ট্রেনে পাথর হামলার ঘটনায় ভুল তথ্য প্রচারের অভিযোগে কলকাতায় ১০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
জানা যায়, গত ৩০ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া রেল স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে 'বন্দে ভারত'। যাত্রা শুরুর পর থেকেই প্রায় ৬০০ কিলোমিটার পথে একাধিকবার এই ট্রেনে পাথর হামলার ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে সরগরম ভারতের রাজনৈতিক মহল।
ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিআইএম সহ প্রতিটি বিরোধি দলের পক্ষ থেকেই কঠোর নিন্দা জানানো হয়েছে। এমনকি গত কয়েকদিন ধরেই ভারতের গণমাধ্যমগুলোতেও লেখালেখি হয়েছে। আর তাতেই যত বিপত্তি। গণমাধ্যমগুলিতে পাথর ছোড়ার ঘটনাকে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে- আর এই ভুল তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে রাজ্যকে অসম্মানিত করা হয়েছে- এই অভিযোগে ১০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে 'ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট' (এফআইআর) দায়ের করেছে কলকাতা পুলিশের বেলেঘাটা থানা।
অভিযুক্ত গণমাধ্যমগুলির মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়া টুডে, সিএএন নিউজ১৮, জি নিউজ, দ্য প্রিন্ট, টাইমস নাও, রিপাবলিক বাংলা প্রমুখ। সেই সাথে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি, ১৫৩এ, ২৯৫এ, ৪২০, ৪৬৮, ৫০৪, ৫০১বি, ৫০৫(১)(বি), ৫০৫(২) ধারা এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইন-২০০২ এর ৬৬ডি ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের অভিমত পশ্চিমবঙ্গে 'বন্দে ভারত' ট্রেনে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে যে সংবাদ গণমাধ্যমগুলিতে পরিবেশিত হচ্ছে তা আসলে ভুয়া। ঘটনাটি পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহারের। ফলে এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও নিজেই এই দাবি করেন। তার আরও দাবি ছিল, বিহারের মানুষ 'বন্দে ভারত' এক্সপ্রেস পায়নি, তাই এটি সেখানকার মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এমনকি তিনি এও জানিয়েছিলেন 'বন্দে ভারত' ট্রেনটি নতুন কিছু নয়, পুরনো একটি ট্রেনকে রং করে নতুন ইঞ্জিন লগিয়ে চালানো হচ্ছে। এই ঘটনা নিয়ে যে গণমাধ্যমগুলি ভুয়ো খবর পরিবেশন করছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মমতা।
আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। যদিও বিরোধীদের অভিমত এই ঘটনার মাধ্যমে মমতা ব্যানার্জি পরিচালিত তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করতে চাইছে।
সুকান্ত মজুমদার নিজেও টুইট করে বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছেন। তিনি লিখেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের উপর পাথর ছোড়ার ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশিত করায় সাংবাদিক এবং আমার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার ঘটনাই বলে দিচ্ছে যে মমতা ব্যানার্জির শাসনকালে গণতন্ত্রের প্রকৃত অবস্থা কি?'
তিনি আরো লেখেন, 'আমি তৃণমূলের এই জঘন্যতম কৌশলে একদমই ভীত নই বরং আইনি লড়াইয়ে প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।'
বিডি প্রতিদিন/হিমেল