ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষে মেতেছে পশ্চিমবঙ্গ
দীপক দেবনাথ, কলকাতা

গতকাল (শুক্রবার) বাংলাদেশে সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে বর্ষবরণ উৎসব। একদিন পর শনিবার এপার বাংলাও (পশ্চিমবঙ্গ) বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে মাতলো। গ্রীষ্মের দাবদাহের মধ্যেই নতুন বছরকে (১৪৩০ বঙ্গাব্দ) স্বাগত জানালো আপামর বাঙালি। ধর্ম-বর্ণ জাতি নির্বিশেষে দেশের সব বর্ণের মানুষ মেতে উঠল ঐতিহ্যময় বর্ষবরণ উৎসবে। পুরাতন হিসাব চুকিয়ে খোলা হল নতুন বছরের মহরৎ করণ। নতুন কাপড়, হালখাতা, মিষ্টির প্যাকেট সবমিলিয়ে বেজে উঠল বাংলা নতুন বছরের জয়গান।

আসলে বাঙালি বরাবরই উৎসবমুখর। গ্রীষ্ম হোক বা বর্ষা- বাঙালির উৎসবে এসব কোনো কিছুই কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। শহর কলকাতা ছাড়া নববর্ষের দিনটিতে গোটা বাংলার গ্রামগঞ্জেও অন্য ছোঁয়া লক্ষ্য করা যায়। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত কিংবা রাজপথে বের হয় প্রভাত ফেরি। এদিন ভোর হতেই কালীঘাট, লেক কালীবাড়ি, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ সহ বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য লম্বা লাইন পড়ে।

নতুন বছরের শুভ কামনা করে অনেকেই পূজা দেন। অনেক বাড়িতেও এদিন লক্ষী-গণেশের পূজো হয়। সেই সাথে বিশেষ খাওয়া-দাওয়াও আয়োজন করা হয়েছে। এমনকি অনেক নামি রেস্তোরাঁগুলিতেও বিশেষ বাঙালি ভোজের ব্যবস্থা থাকছে। নস্টালজিয়ার মেলবন্ধনে তৈরি হয়েছে মেনু। মোচার ঘণ্ট, কলার বড়া, চিংড়ির মালাইকারি, শুক্তো, কচুর শাক, চকোলেট, সন্দেশ, রসগোল্লা, আইসক্রিম- আরো কত কি!

আসলে বাঙালির কাছে বছরের এই একটা দিনের আকর্ষণ একেবারেই আলাদা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ভিটে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি হোক কিংবা শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ- সকাল থেকেই সংগীত, আবৃত্তি সহযোগে বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে কলকাতার ভাষা ও চেতনা সমিতির আয়োজনে এদিন সকাল আটটায় পার্কস্ট্রিট জাদুঘর থেকে বর্ণাঢ্য বৈশাখী শোভাযাত্রা বের হয়। পরে তা এসে পৌঁছায় রবীন্দ্রসদন চত্বরের উত্তরদিকে আকাদেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে রাণুচ্ছায়া মঞ্চে। সুফি, বাউল, সারি, জারি, রবীন্দ্র-নজরুল সংগীত সব মিলিয়ে বাংলা গানের পরম্পরায় কলকাতা উদযাপন করছে নববর্ষ।

রাজ্যটির রাজভবনেও (রাজ্যপালের সরকারী বাসভবন) আজ দিনভর নববর্ষ উদযাপন হচ্ছে। রাজভবন থেকে শান্তির বার্তা নিয়ে ম্যারাথন দৌড়ের আয়োজন করা হয়েছে। কয়েক শতাধিক এনসিসি ক্যাডেট এই দৌড়ে অংশ নিয়েছেন। সকাল সাতটায় এর ফ্লাগ অফ করেন রাজ্যপাল সি.ভি. আনন্দ বোস। এর পাশাপাশি ২০০ জন সাইকেল- আরোহী রাজভবনের সাউথ গেট দিয়ে বেরিয়ে ফোর্ট উইলিয়াম ঘুরে ফের রাজভবনেই ফিরে আসেন।

'বাংলা নববর্ষ উদযাপন পরিষদ' কমিটির পক্ষে এদিন সকালে দক্ষিণ কলকাতার সুকান্ত সেতু থেকে যোধপুর পার্ক পর্যন্ত একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। সকালের তীব্র গরম উপেক্ষা করেই শোভাযাত্রায় পা মেলায় কয়েক শতাধিক মানুষ। বাংলাদেশের আদলে শোভাযাত্রায় ছিল রণ পা, বাঘ-ঘোড়া-হাতির মুখোশ, মনীষীদের বাণী সম্বলিত পোস্টার। শোভাযাত্রার অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু ছিল 'পালকি'।

অন্যদিকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্যটির প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে রাজ্যটির উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে 'গীতা' (হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ) বিলির মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ শুরু করল বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া। এদিন সকালের দিকে দলীয় কর্মীদের সাথে নিয়ে আর.এস ময়দান এলাকায় বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি যান। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রত্যেক পরিবারের হাতে একটি করে গীতা তুলে দেন।

এছাড়াও রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা করে মঙ্গল শোভাযাত্রা, প্রভাতফেরী বের করেছে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

টুইট করে মোদি লিখেছেন, 'বাঙালি সংস্কৃতি ও পরম্পরা সারা বিশ্বে প্রশংসিত। নববর্ষের প্রারম্ভে আমি প্রত্যেকের সুখ ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।'

মমতা লেখেন, 'নতুন বছরের পূণ্য আলোর দ্যুতিতে আলোকিত হোক আপনাদের সকলের জীবন। শান্তি সম্প্রীতি সৌহার্দের বন্ধনে আবদ্ধ থাকুক বাংলার প্রতিটি মানুষ।'

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর