ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে বৈঠকে মমতা-নীতিশ-তেজস্বী
দীপক দেবনাথ, কলকাতা

২০২৪ সালের ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের একবার বিরোধী শক্তিগুলিকে একত্রিত করার কাজ শুরু হলো। আর বিরোধী ঐক্যকে শক্ত করতে প্রধান ভূমিকায় দেখা গেল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জীকে। 

সোমবার রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নে মমতার সঙ্গে বৈঠক করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার এবং উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। বিহারে ক্ষমতায় রয়েছে মহাজোট সরকার। সেই সরকারের অন্যতম শরিক দল 'জনতা দল ইউনাইটেড' (জেডিইউ) প্রধান নিতীশ কুমার এবং 'রাষ্ট্রীয় জনতা দল' (আরজেডি) শীর্ষ নেতা তেজস্বী যাদবের সাথে উন্নয়ন, রাজনীতি সহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে নবান্নে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন ওই তিন নেতা-নেত্রী। 

মমতা বলেন, 'আমি নিতীশ কুমারকে আরজি জানিয়েছি যে প্রথমে সব দলকে সঙ্গে নিয়ে বিহারেই আমাদের প্রথম ঘরোয়া বৈঠকটা হোক। ওই বৈঠক থেকেই ঠিক হবে যে পরবর্তী কোথায় যেতে হবে। কিন্তু সবার প্রথমে আমাদের একটা বার্তা দেওয়া উচিত যে আমরা সকলেই একসাথে আছি। আমি আগেও বলেছি যে এ ব্যাপারে আমার কোন আপত্তি নেই। আমি চাই যে বিজেপি শূন্য হয়ে যাক। কিছু না করেই, কেবলমাত্র মিডিয়ার সমর্থন নিয়ে, মিথ্যা কথা বলে, গুণ্ডা-গাদ্দারি করে তারা অনেক বড় হিরো হয়ে গেছে। এটা চলতে পারে না।' 

মমতা পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন 'আমরা সকলেই একসাথে মিলে এগিয়ে যাবো। আমার কোন ব্যক্তিগত ইগো নেই। আমরা সকলের সাথে মিলে একসাথে কাজ করতে চাই। এটাই আমাদের বার্তা।' 

জাতীয় কংগ্রেস বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেবে কি না, সেই সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে মমতা জানান "সেটা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। আমরা সবাই এক আছি। দেশের মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে।' 

এই বৈঠককে "সদর্থক" আখ্যায়িত করে নিতীশ কুমার জানান, 'আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রত্যেকটি দলকে একত্রিত হয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং সকলে একসাথে বসে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে যে সিদ্ধান্তই নেয়া হোক না কেন সেটা দেশের কল্যাণে হবে।' 

বিজেপিকে নিশানা করে তার অভিযোগ 'কেন্দ্রে যারা (বিজেপি) ক্ষমতায় বসার সুযোগ পেয়েছে তারা কেবলমাত্র নিজেদের প্রচারের ঢাকঢোল পেটাতে ব্যস্ত। দেশের কল্যাণে কোন কাজ করছে না।'

তার অভিমত 'দেশের পুরাতন ইতিহাস, স্বাধীনতার লড়াই সবকিছু সব প্রজন্মের জন্য থাকা উচিত। কিন্তু  বলা যায় না, কোন একদিন এরা (বিজেপি) হয়তো দেশের ইতিহাস বদলে দেবে। তাই আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।' 

কয়েকদিন আগেই দিল্লিতে গিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খারগের সাথে দেখা করেন নিতীশ কুমার। সে সময় নীতিশ কুমারকে বলতে শোনা গিয়েছিল '...আমরা একাধিক রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করার চেষ্টা করবো এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাবো।' 

সোমবার বিকালেই লখনওয়ে উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির (সপা) সভাপতি অখিলেশ যাদবের সাথেও সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে নিতীশ কুমার ও তেজস্বী যাদবের। 

অন্যদিকে, এ নিয়ে গত প্রায় এক মাসের মধ্যেই দেশটির পাঁচটি প্রধান আঞ্চলিক দলগুলির শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করলেন মমতা। 

গত মার্চের মাঝামাঝি কলকাতায় অখিলেশ যাদবের সাথে একান্তে বৈঠক করেছিলেন মমতা। ওই বৈঠকেও আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিরোধী ঐক্যকে শক্ত করা। 

এরপর উড়িষ্যায় গিয়ে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সাথে সাক্ষাৎ করেন মমতা ব্যানার্জী। পরে সংবাদ সম্মেলন থেকে নবীন পাটনাক জানান, 'ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো যাতে সর্বদা শক্তিশালী থাকে, এ ব্যাপারে আমরা সকলের সহমত পোষণ করি।' 

মার্চের শেষ সপ্তাহে কলকাতার কালীঘাটের বাড়িতে কর্নাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং জনতা দল (সেকুলার) নেতা এইচ.ডি. কুমারস্বামীর সাথে বৈঠক করেন তৃণমূল নেত্রী। 

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও ঠিক এভাবেই বিরোধী জোট গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধান উদ্যোগী ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছিল এই মমতাকে। ওই বছরের জানুয়ারি মাসে বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জনসভার ডাক দিয়েছিলেন মমতা।

তৃণমূল সূত্রে খবর, আঞ্চলিক শক্তিগুলির সাথে অ-বিজেপি এবং অ-কংগ্রেসি দলগুলির শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠকের মধ্যে দিয়ে একটি বিরোধী ঐক্য (তৃতীয় ফ্রন্ট) গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানোই দলের লক্ষ্য।'

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত



এই পাতার আরো খবর