বজ্রপাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বর্ধমান জেলায় ৪ জন, মুর্শিদাবাদ জেলায় ৩ জন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৩ জন, হাওড়া জেলায় ৩ জন, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ২ জন এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরেই প্রায় বৃষ্টিহীন ছিল রাজ্যটির দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলো। কার্যত তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস অবস্থা হয়ে উঠেছিল দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে। তাপমাত্রা কোথাও কোথাও পৌঁছে গিয়েছিল ৪৩ থেকে ৪৪ ডিগ্রি। প্রবল গরমের কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছিলেন। এর মাঝেই বৃহস্পতিবার বিকালে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বজ্রসহ কালবৈশাখীর ঝড় নেমে আসে।
এদিন স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ প্রবল বজ্রসহ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাজুড়ে। আধা ঘণ্টার এই ঝড় বৃষ্টিতেই বজ্রপাতে মৃত্যু হয় ৩ জনের। মৃতরা হলেন তাপস পাতর (২৮), স্বপন ভূঁইয়া (৪৪), বৈদ্যনাথ সরেন (৫৫)। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ৪ জন। বজ্রবৃষ্টি ছাড়াও মেদিনীপুর শহরে প্রবল শিলাবৃষ্টিও হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবরার সালতিয়া এলাকায় মাঠে কাজ করতে গিয়ে বজ্রাঘাতে দুই যুবকের মৃত্যু হয়। মৃত দুই যুবক হলেন মিলন বিশ্বাস (২৭) ও ধীরাজ পাল (২১)। সালতিয়া এলাকায় গরুর জন্য মাঠ থেকে বিচলি কিনে তা এক জায়গায় জড়ো করছিলেন। তখনই বজ্রঘাতে দুজনের ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়।
মুর্শিদাবাদ জেলায় বৃহস্পতিবার বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত আরও ৩ জন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতরা হলেন সালাউদ্দিন শেখ (২১), হাবিব শেখ (২৫) ও নেকবস শেখ (২৬)। আহতরা সামসেরগঞ্জের অনুপনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
হাওড়া জেলার আমতা ও বাগনানে বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। বৃহস্পতিবার বিকালে ওই ঘটনা ঘটে। আহতরা আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে। মৃতরা হলেন আমতা শেরপুরের বাসিন্দা মহানন্দ ঘুকু (৫৩), মিল্কিচক ধুনরি পাড়ার বাসিন্দা মহ: ইসমাইল (৩৭) এবং বাগনানের বাকসি দেউলগ্রাম ছিলাম পাড়ার বাসিন্দা জুলফিকার হোসেন (২২)।
জানা গেছে, এদিন বিকালে জমিতে ধান কাটছিলেন মহানন্দ ঘুকু। সেই সময় জমিতে বজ্রপাতে তিনি মারাত্মক জখম হন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ইসমাইল বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ির কাছেই জমিতে বসেছিলেন। সেই সময় জমিতে বজ্রপাতে ইসমাইলসহ তিনজন আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ইসমাইলকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, বাগনানের ছিলাম পাড়ার বাসিন্দা জুলফিকার হোসেন জমিতে ধান কাটার সময় আচমকা বজ্রপাতে তিনিও গুরুতর জখম হন। তাকে আশঙ্কাজানক অবস্থায় বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পূর্ব বর্ধমান জেলায় বজ্রপাতে ৪ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ২ জন। মৃতরা হলেন কাটোয়া থানার কোয়ারা গ্রামের বাসিন্দা দীপক পাল(৫৮), ভাতারের বেলেন্ডা গ্রামের মনসুর আলি শেখ (৩৫), কালনা থানার কালিনগর গ্রামের খোকন শেখ (৪০), খণ্ডঘোষ থানার তোরকোনা গ্রামের বাসুদেব রায় (৫২)।
ঝাড়গ্রাম জেলা মাঠে কৃষিকাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় বজ্রপাতে মাঠেই লুটিয়ে পড়েন এক মাঝ বয়সী নারী। তাকে উদ্ধার করে মানিকপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
প্রবল ঝড়ে জেলার একাধিক জায়গায় বাড়ির ছাদও উড়ে যায়। বেশ কয়েকটি বাড়ির পাঁচিল ভেঙে পড়েছে। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হওয়ায় চাষেরও কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রচণ্ড দাবদাহের মাঝেই এই ঝড় বৃষ্টি জেলাবাসীকে সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ