ঢাকা, সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ
দীপক দেবনাথ, কলকাতা
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ও মমতা ব্যানার্জি

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সরকারি বাসভবন রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ বা ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রতিষ্ঠা দিবস’ পালনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক উত্তাপ। মঙ্গলবার কলকাতার ধর্মতলায় অবস্থিত রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের উদ্যোগ নেন রাজ্যপাল।

এদিন দিবস উপলক্ষে রাজভবনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন রাজ্যপাল। এছাড়াও রাজভবনে স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, নৃত্যানুষ্ঠান, এনসিসির অনুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন রাজ্যপাল। শান্তির জন্য একটি পদযাত্রাও (পিস র‍্যালি) বের করা হয়। দিনটি উপলক্ষে এদিন বিধানসভা থেকে আলাদা করে মিছিল বের করে বিজেপি, যার নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্যটির বিরোধী দলনেতা এবং বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। এমনকি রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন নিয়ে শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।

যদিও ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন নিয়ে মোটেই সম্মতি ছিল না রাজ্য সরকারের। রাজ্যপালকে সরাসরি ফোন করে এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সেই সঙ্গে রাজ্যপালকে চিঠিও লেখেন। মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দেন এটি মোটেই সংবিধান সম্মত নয়। একতরফা সিদ্ধান্ত। রাজ্য মন্ত্রিসভার কোনো সম্মতি নেই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও ধুমধাম করেই এদিন রাজভবনে পালন করা হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’।

তবে কেবল রাজ্য সরকারই নয়, এই দিবসটি পালন নিয়ে একাধিক মহলেও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ ২০ জুন দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বঙ্গভঙ্গের যন্ত্রণাময় ইতিহাস।

আসলে পশ্চিমবঙ্গ দিবস বলে যে দিনটিকে ঘিরে এত আয়োজন, ১৯৪৭ সালের সেই ২০ জুন তৎকালীন অখণ্ড বাংলা বিভাজনের বিষয়টি রাজ্য আইন সভায় উত্থাপিত হলে বাংলা ভাগের পক্ষে বেশি ভোট পড়ে। ফলে দুই টুকরো হয়ে যায় বাংলা। পশ্চিমবঙ্গ নামে একটি অংশ ভারতে রয়ে যায়। তৎকালীন পূর্ব বাংলা (বর্তমানে বাংলাদেশ) যোগ হয় পাকিস্তানের সাথে। আর বাংলাভাগের দুমাস পরেই ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে ভারত। কিন্তু ব্রিটিশরা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও তাদের টেনে যাওয়া বিভাজনের ক্ষত চিহ্ন আজও রয়ে গেছে। আর তাই পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের সিদ্ধান্তে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

সেই বিষয়টি উত্থাপন করে রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে মমতা জানান, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কখনো রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা হয়নি। দেশভাগের নেপথ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তি কাজ করেছিল এবং পশ্চিমবঙ্গ সর্বদাই এটাই মনে রেখেছে। কিন্তু সেই সময় তা প্রতিহত করা যায়নি। তাই আপনার এই উদ্যোগ বাংলার লাখ লাখ মানুষের আবেগকে শুধু আহতই করবে না, এই সিদ্ধান্ত তাদের অপমান করা হবে। এটি অসাংবিধানিক এবং একতরফা। আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছি। এই ধরনের অনুষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক দল তাদের নিজেদের প্রতিহিংসার রাজনীতির জন্য করতেই পারে। কিন্তু এই অনুষ্ঠানের সাথে সরকারের কোনো যোগ নেই। তাই আপনাকে অনুরোধ করব রাজভবনে যাতে এই অনুষ্ঠান না করা হয়।

এদিকে রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ প্রতিষ্ঠা দিবস নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিকে নিশানা করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার অভিমত, পশ্চিমবঙ্গ তৈরি হওয়ার একটা দিন রয়েছে। এটা ঐতিহাসিক সত্য যে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন বলে হিন্দু বাঙালিরা মাতৃভূমি পেয়েছেন। না হলে সবাই উদ্বাস্তু হয়ে যেতেন। কিন্তু এখানে মমতা ব্যানার্জি আপত্তি জানানোর কে? আসলে মমতা ব্যানার্জি ইতিহাসটা ঘেঁটে দিতে চাইছেন। উনি আজ আছেন, কাল থাকবেন না। কিন্তু ইতিহাস থেকে যাবে।

সিপিআই নেতা সুজন চক্রবর্তীর টুইট করে লিখেছেন, ইতিহাস বিকৃতির মনোভাবেই বিজেপির রাজনীতি। ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস উদযাপন’ এর নামেও একই প্রচেষ্টা। লর্ড কার্জনের ‘বঙ্গভঙ্গ’র চক্রান্তকে ঠেকাতে পেরে গর্বিত ছিলেন রবীন্দ্রনাথরা। দেশভাগের বিপর্যয়ে বাংলাকে ভাগ করার কৃতিত্ব নিয়ে গর্ব করেছেন শ্যামাপ্রসাদরা। কি দুর্ভাগ্য বাংলার!

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর