ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পিকে হালদারের বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে চার্জ গঠন
দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদারসহ  ছয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে চার্জ গঠন করা হয়েছে। কলকাতার নগর দায়রা আদালতের স্পেশাল সিবিআই-১ কোর্টে চার্জশিট জমা দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ইডির তরফে এই চার্জশিট জমা দেন আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী। সেক্ষেত্রে এই মামলা শুরুর ৫৯ দিনের মাথায় আদালতে চার্জ গঠন করা হল।

এ ব্যাপারে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট-২০০২ (PMLA) মামলায় পিকে হালদারসহ ছয় অভিযুক্ত ব্যক্তির নামে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। ওই আইনের তিন নম্বর ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ছয় অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়াও তাদের দুটি সংস্থার নামও এই চার্জশিটে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভারতে এ পর্যন্ত ৪১টা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বাড়ি ও জমি মিলিয়ে ১৮টি অস্থাবর সম্পত্তির হদিস পাওয়া গেছে। এই অস্থাবর সম্পত্তির বাজার মূল্য আনুমানিক পাঁচ কোটি রুপি। এই বিষয়গুলোও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই ফের এদের আদালতে তোলা হবে।   এদিকে অভিযুক্তদের আইনজীবী শেখ আলী হায়দারের অভিমত এই চার্জ গঠনের ফলে তার মক্কেলদের জামিন পেতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। যদিও তার দাবি ‘চার্জের কপি আমার হাতে এখনো আসেনি। এলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুর্নীতি দমন কমিশনের তরফে গত ৬ মে ভারত সরকারকে পিকে হালদারের টাকা আত্মসাৎ এবং ভারতের লুকিয়ে থাকার বিষয়টি জানানো হয়। এরপর ১০ মে থেকে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় কেন্দ্রীয় এজেন্সির তল্লাশি অভিযান। 

অবশেষে গত ১৪ মে অশোকনগর সহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় পিকে হালদার ওরফে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে শিব শঙ্কর হালদারকে। পিকের সাথেই গ্রেফতার করা হয় তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারকে। 

ইতোমধ্যেই পিকে হালদারসহ গ্রেফতারকৃত ছয়জনের বিরুদ্ধেই ‘প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট' (PMLA)-২০০২’ এর ৩ ও ৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতের তরফে কয়েক দফায় ইডি রিমান্ড এবং জেল হেফাজতের (Juducial Custody) নির্দেশ দেওয়ার পর পিকে হালদার সহ ৫ পুরুষ অভিযুক্ত রয়েছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে। অন্যদিকে মহিলা অভিযুক্ত রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেলে।   

এদিকে কারাগারে থাকাকালীন নতুন নতুন তথ্য পেতে অভিযুক্তদের জেরা করে চলেছেন ইডির কর্মকর্তারা। অভিযুক্তদের জেরা করে ইতোমধ্যেই নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রচুর সম্পত্তির হদিস পাওয়া গেছে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের একাধিক শহরে। তবে পিকে হালদার নয়, মূলত শিবশঙ্কর হালদার নামেই ভারতের আধার কার্ড, প্যান কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড সহ একাধিক পরিচয় পত্র বের করেন তিনি। এমনকি ওই নামেই প্রচুর সম্পত্তিও ক্রয় করেন বলেও জানা গেছে।

অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলায় ইতোমধ্যেই পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী স্বপন মৈত্রের স্ত্রী পূর্ণিমা মৈত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইডির কর্মকর্তারা। এই মামলায় বাংলাদেশের দুদকের এজহারভুক্ত আসামি পূর্ণিমার কী ভূমিকা রয়েছে- তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। সেক্ষেত্রে তার গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছে। পিকে হালদারের আরেক সহযোগী সুকুমার মৃধার বড় মেয়ে অতসী মৃধা এবং তার স্বামী সঞ্জীব হাওলাদারকেও পৃথক ভাবে জেরা করেছে ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা। 

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর



এই পাতার আরো খবর