা খারাপ হয়েছে? লাভ অ্যাফেয়ার্স তো ছিলই। তার বাড়ির লোকেরাও সেটা জানত, পাড়ার লোকেরা সেটা জানত।’

মমতার ওই মন্তব্যের পরই উত্তাল গোটা রাজ্য। ইতিমধ্যেই ওই নাবালিকার বাবা, রাজ্যটির বিরোধীদল ও নারী সংগঠনগুলিও তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলিতেও মমতার ওই মন্তব্যকে নিয়ে কটাক্ষ শুরু হয়।

মমতার ওই মন্তব্যের পরই পাল্টা তোপ দাগেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘একটা ১৪ বছরের মেয়ে ধর্ষিতা হল, আর আপনি খুঁজছেন সে গর্ভবতী কিনা! আমার লজ্জা হচ্ছে। আইনে বলা আছে যে-স্বামী স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে পারে না। আপনি নারী হয়ে এই কথা বললেন? ছি!’ 

বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘বাংলার মেয়ের মুখে একি ভাষা! মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ধোয়া উচিত। মৃত নাবালিকা কি ইঁদুর ছিল?’

ইতিমধ্যে ওই কিশোরীর প্রেমিক তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতার ছেলে সোহেল গয়ালিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে সোহেলের এক বন্ধুকেও। 



এই পাতার আরো খবর