নোবেলজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিশ দিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। রবিবার পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনের 'প্রতীচী'র বাড়িতে পৌঁছে যায় সেই নোটিশ। তাতে আগামী ২৯ মার্চ, ৯০ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদকে সশরীরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অমর্ত্য সেন তার প্রতিনিধি পাঠাতে পারবেন বলেও ওই নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের উপস্থিতিতেই শুরু হবে ওই বিতর্কিত জমির শুনানি।
এক কথায় ১৩ ডেসিমেল (শতক) জমি ফেরত না দিলে অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারি দিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহযোগী ছিলেন পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন। তিনি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের দাদা। এমনকি, 'অমর্ত্য' নামকরণ স্বয়ং বিশ্বকবি করেছিলেন। কবিগুরুর সময় থেকেই শান্তিনিকেতনের 'প্রতীচী' বাড়িতে বসবাস করছেন সেন পরিবার। ১৯৪৩ সালে অমর্ত্য সেনের বাবা প্রয়াত আশুতোষ সেনের নামে ৯৯ বছরের জন্য 'প্রতীচী'র ওই জমি লিজ (ইজারা) দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে এই জমি অমর্ত্য সেনের নামে মিউটেশন হয়। প্রতীচী বাড়িতে মোট ১.৩৮ একর জমি। যার মধ্যে ১.২৫ একর জমি অমর্ত্য সেনের নামে রেকর্ড রয়েছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ছিল প্রতীচী বাড়িতে ১৩ ডেসিমেল (শতক) জমি দখল করে রেখেছেন অমর্ত্য সেন।
এই মর্মে জমি ফেরত চেয়ে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে ৩ টি চিঠি দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এমনকি অমর্ত্য সেনকে নিশানা করে একাধিক মন্তব্য করতেও শোনা গিয়েছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে।
বাবার উইল অনুযায়ী ১.৩৮ একর জমি রেকর্ড করে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বোলপুর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দুদিন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও অমর্ত্য সেনের তরফে তাদের উভয়ের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে শুনানিও হয়। কিন্তু কোনো মীমাংসা হয়নি।
এমন এক পরিস্থিতির মাঝেই শান্তিনিকেতনে গিয়ে অমর্ত্য সেনের সাথে দেখা করেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এ সময় জমির মাপঝোক সম্পর্কিত বিভিন্ন নথি অমর্ত্য সেনের হাতে তুলে দেন মমতা।
এরপর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শান্তিনিকেতন ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। সেসময় অমর্ত্য সেন নিজেই দাবি করেন, তার পিতা প্রয়াত আশুতোষ সেনের উইল অনুযায়ী সম্পূর্ণ জমি অমর্ত্য সেনের নামেই রেকর্ড করে দিয়েছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর। তিনি বলেছিলেন 'আমার বাবার নামে জমি ছিল, সেই জমি আমার নামে হওয়া উচিত ছিল, এবং সেটাই হল। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর থেকে এই কাজটি করে দিয়েছে।'
এমন এক পরিস্থিতির মাঝেই নতুন করে অমর্ত্য সেনকে নোটিশ পাঠালো বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কার্যত হুমকির সুরে জানিয়ে দেওয়া হলো জমি ফেরত না দিলে মামলা করা হবে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে জারি করা ওই নোটিশে বলা হয়েছে 'এটা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী। এখানকার দখলকৃত জমি উদ্ধার করার দায়িত্ব বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। কারণ এটা জাতীয় সম্পদ। তাই ১৩ শতক জমি ফেরত দেওয়া হোক। বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থী, কর্মচারী, কর্মকর্তা, অধ্যাপকদের স্বার্থে জমি উদ্ধারে ব্রতী বিশ্বভারতী।'
ওই নোটিশে জানতে চাওয়া হয়েছে '১৩ শতক জমি ফেরত না দিলে ১৯৭১ সালের উচ্ছেদ আইন অনুযায়ী কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?'
এক্ষেত্রে অধ্যাপক অমর্ত্য সেন যদি বিষয়টি এড়িয়ে যান তাহলে একপক্ষ শুনানি ধরে নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মামলার পথে যাবে বলেও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। যা নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে জমি বিতর্ক।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল