ঢাকা, সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কলকাতায় উদ্ভিদবাহিত ছত্রাকে আক্রান্ত একজন
দীপক দেবনাথ, কলকাতা

গোটা বিশ্বে এই প্রথম কোন ব্যক্তির শরীরে উদ্ভিদবাহিত মারণ ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা গেল। উদ্ভিদ ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়া ওই ব্যক্তি কলকাতারই বাসিন্দা। ৬১ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি পেশায় একজন মাইকোলজিস্ট। 

উদ্ভিদের সাথে কাজ করতে করতে কিভাবে একজন মানুষ এই ছত্রাকে সংক্রমিত হতে পারেন সেই নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে 'মেডিকেল মাইকোলজি কেস রিপোর্ট'এ। তাতেই সামনে এসেছে এই তথ্য। যদিও ওই গবেষকের নাম প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তবে সংক্রমিত হওয়ার ঘটনাটি বেশ কয়েক মাস আগেকার।  ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সর্বভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, চিকিৎসকরা বলছেন এই ছত্রাকের নাম 'কনড্রোস্টেরিয়াম পারপিউরিয়াম'। এই সংক্রমণের ফলে গাছের 'সিলভার লিফ' রোগ হয় এবং সাধারণত গোলাপ গাছের ক্ষেত্রেই যার বেশি প্রভাব পড়ে। 

কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের গবেষক ও বিশেষজ্ঞ এবং 'মেডিকেল মাইকোলজি কেস রিপোর্ট' এর প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ডা: সোমা দত্ত জানান,পেশাগত কারণে গবেষণার অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পচনশীল উপাদান, মাশরুম এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ ছত্রাক নিয়ে কাজ করেছিলেন ওই ব্যক্তি। আর তা থেকেই তার শরীরে এভাবে উদ্ভিদ ছত্রাক বাসা বেধে থাকতে পারে বলে আমাদের ধারণা। 

জানা গেছে, ক্লান্তি ভাব, অনবরত কাশি, গলায় কর্কশ ভাব, গিলতে অসুবিধা হওয়াসহ শরীরে একাধিক সমস্যা নিয়ে কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। সেসময় ওই রোগী চিকিৎসককে জানান ৩ মাস ধরে ওই ধরনের সমস্যায় ভুগছিলেন। যদিও এর আগে ওই ব্যক্তির এইচআইভি, ডায়াবেটিস, কিডনি জনিত কোন রোগ বা দীর্ঘস্থায়ী কোন রোগ শরীরে ছিল না। 

রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রথমে চেস্ট এক্সরে করা হলে তাতে কিছুই ধরা পড়েনি। পরে সিটি স্ক্যান করানো হলে দেখা যায় তার গলায় "ঘা" জাতীয় কিছু জিনিস। এরপর এন্ডসকপিতে জানা যায় তার গলায় বাসা বেঁধেছে উদ্ভিদবাহিত ছত্রাক। যেটি তার শরীরের বায়ু চলাচল বন্ধ করে দিতে পারতো এবং যার ফলে কোন ব্যক্তির শরীরে আরো মারাত্মক কোন সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। 

ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডা: সোমা দত্ত জানান, ওই বিশেষ ছত্রাকটি কোন প্রজাতির তা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে আমাদের পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় কারণে তার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) সহায়তা প্রাপ্ত চন্ডিগড়ের 'পোস্ট গ্রাজুয়েট ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেন্টারে'। এবং জেনেটিক সিকোয়েন্সিং এর মাধ্যমে জানা যায় প্রাণঘাতী উদ্ভিদ বাহিত ছত্রাক 'কনড্রোস্টেরিয়াম পারপিউরিয়াম'এ আক্রান্ত ঐ ব্যক্তি। 

ওই প্রতিবেদনে ডা: সোমা দত্ত আরো জানান, রোগ চিহ্নিত হওয়ার পরেই তাকে প্রায় দুই মাসের অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দেওয়া হয়। দুই বছর পর ওই রোগী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। নতুন করে তার শরীরে ছত্রাকের উপস্থিতি দেখা যায়নি। 

বিডি প্রতিদিন/এএ



এই পাতার আরো খবর