ঢাকা, সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

চাঞ্চল্যকর ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের পানিহাটিতে
সন্তান বিক্রির অর্থে মা-বাবার মোবাইল কেনা-হানিমুন!
দীপক দেবনাথ, কলকাতা প্রতিনিধি
আট মাসের শিশু পুত্রটিকে কিনেছিলেন প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস (ডানে), তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে

একরত্তি ছেলে। বয়স ৮ মাস। সেই সন্তানকেই অন্যের হাতে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পানিহাটিতে উঠেছে এই অভিযোগ।

পানিহাটি পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের গান্ধীনগর অঞ্চলের বাসিন্দা ওই মায়ের নাম সাথী চৌধুরী ও বাবা জয়দেব চৌধুরী। ইতোমধ্যে তাদের গ্রেফতার করেছে ওই জেলার খড়দা থানার পুলিশ। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘অভাব’ ওই দম্পত্তির দৈনন্দিন সঙ্গী। তার ওপর প্রায়ই নেশায় বুদ হয়ে থাকতেন জয়দেব। নেশার কারণেই নাকি ঘরের ঘটিবাটিও বিক্রি করে দিয়েছেন জয়দেব। তার বাবা কানাই চৌধুরী এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে তার ওপরেও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। ফলে একদিকে অভাব, অন্যদিকে স্বভাব- এই তাড়না থেকেই ৮ মাসের শিশুটিকে স্থানীয় এক নারীর কাছে বিক্রি করে দেন তারা। 

বিক্রি করা শিশুর মা সাথী চৌধুরী (লাল টি-শার্ট)

এও জানা গেছে, প্রায় দুই লাখ রুপিতে প্রিয়াঙ্কা ঘোষ নামে খড়দার এক নারীর কাছে ওই একরত্তি  শিশুটিকে বিক্রি করে দেন সাথী ও জয়দেব। ছেলে বিক্রি করার সেই অর্থ দিয়েই দীঘা, মন্দারমনি সমুদ্র বিচে যান হানিমুন করতে। পাশাপাশি ওই অর্থ থেকেই দামি মোবাইল ফোনও কেনেন ওই দম্পতি। 

প্রায় দেড় থেকে দুই মাস আগে এই ঘটনাটি ঘটলেও গত রবিবার তা প্রকাশ্যে আসে। তারও তিনদিন পর জানা যায় ওই ছেলে বিক্রির অর্থেই হানিমুন ও মোবাইল ফোন কিনেছেন অভিযুক্ত দম্পতি। ওই দম্পতির বছর সাত-আটকের আরেকটি মেয়ে আছে বলেও জানা গেছে। 

পুলিশ সূত্রে খবর, যে নারীর কাছে ওই আট মাসের শিশু পুত্রটিকে বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ, তার নাম প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস। বাড়ি খরদা থানা এলাকায়। পরে অভিযান চালিয়ে আট মাসের শিশু পুত্রটিকে উদ্ধার করা হয়, আটক করা হয় ওই নারীকেও। যদিও এ ব্যাপারে ওই নারী সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলেননি।

জয়দেবের বৃদ্ধ বাবা কানাই চৌধুরী তার নিজের ছেলে-বৌমার বিরুদ্ধে খড়দা থানা ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কাছে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন। পাশাপাশি এও জানিয়েছেন, ‘প্রথমে শুনেছিলাম বাচ্চাটিকে তার মামার বাড়িতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু এখন শুনছি বাচ্চাটাকে ইতোমধ্যে বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু কত রুপিতে বিক্রি করেছে সেটা আমি বলতে পারব না।’ 

কিন্তু তাই বলে নিজের পুত্র সন্তানকে বিক্রি? এ ব্যাপারে শিশুপুত্রটির দাদা বলেন, ‘সংসারে টানাটানি আছে ঠিকই, সেই সাথে স্বভাবও আছে।’ 

তিনি ফের বলেন, ‘আমি শুনেছি মোবাইল বিক্রি করে যে অর্থ পেয়েছে সেই রুপি দিয়ে তারা দীঘা, মন্দারমনি, তারাপীঠে ঘুরে বেড়িয়েছে।’ প্রায় দেড়-দুই মাস আগে ওই বাচ্চাটিকে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলেও জানান কানাই চৌধুরী।

অভিযুক্ত সাথী চৌধুরীর এক প্রতিবেশী লক্ষী কুন্ডু নামে এক নারী বলেন,‘আমরা শুনেছি দুই লাখ রুপিতে বাচ্চাটিকে বিক্রি করেছে। সেই রুপি দিয়ে তারা একটা মোবাইল ফোন কেনে। দীঘা সমুদ্র বিচে হানিমুন করে। এছাড়া তারা উভয়েই একাধিক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে।’

ঘটনার খবর এলাকায় জানাজানি হতেই এলাকার সাধারণ মানুষও ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তাদের দাবি, এই ধরনের পরিবারকে এলাকায় রাখা যাবে না।

স্থানীয় পৌর মেয়র তারক গুহ বলেন, ‘তার একটি ছোট বাচ্চাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। কাকে বিক্রি করেছে, কত রুপিতে বিক্রি করেছে তা জানি না। কিন্তু সেই বাচ্চাটিকে বেশ কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে না।' 

‘মা তার সন্তানকে বিক্রি করে দিচ্ছেন- এই ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া এই পরিবারটির পাশে সব সময় দাঁড়িয়েছি আমি ও আমার পৌরসভা।’ তারপরেও এই ধরনের জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির আহ্বান তার।

তার অভিযোগ, ‘এই পরিবারটি সমস্ত রকম অসামাজিক কাজের সাথে যুক্ত। গতকাল রাতেই অভিযুক্ত জয়দেব মদ্যপ অবস্থায় এসে তার মেয়েটিকে নিয়ে যাবে বলে চিৎকার করতে থাকে। আমি ঘটনাস্থলে এসে তাকে বকাবকি করি।’

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ



এই পাতার আরো খবর