ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলা
‘পার্থ ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে আরও রুপির হদিশ পেল ইডি
দীপক দেবনাথ, কলকাতা
অর্পিতা মুখার্জি। ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ (এসএসসি স্ক্যাম) দুর্নীতি মামলায় ফের বিপুল অংকের অর্থের খোঁজ পেল ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বুধবার সকাল থেকে রাজ্যটির একাধিক জায়গায় অভিযান চালায় ইডির কর্মকর্তারা। যার মধ্যে অন্যতম রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান শিল্প বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখার্জির বেলঘরিয়ার একটি বহুতল আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে। কলকাতার টালিগঞ্জের পর এবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেলঘড়িয়ার রথতলায় অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হলো বিপুল অর্থ।

রথতলায় ‌‘ক্লাব টাউন হাইটস’ নামে একটি বহুতল আবাসনে অর্পিতার নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সেখানেই এদিন সকালের দিকে অভিযানে আসেন ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু ফ্ল্যাট দুটি বন্ধ থাকায় বেশ কিছুক্ষণ তারা বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন। এরপর একজন চাবিওয়ালাকে ডাকা হয়। তিনি এসে বেশ কিছুক্ষণ প্রচেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। এরপরই তালা ভেঙে ওই দুটি ফ্ল্যাটে ঢুকেন ইডির কর্মকর্তারা।

তারই একটি ফ্ল্যাট ব্লক-৫ এ বিপুল অর্থের সন্ধান পায় ইডি, যা দেখে চোখ কপালে ওঠে ইডির কর্মকর্তাদের। উদ্ধার ওই রুপির মধ্যে বেশির ভাগই রয়েছে প্যাকেট প্যাকেট ২০০০ ও ৫০০ রুপির নোট।  এই বিপুল অর্থ গোনার জন্য চারটি ক্যাশ কাউন্টিং মেশিন নিয়ে আসা হয়। শুরু হয় গণনা। বিপুল অর্থ নিয়ে যাওয়ার জন্য রাত ১১টা নাগাদ ক্যাশ বহনকারী একটি গাড়ি আসে ওই ফ্ল্যাটে। এরপর ট্রাঙ্কে করে ওই রুপি নিয়ে যাওয়া হবে। ইডির তরফ থেকে রুপির যে ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে তাতে অর্থের পরিমাণ আনুমানিক চল্লিশ কোটি রুপি হতে পারে। উদ্ধার করা হয় প্রচুর স্বর্ণের জিনিস এবং অন্যান্য নথিও। যদিও ইডির তরফে এখনো কোনো সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

এই আবাসনের অন্য ফ্ল্যাটটি এদিন সিলগালা করে দেন ইডির কর্মকর্তারা। সেখানে একটি নোটিশও টাঙিয়ে দেন তারা।

এর পাশাপাশি অর্পিতার বেলঘড়িয়ার দেওয়ান পাড়ায় পৈতৃক বাড়িতেও এদিন ইডি কর্মকর্তারা যান। সেখানেও প্রথমে ইডি কর্মকর্তাদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেন অর্পিতার বৃদ্ধা মা মিনতি মুখার্জী। পরে তাকে বুঝিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে অভিযান চালানো হয়। যদিও সেখান থেকে আপত্তিকর কোনো নথি বা জিনিস পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, এই দুর্নীতি মামলায় গত ২২ জুলাই মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হয় মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জিকে। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে ইডি হেফাজতে রয়েছেন তিনি। ওইদিন পার্থ চ্যাটার্জির দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার বাড়িতে তদন্ত চালান ইডির কর্মকর্তারা। কিন্তু তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ওই দিনই অর্পিতার টালিগঞ্জের করুণাময়ী এলাকায় ডায়মন্ড সিটি আবাসনে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হয় ২১ কোটি ৯০ লাখ রুপি। রুপি ছাড়াও অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে বাজেয়াপ্ত হয় ৭৯ লাখ রুপির গয়না, ৫৪ লাখ রুপির বিদেশি মুদ্রা, ২০টি মোবাইল। অর্পিতার বাড়িতে টাকার পাহাড়ের মাঝেই উচ্চ শিক্ষা দফতরের খামও পাওয়া যায়। এরপরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় অর্পিতাকে। পরে ২৪ জুলাই তাকে গ্রেফতার করে ইডি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে নবম ও দশম শ্রেণিতে শিক্ষক, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদেনিয়োগ মামলায় প্রায় ৫০০ কোটি রুপির দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। এই আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে পার্থ চ্যাটার্জি শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন সময়েই। মেরিট লিস্টে নাম না থাকা সত্ত্বেও কেবল রুপির জোরে চাকরি পাইয়ে দেবার অভিযোগ ওঠে। ওই অভিযোগ আসার পরেই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের ভার হাতে নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তারা মূলত এই মামলার ফৌজদারির দিকটি দেখছে। কাদের হাত ধরে এই দুর্নীতি হয়েছে তা খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে সিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তারা। অন্যদিকে এই মামলায় আর্থিক দুর্নীতির দিকটি খতিয়ে দেখছেন ইডির কর্মকর্তারা। 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ



এই পাতার আরো খবর