ঢাকা, সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পঞ্চায়েত ভোটে সহিংসতা : পশ্চিমবঙ্গে ফের ভোট নেওয়া হবে ২০ বুথে
দীপক দেবনাথ, কলকাতা
বুথ দখল করে ব্যালট ছিনতাই হয় অনেক জায়গায়

শেষ হয়েও হচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন। পুনরায় ভোট নেওয়া হবে রাজ্যটির একাধিক বুথে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এ কথা জানানো হয়। 

গত ৮ জুলাই রাজ্যে ২২টি জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়। ১১ জুলাই ছিল তার গণনা। বুধবার বিকেলে শেষ হয় সেই গণনার কাজ। অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতেই জয় পায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও ভোটকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা দেখেছে রাজ্যবাসী। মৃত্যু হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের।

এমনকি গণনার দিনও কোথাও ব্যালট পেপার ছিনতাই, কোথাও ব্যালট পেপার পানিতে ফেলে দেওয়া, কোথাও আবার ব্যালট চিবিয়ে খেয়ে ফেলার মতো অভিযোগ ওঠে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই তিন জেলার ২০টি বুথে ফের ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।

ভোট নেওয়া হবে হাওড়া জেলার সাঁকরাইলের ১৫টি বুথে, হুগলি জেলার সিঙ্গুরের একটি বুথে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবরার চারটি বুথে। গণনা পর্ব মিটে যাওয়ার পরেই এই বুথগুলোতে ফের ভোট নেওয়া হবে। ভোটের দিনক্ষণ এখনো স্পষ্ট করেনি কমিশন।

তবে ভোট গণনার দিন সব কিছুকে ছাপিয়ে সংবাদের শিরোনামে এসেছিল ব্যালট পেপার চিবিয়ে খেয়ে ফেলার ঘটনাটি।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবরা-২ ব্লকের ভুরকুন্ডা গ্রামের ৩১ নম্বর বুথের তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন মহাদেব। ওই বুথে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিআইএমের রবীন্দ্রনাথ মজুমদার। কিন্তু মঙ্গলবার ভোট গণনার দিন সিপিআইএম প্রার্থী ৪ ভোটে জিতে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই, অদ্ভুত আচরণ করেন মহাদেব। ঢুকে পড়েন অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলের গণনা কেন্দ্রে। এরপর সিপিআইএম প্রার্থীর ব্যালট পেপার হাতে তুলে নিয়ে সেটি ছিঁড়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তৃণমূল প্রার্থীর এই অস্বাভাবিক আচরণে অনেকেই হতবাক। প্রবল বিরোধিতা করেন সিপিএম প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ মজুমদার। ছুটে আসেন নিরাপত্তারক্ষীরা। ভর্ৎসনা করা হয় ওই তৃণমূল প্রার্থীকে। সেসময় তৃণমূল প্রার্থীর দাবি ছিল তিনিই ২৬ ভোটে জিতেছেন। যদিও অভিযোগ ওঠার পরেই ওই বুথের গণনা স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু ব্যালট পেপার চিবিয়েও শেষ রক্ষা হলো না। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সেই কেন্দ্রে পুনরায় ভোট হতে চলেছে।

বৃহস্পতিবার কমিশনের পুনরায় নির্বাচনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে অভিযুক্ত তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব মাটি জানান, পুনরায় ভোট হোক। জেতার ব্যাপারে আমি একশো শতাংশ আশাবাদী। কারণ পঞ্চায়েত আমরা দখল করেছি, আমরা ভুরকুণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৭টি আসনের মধ্যে ২২টা আসন জিতেছি, মানুষ আমাদের দলকে ভোট দিয়েছে, আমাকেও ভোট দিয়েছে।

যদিও সেদিনের সেই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মহাদেব জানান, আমাকে বদনাম দেওয়া হচ্ছে যে আমি নাকি ব্যালট পেপার খেয়ে ফেলেছি। কিন্তু ব্যালট খেয়ে ফেলা মুখের কথা নয়। তা খেতে সময়ও লাগে। আমি জোর গলায় বলছি আমার যদি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হয় তবেই পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, আমার পেটে ব্যালট আছে কি না। এটা একটা মিথ্যা প্রচার।

অন্যদিকে সিপিআইএম প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ মজুমদারও জেতার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে তার আশঙ্কা কেন্দ্রীয় বাহিনী না দিলে আগের মতোই গন্ডগোলের আশঙ্কা থাকবে। তিনি বলেন, ভোট যাতে শান্তিপূর্ণ হয়. সেদিকে লক্ষ্য রেখে পাড়ায় পাড়ায় নিরাপত্তা, টহলদারি বাড়ানো উচিত।

সেদিনের ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে সিপিআইএম প্রার্থী জানান, গণনা শেষ হয়ে যাওয়ার পরই আমি সিপিএমের প্রার্থী হিসেবে চার ভোটে জিতেছিলাম। হঠাৎ করেই তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব মাটি বুথে ঢুকে তার কাউন্টিং এজেন্ট সীমান্ত পালের সাথে কথা বলেন। সে সময় কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। কিছুক্ষণ পরেই আমার সিপিআইএমের ব্যালট পেপারের যে বান্ডিলটা ছিল, সেখান থেকে একটা বান্ডিল তুলে নিয়ে সেটাকে অর্ধেক ছিঁড়ে ভাত খাওয়ার মতো মুখে দিয়ে চিবোতে লাগলো। আমরা সেটা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। এরই মধ্যে কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী চলে আসে ও মহাদেব তৃণমূল প্রার্থীকে ভর্ৎসনা করে। আমরাও চিৎকার চেঁচামেচি করি। এরপরে মহাদেব বেরিয়ে যায়।

এর আগে, বিভিন্ন অভিযোগে গত সোমবার রাজ্যের ৬৯৬টি বুথে পুনরায় নির্বাচন নেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোট গণনা, সেই গণনা প্রক্রিয়া শেষ হয় বুধবার সন্ধ্যায়।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর