ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বিহারের পরীক্ষা কেন্দ্রে হিজাব বিতর্ক
দীপক দেবনাথ, কলকাতা
প্রতীকী ছবি

কর্নাটকের পর হিজাব বিতর্ক ভারতের বিহার রাজ্যে। রাজ্যটির মুজাফফরপুর জেলায় একটি কলেজে পরীক্ষা শুরুর আগে এক পরীক্ষার্থীকে হিজাব খুলে ফেলতে বলা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই পরীক্ষার্থী সেই নির্দেশ মানতে অস্বীকার করলে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। এমনকি তাকে উদ্দেশ্য করে এক পুরুষ শিক্ষক আপত্তিকর কিছু মন্তব্য করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এরপর থেকেই নতুন করে মাথাচারা দিয়েছে হিজাব বিতর্ক। 

যদিও কলেজের প্রিন্সিপালের দাবি ওই নারী শিক্ষার্থীকে কখনওই হিজাব খুলে ফেলার কথা বলা হয়নি। তার কানে কোনও ব্লুটুথ ডিভাইস ছিল কি না সেটিই পরীক্ষা করা হয়। পুরো বিষয়টিকে অহেতুক ধর্মীয় রং চড়ানো হচ্ছে। 

জানা গেছে, রবিবার মুজাফফরপুরের মিথানপুরা এলাকায় মহন্ত দর্শন দাস মহিলা কলেজে (MDDM) সেন্ট্রাল সিলেকশন কাউন্সিল কনস্টেবল রিক্রুটমেন্ট-এর একটি পরীক্ষা ছিল। শিক্ষার্থীদের কাছে কোনও ব্লুটুথ ডিভাইস, বা মোবাইল ছিল কি না সেটাই দেখতে চেয়েছিলেন শিক্ষক। আর তাতেই গণ্ডগোলের সৃষ্টি। 

এক পরীক্ষার্থী বলেন, “মহন্ত দর্শন দাস মহিলা কলেজে পরীক্ষা দিতে অনেক নারী পরীক্ষার্থী আসেন। ক্লাস রুমের ভেতরে ঢোকার সময় রবি ভূষণ নামে এক শিক্ষক তাদেরকে হিজাব খুলতে বলেন। তার কারণ ওই শিক্ষকের সন্দেহ হয় নারী শিক্ষার্থীদের কানে ব্লুটুথ লাগানো থাকতে পারে।”

সে সময় নারী শিক্ষিকাকে ডেকে তাদের শরীরে তল্লাশি চালানোর আবেদন জানানো হয়। তারা জানান, যদি কোনও পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে আপত্তিকর বস্তু পাওয়া যায় তবে তাকে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হোক। কিন্তু ওই পুরুষ শিক্ষক নারী শিক্ষার্থীদের কথায় কর্ণপাত করেননি। উল্টো তাদের হিজাব খোলার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়। ওই শিক্ষক তাদেরকে রাষ্ট্রবিরোধী বলেও মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন ওই নারী শিক্ষার্থী। এমনকি ওই শিক্ষক পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ। 

শিক্ষকের এই বিতর্কিত মন্তব্যের পরেই নারী শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে পরীক্ষা না দিয়ে পরীক্ষা হলের বাইরে জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কলেজের বাইরে বিক্ষোভের খবর পৌঁছে যায় স্থানীয় মিথানপুরা থানাতেও। সঙ্গে সঙ্গেই নারী পুলিশ কর্মীদের সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান হাউস অফিসার শ্রীকান্ত প্রসাদ সিনহা। এরই মধ্যেই কলেজে এসে পৌঁছান প্রিন্সিপাল ড. কানু প্রিয়া। 

এই কলেজের গরিমা এবং পরিবেশ নষ্ট করতেই এই চক্রান্ত বলে অভিযোগ করেন প্রিন্সিপাল। তিনি জানান, “এই কলেজের ইতিহাস বহু পুরনো। পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন জমা রাখা এবং ব্লুটুথ ডিভাইস খুলে ফেলার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু উল্টো ওই শিক্ষার্থীরা অকারণে ধর্মীয় রং চড়িয়ে পুরো বিষয়টিকে নিয়ে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করে।”

প্রিন্সিপাল বলেন, “যদি সত্যিই কোনও পরীক্ষার্থীর সমস্যা হতো তাহলে সে আমাকে জানাতে পারত। পরীক্ষা নিয়ামকের দারস্থ হতে পারত। আসলে তাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল।” 

যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই রবি ভূষণের পাশে দাঁড়িয়ে প্রিন্সিপাল আরও জানান, “হিজাব নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। তাছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রবিরোধী বা পাকিস্তানের যাওয়ার চলে যাওয়ার বিষয়েও কোনও মন্তব্য করেননি ওই শিক্ষক। আসলে নারী শিক্ষার্থীরা অযথা চাপ সৃষ্টি করছেন যাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির কাছে মাথা নত করে।” 

প্রিন্সিপালের অভিমত, “এই ঘটনা খুবই লজ্জাজনক। সম্প্রতি রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক নির্দেশে জানায় ক্লাসে উপস্থিতির হার ৭৫ শতাংশ কম থাকলেই কোনও শিক্ষার্থীদেরকেই চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হবে না। রেকর্ড দেখে মনে করা হচ্ছে এই ছাত্রীদের উপস্থিতির হার খুবই কম। ফলে অযথা একটা চাপ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য ছিল তাদের।”    মিথানপুরা রেল পুলিশ স্টেশনের হাউস অফিসার শ্রীকান্ত প্রসাদ সিনহা জানান, “পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। দুই পক্ষের ভিন্ন অভিমত ছিল। আমরা উভয়পক্ষের মতামত শুনেছি। এই মুহূর্তে এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনীর মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। তবে এখনও পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছে প্রশাসন। ”

এর আগে বিজেপি শাসিত কর্নাটকে স্কুল-কলেজে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পড়া নিয়ে অশান্ত বিতর্ক তৈরি হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হিজাব পড়া নিষিদ্ধ করে। সেই নিয়ে সমালোচনা ঝড় উঠে গোটা রাজ্যে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত পৌঁছায়।  

বিডি প্রতিদিন/কালাম



এই পাতার আরো খবর